পাতা:বাল্মীকি রামায়ণ - উপেন্দ্রনাথ মুখোপাধ্যায়.pdf/২০৭

এই পাতাটির মুদ্রণ সংশোধন করা প্রয়োজন।

অযোধ্যাকাণ্ড জননীকে পরিত্যাগ করিয়া অরণ্যে গমন করিবে ? বৎস ! তোমাকে বনবাসী করিয়া বাচিয়া থাকিবার ফল কি ? আত্নীয় অন্তরঙ্গেই বা প্রয়োজন কি ? দেবপূজা বা তত্ত্ব-জ্ঞান-চৰ্চাতেই বা কি হইবে ? যদি সকল সম্পর্কশূন্ত হইয়া, অন্ততঃ মুহূর্তের জন্য তোমাকে পাইতে পারি, তাহাও আমার পক্ষে মঙ্গল । তখন অন্ধকার-প্রবিন্ট মহাগজ যেরূপ উল্কাদণ্ড স্পর্শে ক্রুদ্ধ হইয়া উঠে, তাহার ন্যায় রামচন্দ্র জননীর সকরুণ বাক্যে অরণ্যগমনরূপ কার্ণ্যে আরও দৃঢ়-নিশ্চয় হইয়া উঠিলেন। তিনি দেখিলেন, জননী সম্মুখে অচেতনবং, ভ্রাতা লক্ষণও কাতর ও সন্তপ্ত ; তখন তিনি আপনার ধৰ্ম্মসঙ্গত বাক্যে বলিলেন,—লক্ষণ ! আমার প্রতি তোমার যে অবিচলিত ভক্তি বিদ্যমান, তাহ আমি জানি,তোমার পরাক্রম অনন্যসাধারণ ; আশ্চির্ণ্য, আমি তোমাকে বারংবার নিবারণ করিতেছি, কিন্তু তুমি আমার অভিপ্রায়ের মৰ্ম্ম বুঝিতে না পারিয়া জননীর সহিত আমাকে আরও কাতর করিতেছ। এই জীবলোক, পূর্বকৃত কৰ্ম্মের ফলোৎপত্তিকালে ধৰ্ম্ম, অর্থ ও কাম এই তিনই প্রাপ্ত হইয়া থাকে ; সুতরাং যে কার্ঘ্যে পূর্বোক্ত ধৰ্ম্মার্থাদি প্রাপ্ত হওয়া যায়, তাহ হৃদয়-বিহারিণী অনুগামিনী পুত্রবর্তী ভাৰ্য্যার ন্যায় একান্ত প্রাপনীয়। যাহাতে ধৰ্ম্মার্থকামের সংস্রব নাই, তদনুষ্ঠান শ্রেয়স্কর নহে ; যাহাতে ধৰ্ম্মপ্রাপ্তি ঘটে, তাহ করাই কৰ্ত্তব্য ; যে ব্যক্তি উপেক্ষা করিয়া ধৰ্ম্মকে জলাঞ্জলি দিয়া স্বার্থপর হইয়া থাকে, তাহাকে লোকে দ্বেষ করে ; বিবেচনা করিয়া দেখিলে, ধৰ্ম্মবিহীন কাম কোনও রূপে প্রশংসনীয় হইতে পারে না। দেখ, আমাদের পিতা গুরু, বিশেষতঃ রাজা, আবার বৃদ্ধ ; তিনি কাম, ক্রোধ বা হর্ম হেতু যেরূপ অনুমতি করিবেন, ধৰ্ম্মজ্ঞানে কোন অনিষ্ঠ রঙ্গভাব মানব তাহার অনুষ্ঠান না করিবে ? এই নিমিত্ত পিতৃদেব যে প্রতিজ্ঞা করিয়াছেন, তদ্বিরুদ্ধাচরণে আমি সমর্থ নহি। মহারাজ আমাদের পিতা, আমাদের లిS উপর তাহার সর্বতোমুখী প্রভুত বর্তমান, বিশেষত, তিনি দেবীর ভৰ্ত্তা, তিনিই একমাত্র গতি ও ধৰ্ম্ম । তিনি এক্ষণে ধৰ্ম্মরক্ষার জন্য জীবিত এবং পুত্র-পরিত্যাগেও প্রস্তুত ; সেইরূপ নিজের ধৰ্ম্মপথে বিদ্যমান থাকিতে, অভিষিক্ত মহিষী হইয়া, আপনি সাধারণ বিধবা রমণীর ন্যায় আমার সহিত বনে গমন করিতে পারেন না। অতএব, যেরূপ সত্যপালন করিয়া মহারাজ যযাতি পুনর্বার স্বর্গে আসিয়াছিলেন, সেইরূপ আমাকে দেবী বনগমনে অনুমতি প্রদান করুন ; ব্ৰতকাল পূর্ণ করিয়া যাহাতে গৃহে প্রত্যাগমন করিতে পারি, এরূপ আশীর্নর্বাদ করুন। আমি রাজ্য-লাভবাসনায় আকৃষ্ট হইয়া পিতৃ-বিয়োগে বনগমনজনিত যশোলাভে উপেক্ষা করিতে পারিতেছি না। বিবেচনা করিলে, জীবন ক্ষণধবংসী ; অতএব এ জীবনে অধৰ্ম্মানুসারে তুচ্ছ রাজ্যভোগ আমার বাসনার বিষয় নহে। মানবেন্দ্র রামচন্দ্র অক্ষুণ্ণমনে দণ্ডকারণ্যে প্রবেশ করিবার উদেশে অনুজ লক্ষণকে এইরূপ উপদেশ প্রদান করিয়া, জননী কৌশল্যাকে প্রদক্ষিণ-পূর্বক তথা হইতে নিষ্ক্রান্ত হইতে ইচ্ছুক হইলেন। ৫২-৬৪ দ্বাবিংশ সগ অনন্তর লক্ষণ রামের বনবাস স্মরণ করিয়া অতিশয় মৰ্ম্মাহত হইলেন, র্তাহার অবস্থা লক্ষণের নিকটে অসহ্য হইয়া উঠিল, তিনি সরোষে নাগেন্দ্রের স্যায় দীর্ঘ নিশ্বাস পরিত্যাগ করিতে লাগিলেন। তখন রামচন্দ্র প্রিয় ভ্রাতাকে সম্মুখীন করিয়া ধৈর্য্যগুণে আপনার চিত্তসংযম পূর্বক বলিতে লাগিলেন,— বৎস! তুমি ক্রোধ, শোক ও অবমাননাকে হৃদয়ে স্থান দান করিও না ; আমার জন্য যে অভিষেকের আয়োজন হইয়াছে, ধৈর্য্য ও হর্ষের সহিততাহা দূরীভূত