পাতা:বাল্মীকি রামায়ণ - উপেন্দ্রনাথ মুখোপাধ্যায়.pdf/১৯০

এই পাতাটির মুদ্রণ সংশোধন করা প্রয়োজন।

অযোধ্যাকা তিনি তৎকালে নৃপতির কাতরতায় কর্ণপাত করিলেন না । ৩৯-৫০ তদনন্তর মহারাজ দশরথ কৈকেয়ী-মুখে রামের বনবাস ও ভরতের রাজ্যপ্রাপ্তির কথা শ্রবণ করিয়া মুহূৰ্ত্তকাল তাহাকে কোনও কথা বললেন না ; কেবল অপ্রিয়বাদিনী প্রেয়সীর প্রতি ক্রোধে একদৃষ্টিতে চাহিয়া রহিলেন। তিনি প্রাণপ্রিয়া কৈকেয়ীর মুখে বজ্ৰসম অপ্রিয় বাক্য শ্রবণ করিয়া দুঃখশোকে অধীর হইয়া পড়িলেন। তখন নরদেব দেবীর অভিপ্রায় ও তাহার নিদারুণ শপথের কথা স্মরণ করিয়া, “হ রামচন্দ্র ”এই কথা বলিয়া দীর্ঘনিশ্বাস পরিত্যাগ-পূর্বক ছিন্নমূল বৃক্ষের ন্যায় পতিত হইলেন। র্তাহাকে দেখিতে বিকৃতমনা উন্মত্তের ন্যায়, বিকারপ্রাপ্ত রোগীর ন্যায় ও নিস্তেজ সপের দ্যায় বোধ হইতে লাগিল । তিনি তখন দীনবাক্যে কৈকেয়ীকে কহিলেন, তোমাকে অনর্থকর এই বিষয়টি কে অর্থকর বলিয়া সপ্রমাণ করিয়া দিয়াছে ? ভূতগ্রস্ত ব্যক্তির ন্যায় আমাকে এরূপ বলিতে তোমার কি লজ্জা হইতেছে না ? আমি বাল্যকাল হইতে তোমার স্বভাব ও ব্যবহারের বিষয় জানি ; কিন্তু এক্ষণে তদ্বিপরীত দেখিতেছি কেন ? রাম হইতে তোমার ভয়ের সম্ভাবনা কি,— যে জন্য তুমি রামের বনবাস ও ভরতকে রাজা করিবার জন্ত প্রার্থনা করিতেছ? রে নৃশংসে ! রে কুকৰ্ম্মকারিণি কৈকেয়ি ! যদি প্রজালোকের, ভরতের ও আমার প্রিয়কাৰ্য্য তোমার অভিপ্রেত হয়, তাহা হইলে তুমি এ পাপ বাসনা হইতে নিবৃত্ত হও । রামের সম্বন্ধে মিথ্যা ভয় করিও না । আমি বা রামচন্দ্র আমরা তোমার কি অপরাধ করিয়াছি যে, এরূপ কাৰ্য্য তোমারও বাঞ্ছনীয় হইয়াছে ? জানিস্, রামকে অতিক্রম করিয়া ভরত কখনও রাজা হইবে না। আমি রামের অপেক্ষাও ভরতকে ধাৰ্ম্মিক বলিয়া জানি, সে যে রামকে অতিক্রম করিয়া রাজা হইবে, আমার এরূপ বোধ হয় না । ‘তুমি বনে গমন >>సి কর, এই কথা রামকে কিরূপে বলিব ? যখন রাহুগ্রস্ত শশধরের স্যায় রামের মুখ মান হইয়া উঠিবে, তাহা কিরূপে আমি দর্শন করিব ? আমি যে মুহৃদগণের সহিত এইমাত্র রামের রাজ্যাভিষেকের সমস্ত ঠিক করিয়া আসিয়াছি। পরাজিত সেনার স্যায় র্তাহাদের নিকটে এখন কিরূপে ঐ কথার অন্যথা জানাইব ? নানাদেশীয় নৃপতিগণ এ কথা জানিলে আমাকে কি বলিবেন ? তাহারা নিশ্চয়ই বলিবেন যে, ইক্ষাকু-বংশধর অতিশয় বালক। ইনি এত দিন কিরূপে-রাজ্যপালন করিলেন ? ৫১-৬৪ আমার বিশেষ ভাবনার বিষয়, শাস্ত্রজ্ঞ বুদ্ধগণ আসিয়া, রাম কোথায় আমাকে জিজ্ঞাসা করিলে, আমি তাহাদিগকে কি উত্তর দিব ? কৈকেয়ীর অনুরোধে রামকে বনবাস দিয়াছি, এই সত্য কথা বলিলেও কেহ বিশ্বাস করিবে না। রামকে বনবাসী করিলে, কৌশল্য! আমাকে কি বলিবেন ? এবং আমিই বা এরূপ অনিষ্টকর কার্য্য করিয়া তাহাকে কি বলিয়া বুঝাইব ? সেই রাজমহিষী সেবাকাৰ্য্যে পরিচারিকার স্যায়, ক্রীড়াকালে সখীর ন্যায়, ধৰ্ম্মানুষ্ঠানে ভাৰ্য্যার ন্যায়, শুভকামনায় ভগিনীর ন্যায় এবং স্নেহ-প্রদশনে জননীর দ্যায় আমার প্রতি সবিশেষ অনুরক্ত । যিনি প্রিয়বাদিনী ও শুভাকাঙিক্ষণী, হে দেবি । তোমারই জন্য আমি সম্মানাস্পদ সেই কৌশল্যার প্রতি সমুচিত সমাদর করিতে পারি নাই। পূর্বে যে তোমার প্রতি অধিকতর সদ্ব্যবহার করিয়াছি, এখন তাহার অনুরূপ ফললাভ ঘটিল! পীড়িতের পক্ষে কুপথ্য অন্নব্যঞ্জনাদি যেরূপ পীড়াদায়ক, রামনিৰ্ব্বাসনও আমার পক্ষে সেইরূপ । রামবনবাসবার্তা শুনিতে পাইলে রাজ্ঞী সুমিত্ৰাও আমাকে বিশ্বাস করিবে না। বধূ জানকী, রামনিৰ্ব্বাসন ও আমার মৃত্যু এই দুইটি অশুভ সংবাদ সত্বর শুনিতে পাইবেন এবং আমার জন্য শোক করিয়া হয় ত সেই মুকুমারী সীত হিমাচলে কিন্নর-বর্জিত কিন্নরীর ন্যায় নিশ্চয়ই