পাতা:বাল্মীকি রামায়ণ - উপেন্দ্রনাথ মুখোপাধ্যায়.pdf/২০১

এই পাতাটির মুদ্রণ সংশোধন করা প্রয়োজন।

১৩২ একোনবিংশ সগ তখন শত্রুমুদন রামচন্দ্র মরণোপম বাক্য শ্রবণ করিয়া, কিছুমাত্র ব্যথিত হইলেন না। কৈকেয়ীকে এই বাক্য কহিলেন,—এইরূপই হউক। আমি পিতৃসত্য-পালনের জন্য জটবন্ধল ধারণ করিয়া বনগামী হইব। কিন্তু আমি ইহা জানিতে চাই, দুৰ্দ্ধৰ্ম শত্রুমুদন মহারাজ পূর্বের স্তায় আমাকে সম্ভাষণ করিতেছেন না কেন ? দেবি ! আপনি রুষ্ট হইবেন না, আমি আপনার সাক্ষাতে বলিতেছি, আমি জটাধারণ-পূর্বক বনগমন করিব, আপনি প্রসন্ন হউন। হিতাকাঙক্ষী, গুরু, পিতা, কৃতজ্ঞ রাজার অনুমতিতে এমন কোন প্রিয় কাৰ্য্য আছে, যাহা বিশ্বস্তচিত্তে করিতে না পারি? যাহা হউক, অামার অন্তরে এই মহান দুঃখ যে, ভরতের রাজ্যাভিষেকের কথা মহারাজ স্বয়ং আমাকে বলিলেন না। রাজার কথা কি, আপনি বলিলে, আমি হৃষ্টান্তঃকরণে ভ্রাতা ভরতকে রাজ্য, ইষ্ট প্রাণ, এমন কি, সীতাকে পৰ্য্যন্ত দান করিতে পারি। বিশেষতঃ রাজার আদেশে আপনার হিতসাধন ও পিতৃ-সত্য-পালনের জন্য কোনও কাধ্যে বিমুখ নহি। যাহা হউক, আপনি এক্ষণে মহারাজকে আশ্বাস প্রদান করুন। দেখিতেছি, মদীয় পিতৃদেব অবনতমস্তকে উপবিষ্ট থাকিয়া মন্দ মন্দ অশ্রজল পরিত্যাগ করিতেছেন ; ইহাকে লজ্জিত বলিয়া বোধ হইতেছে। নৃপতির আদেশে দূতগণ অন্তই দ্রতগামী অশ্বে আরোহণ-পূর্বক মাতুলালয় হইতে প্রাণাধিক ভরতকে লইয়া আসুক। আমি নিঃসন্দিগ্ধমনে পিতৃ-আজ্ঞা শিরোধাৰ্য্য করিয়া চতুর্দশ বৎসরের জন্য সত্ত্বর দণ্ডকারণ্যে প্রবেশ করিব । ১-১১ তখন কৈকেয়ী রামের কথায় হৃষ্ট হইয়া তাহার বনগমন নিশ্চিত জানিয়াও র্তাহাকে পিতৃসত্যপালনের জন্য ত্বর দিতে লাগিলেন। তিনি কছিলেন, এইরূপই হইবে। ভরতকে মাতুলালয় হইতে আনিবার জন্য বাল্মীকি-রামায়ণ দূতগণ শীঘ্ৰগামী অশ্বে আরোহণ করিয়া গমন করিবে৷ কিন্তু বনগমনে সমুৎসুক তোমার পক্ষে বিলম্ব করা কৰ্ত্তব্য নহে, সুতরাং রাম ! এই স্থান হইতে তুমি সম্বর বনগমন কর। হে নরশ্রেষ্ঠ ! রাজা লজ্জিত বলিয়াই নিজে তোমাকে কিছু বলিতেছেন না, উহা কিছুই নহে, তুমি রাজার মনঃক্ষোভ বিদূরিত কর। হে রামচন্দ্র ! তোমাকে অধিক কি বলিব, তুমি যতক্ষণ এই পুরী পরিত্যাগপূর্বক বন-প্রবিষ্ট না হইতেছ, তাবৎকাল পর্যন্ত তোমার পিতা স্বান-ভোজন কিছুই করিবেন না। নৃপতি এই কথা শ্রবণ করিয়া, হা ধিক ! কি কষ্ট ’ এই কথা বলিয়া দীর্ঘনিশ্বাস পরিত্যাগ-পূর্বক সুবর্ণপালঙ্কে মুছিত হইয়া পড়িলেন । ১২-১৭ তখন রামচন্দ্র ব্যস্ত হইয়া রাজাকে উথাপিত করিয়া কৈকেয়ীর অনুরোপে কশাহত অশ্বের স্থায় বনগমনে স্থিরমতি হইলেন। তিনি জননীর এতাদৃক নিষ্ঠর বাক্যে ব্যথিত না হইয় তাহাকে পুনর্বার কহিলেন;–দেবি ! আমি অর্থাভিলাষী হইয়া সংসারে বাস করিতে চালি না । আমাকে ঋষিদিগের স্যায় সমদৰ্শী ধাৰ্ম্মিক বলিয়া জানিবেন। যদি প্রাণদানেও পূজনীয় পিতৃদেবের হিতকাৰ্য্য করা যায়, মনে করিবেন, তাহ করাই হইয়াছে। পিতৃ-শুশ্রষা বা পিতৃবাক্য রক্ষ, ইহার অপেক্ষা প্রধান ধৰ্ম্ম জগতে আর নাই। পূজনীয় পিতার আদেশ জানিতে না পারিলেও আমি আপনার আজ্ঞায় এখনই চতুর্দশ বর্ম বনবাসী হইবার জন্য যাত্রা করিব। হে দেৰি । আপনি আমার অধীশ্বরী হইয়াও, যখন এই বিধানের জন্য মহারাজকে বলিয়াছেন, তখন আমার কোন গুণই আপনার গোচর নাই। আমি আপনাকে বলিতেছি, জননী কৌশল্য ও সীতার নিকট হইতে বিদায় লইয়া অন্তই দণ্ডকারণ্যে প্রবেশ করিব। এক্ষণে ভরত যাহাতে রাজ্যপালন ও পিতৃসেবা করিতে থাকেন, আপনি সে পক্ষে দৃষ্টি রাখিবেন ; জানিবেন, ইহাই