পাতা:বাল্মীকি রামায়ণ - উপেন্দ্রনাথ মুখোপাধ্যায়.pdf/১৯

এই পাতাটির মুদ্রণ সংশোধন করা প্রয়োজন।

[ s१ ] পীড়ন, দেবভিজে হিংস ও কামুকতা তাহার সকল গুণকে গ্রাস করিয়াছিল। তিনি ভক্ত হউন আর নাই হউন, সে পক্ষে আমাদের তর্ক-বিতর্ক বা বাদবিসস্বাদ নিম্প্রয়োজন ; কিন্তু আমরা এই বলিতে চাই, তাহার বেরূপ কৰ্ম্ম, ব্যবহার ও প্রবৃত্তি ছিল, তাহার অনুরূপ ফলভোগ হইয়াছে। বিশ্ববিচারক বিশ্বেশ্বরের নিকটে আজ হউক, কাল হউক, অবশ্যই সুবিচার হইয়া থাকে ও হইবে। পাপের উত্তেজনা ও অধৰ্ম্মের বৃদ্ধি না হইলে ক্ষয় পাইবার সস্তাবনা থাকে না । উপসংহারে সীতার গুণ ও তদীয় নিষ্কলঙ্ক চরিত্রেরও কিঞ্চিৎ সমালোচনার প্রয়োজন । পতি জটবন্ধলধারী ও বনবাসী, সুতরাং পতিপ্রাণী জানকী যে অনুবৰ্ত্তিনী হইবেন, তাহার আশ্চর্য্য কি ? আমরা সে কথা কিছু বলিতেছি না। পাঠক ! বিবেচনা করিয়া দেখুন, সীতা-উদ্ধারের জন্য বালীবধ, বানরসৈন্য-সংগ্রহ, সমুদ্রে সেতুবন্ধন, সবংশে রাবণকে নিধন, এই সমস্ত ঘোরতর ক্লেশকর ব্যাপারের পর বিভীষণ সমভিব্যাহারে রামের আদেশে তাহার সম্মুখে যেই সীতা সমুপস্থিত, অমনি সীতাপতি দুৰ্ব্বাক্যবাণে র্তাহাকে জর্জরিত করিলেন : র্তাহীকে কোনও মতে গ্রহণ করিতে সম্মত হইলেন না। তখন পতিব্ৰতা সীতা অগ্নি-প্রবেশে উদ্যত ; তিনি তৎকালে যাহা প্রার্থনা করিয়াছিলেন, একবার সে স্থল পৰ্য্যালোচনার প্রয়োজন ;– “যথা মে হৃদয়ং নিত্যং নাপসপতি রাঘবাহু । তথা লোকস্য সাক্ষী মাং সৰ্ব্বতঃ পাতু পাবকঃ ॥ কৰ্ম্মণা মনসা বাচা যথা নাতিচরাম্যহম্। রাঘবং সর্বধৰ্ম্মজ্ঞং তথা মাং পাতু পাবকঃ।” তাৎপর্য্য -”གྲྭ་ལཱ་ཤ श्रांयांझ इलाग्न ८कांन७ eधकां८ब्र রামের নিকট হইতে অস্তত্র গমন করে নাই, তখন লোকসাক্ষী অগ্নি আমাকে রক্ষণ করুন। আমি যখন O কায়, মন ও বাক্য কোনও রূপে রামকে অতিক্রম করি নাই, তখন অগ্নি আমাকে রক্ষণ করুন।” অনন্তর রামের রাজ্যাভিষেকের পর, লোকাপবাদভয়ে সীতাকে বাল্মীকির তপোবনে বিসর্জন করা হয়। যৎকালে বজ্ঞসময়ে তাহাকে তপোবন হইতে আনয়ন করা হয়, সে সময়ে দেবতা, গন্ধৰ্ব্ব, মনুষ্য ও সাধারণ লোক-সমক্ষে পুনর্বার তাহার পরীক্ষার প্রস্তাব করিলে, তিনি বাহা প্রার্থনা করিয়াছিলেন, এ স্থলে তাহাও সমুদ্ধত হইল – “মথাহং রাঘবাদস্যং মনসাপি ন চিন্তয়ে । তথা মে মাধবী দেবী বিবরং দাতুমহতি ॥ মনসা কৰ্ম্মণা বাচা যথা রামং সমৰ্চয়ে । তথ। মে মাধবী দেবী বিবরং দাতুমহতি ॥ যথৈতৎ সত্যমুক্তং মে বেষ্মি রামাৎ পরং ন চ | তথা মে মাধবী দেবী বিবরং দাতুমৰ্হতি ॥” তাৎপৰ্য্য,—“আমি যখন রাম ব্যতিরেকে মনে মনে অন্য কাহাকেও কখন চিন্তা করি নাই, তখন হে দেবি পুথিবি ! তুমি বিদীর্ণ হইয়া আমাকে স্থানদান কর। আমি যখন কায়মনোবাক্যে কেবল রামকেই অর্চনা করিয়াছি, তখন হে দেবি ! আমাকে স্থানদান কর। আমি যখন সত্য করিয়া বলিতেছি যে, রাম ভিন্ন অন্য কাহাকেও জানি না, তখন হে পৃথিবি ! তুমি বিদীর্ণ হইয়া অামাকে স্থানদান কর।” হায় ! এত কষ্ট—এত ঘন্ত্রণা—এত লাঞ্ছনা-ও এতদূর অপমান ভোগ করিয়া,যে স্ত্রী পতিকে পরিত্যাগ করিতে, র্তাহার প্রতি রুষ্ট হইতে, এমন কি, পরুষ বাক্য প্রয়োগ করিতেও ইচ্ছা করেন নাই, তাহার উপমা, তাহার দৃষ্টান্ত, তাহার গৌরব কি কোনও লোকে পাইবার কথা, না পাওয়া যাইতে পারে ? ইহাই ভারতের সতীধৰ্ম্ম। পতির কাৰ্য্যের বিচার সতী করিবে না। সীতা সাবিত্রীর পদরেণুপ্নত ভারতে আজও সতীধর্মের গৌরব—পুণ্যময় আদর্শ সংপূজিত।