পাতা:বাল্মীকি রামায়ণ - উপেন্দ্রনাথ মুখোপাধ্যায়.pdf/২০

এই পাতাটির মুদ্রণ সংশোধন করা প্রয়োজন।

[ سوالا ] রামায়ণ সাধারণের নিকট সমাদৃত—স্বপরিচিত হইলেও, সংস্কৃতভাষায় লিখিত বলিয়া, আপামর সাধারণে মূলমধ্যে প্রবেশ করিতে পারেন নাই। এতদ্দেশে কৃত্তিবাসী রামায়ণ ভাষাকারে ছন্দোবন্ধে বিরচিত এবং তাহাই এ দেশবাসী সাধারণ লোকের রামায়ণ-পাঠ-পিপাসা চরিতার্থ করিতেছে । সত্য বটে, কৃত্তিবাসী রামায়ণের বহুল প্রচারে আমাদের সমাজ অনেক পরিমাণে কৃতজ্ঞ ও ঋণী ; কিন্তু কৃত্তিবাস বাল্মীকির মূলের অনুবাদ করেন নাই— তাহার ফলে বহুস্থানে অন্তরূপ হইয়াছে। আমরা যে কৃত্তিবাসের শক্তি বা কবিত্বের পক্ষপাতী নহি, এ কথা বলা আমাদের অভিপ্রায় নহে ; “সাত নকলে আসল খাস্ত” এই যে একটি কথা আছে, ইহার অবস্থাও তাহাই দাড়াইয়াছে। বাল্মীকি রামায়ণের নাম করিয়া অনেক স্থলে অধ্যাত্মরামায়ণের মত এবং স্থলবিশেষে তাহাকেও পরাস্ত করিয়া, নূতন কথা ও কাহিনী সংযোজিত করা হইয়াছে। বাল্মীকির মূলে লক্ষণের শক্তিশেলপতনের পর হনুমান ঔষধ আনিতে যান ; কিন্তু কৃত্তিবাস কালনেমি-বধ, বঁটুলের আঘাতে হনুমানের পতন, সুর্যকে কক্ষমধ্যে রক্ষা ইত্যাদি বর্ণন করিয়াছেন। অধ্যাত্মরামায়ণমতে কালনেমি-বধ বর্ণিত আছে ; কিন্তু এ সকল তত্ত্ব কোথা হইতে আসিল, তাহা আমাদের বুদ্ধির অগম্য। এতদ্ব্যতীত বিভীষণের পুত্র তরণীসেনের যুদ্ধ এবং তাহার ছিন্ন মস্তকের রাম রাম শব্দোচ্চারণ ইত্যাদি বর্ণন মূল রামায়ণে উল্লেখ নাই । বোধ করি, কখকব্যবসায়ী মহাপ্রভুরা উৎকট কল্পনার আরাধনা করিয়া, লোকের মনোরঞ্জনামুরোধে মূলকে নিৰ্ম্মল করত ব্যাখ্যা করিয়া থাকিবেন এবং তাছাদের নিকট হইতে শিক্ষা করিয়া, নানাপ্রকারে রসায়ন দিয়া কবি কৃত্তিবাস এই অপরূপ কীৰ্ত্তি করিয়া থাকিবেন। আর একটি ঘোরতর আশ্চর্য্যের কথা, রামের সচিত কুশীলবের যুদ্ধ ষে কোথা হইতে আনা হইয়াছে, তাহা আমরা বলিয়া নয়, বাল্মীকি পৰ্য্যন্ত অজ্ঞাত । যাহা হউক, ভাষা ও রামায়ণ সম্বন্ধে ত এই অবস্থা, ভাগ্যক্রমে মূল রামায়ণের নানা গোলযোগ ও বিপৰ্য্যয় দাড়াইয়াছে। যেরূপ যোজনান্তে ভাষার ভিন্নতা, সেইরূপ “একোহহং বহু স্যাম” এই শ্রীতির সম্মাননার জন্য নানা দেশে নানা বাল্মীকির আবির্ভাব। বঙ্গদেশের সকল পুস্তকের পাঠ একরূপ নহে ; যাহার হস্তে যাহা পড়িয়াছে, তিনি স্থলবিশেষে বাল্মীকির প্রতিনিধি হইয়াছেন । এই সংক্রামক রোগ কেবল বঙ্গদেশকে আক্রমণ করে নাই, আমাদের ভাগ্যে প্রায় সকল দেশে ইহার সমান আধিপত্য । বোম্বে প্রকাশিত রামায়ণের সঙ্গে কাশীপ্রচলিত রামায়ণের মিল নাই। আবার ‘গোরেলীয় এডিসন স্বয়ং সিদ্ধ ; দেখিলে নূতন বলিয়া বোধ হয়। আমরা পাঠ-সামঞ্জস্তের জন্য বোম্বে, পুনা, লক্ষে, কাশী, বৰ্দ্ধমান-রাজবাটী প্রকাশিত গ্রন্থ ও এ দেশের পাঁচ ছয়খানি রামায়ণ সংগ্ৰহ করি ; কিন্তু পূর্বে বেরূপ কৃতকাৰ্য্য হইবার আশা ছিল, কাৰ্য্যকালে কতদূর ঘটিয়াছে, তাহা অন্তরাত্মাই জানেন । উপসংহারে আর একটি বিষয়ের উল্লেখ না করিয়া ক্ষান্ত হইতে পারিলাম না । এ দেশীয় সাধারণ লোকের বিশ্বাস, রামচন্দ্র রাবণবধের জন্য ব্ৰহ্মা দ্বারা দেৰী মহাশক্তির বোধন করিয়াছিলেন, তদনুসারে অকালে দুর্গোৎসব হইয়া থাকে। আমরাও দেখিতেছি, বৃহন্নন্দিকেশ্বর ও কালিকাপুরাণ মতে দেবীর অর্চনা হইয়া থাকে, বোধনের মন্ত্রে প্রকাশ ;— “রাবণস্য বধার্থীয় রামস্তামুগ্রহায় চ। অকালে ব্রহ্মণ বোধো দেব্যাস্তুয়ি কৃতঃ পুরা ।” • অস্তার্থঃ । “রাবণবধ ও রামের প্রতি অনুগ্রহ