পাতা:বাল্মীকি রামায়ণ - উপেন্দ্রনাথ মুখোপাধ্যায়.pdf/২১৮

এই পাতাটির মুদ্রণ সংশোধন করা প্রয়োজন।

O অযো ধ্যাকাও রাজার পুত্র সত্যবানের সঙ্গে সাবিত্রী বনগামিনী হইয়াছিলেন, আমাকে তদনুরূপ বলিয়া জানিও । হে রাঘব ! তোমাকে ভিন্ন আমি কুলকলঙ্কিনী নারীর স্বায় মনে মনে অন্য পুরুষকে কখনও দর্শন করি নাই। অতএব তোমার সহিত আমি গমন করিব। অনন্তপূর্ববা কুমারী অবস্থায় তুমি আমাকে বিবাহ করিয়াছ ; আমিও বহুদিন যাবৎ তোমার গৃহে অবস্থিতি করিতেছি ; কিন্তু এক্ষণে জায়াজীবের স্যায় আমাকে অস্যদায় হস্তে নিপাতিত করা কি তোমার কৰ্ত্তব্য ? প্রভো ! তুমি নিত্য যাহার হিতাকাঙক্ষী, যাহার জন্যে তোমার রাজ্যপ্রাপ্তি ঘটিল না, তুমি না হয়, সেই ভরতের বশবৰ্ত্তী হইয়া থাক, কিন্তু আমাকে কোনও রূপে তদধীন করিতে পারিবে না । তুমি আমাকে সঙ্গে না লই:া বনে যাইতে পরিবে না, তোমার সহিত তপশ্চৰ্য্যা বা অরণ্য, কিম্বা স্বগপ্রাপ্তি, যাহা ঘটিতে হয় ঘটুক। ১-১০ তোমার পশ্চাৎ গমন করিলে, আমার কোন ক্লেশ বোধ হইবে না ; প্রত্যুত, বনগমন-পথ বিহারশয্যা বলিয়া উপলব্ধি হইবে। বনে কুশ, কাশ, শর ও ইষীক প্রভৃতি যে সকল কণ্টকময় বৃক্ষ আছে, তোমার সহিত গমন করিলে তাহ আমার নিকটে তুলা ও মৃগর্মের ন্যার মুখস্পর্শ বোধ হইবে। হে রমণ ! মহাবাত-সমুদ্ভূত যে ধূলিজাল উড্ডান হইয়া আমার শরীর সমাচ্ছন্ন করিবে, তখন তাহ আমার নিকটে অত্যুত্তম চন্দন বলিয়া অনুমিত হইবে। আমি যখন তোমার সহিত একত্র শাদ্বলে শয়ন করিয়া থাকিব, তখন পর্যাঙ্কের চিত্রকম্বল কি তাহা অপেক্ষা অধিকতর মুখভোগ্য হইৰে ? তুমি স্বহস্তে আহরণ করিয়া যে সকল ফলমূল ও পত্র, অল্প বা অধিক হউক, আমাকে আনিয়া দিবে, আমার নিকট তাহ অমৃতায়মান ও মধুর বলিয়া বিবেচিত হইবে। বলিতে কি, আমি সেখানে তোমার সহিত একত্র থাকিলে, আমার পিতা-মাতার জন্য উদ্বিগ্ন হইব না এবং গৃহের ミe `AL কথাও স্মরণ করিব না ; সর্বদাই সেখানে বসন্তাদি ঋতুর ফলপুষ্প উপভোগে সুখী হইব । যাহা হউক, সমস্ত বিসর্জন দিয়া দূরে থাকিব বলিয়া, তোমাকে দুঃখিত করিব না, আমার জন্য তোমাকেও শোকাভিভূত হইতে হইবে না এবং আমি তোমার দুর্ভরা হইব না। বলিতে কি, যদি তোমার সহিত অবস্থিতি ঘটে, তাহা হইলে তাহাই স্বর্গ এবং তোমার অভাব নরক ; তুমি ইহা বিবেচনা করিয়া আমাকে সঙ্গে লইয়া চল । অধিক কি বলিব, যদি বনগমনে অদোযুদশিনী স্থিরনিশ্চয় আমাকে কোনও রূপে তোমার সঙ্গিনী করিয়া না লও, তাহা হইলে আদ্য বিষপানে প্রাণ পরিত্যাগ করিব, সেও স্বীকার, তথাপি বিপক্ষ ভরতের পক্ষে অবস্থিতি করিয়া এ স্থানে থাকিব না। প্রভো ! তুমি আমাকে এখানে রাখিয়া বনগমন করিলে, পরেও আমার মরণ যখন সুনিশ্চিত, তখন তোমার সমক্ষেই বনগমনকালে আমি প্রাণত্যাগ করিব। বলিতে কি, চতুর্দশ বৎসর ত দূরের কথা, তোমার অভাবে এক মুহূৰ্ত্তও জীবন ধারণ করিতে পারিব না । ১১-২১ জানকী এইরূপে শোকসন্তপ্তমনে বিলাপ ও পরিতাপ করিয়া প্রাণবল্লভকে দৃঢ়তর আলিঙ্গন-পূর্বক মুক্তকণ্ঠে ক্ৰন্দন করিতে লাগিলেন। তিনি রামচন্দ্রের নিষেধবাক্যে বিষদিগ্ধ শরাহত হস্তিনীর ন্যায় অতিশয় মৰ্ম্মাহত হইলেন। যেরূপ অরণি-কাষ্ঠ হইতে অগ্নি উদিগরণ হয়, তাহার স্তায় তাহার নয়নযুগল হইতে বাষ্পবারি বিগলিত হইতে লাগিল । যেরূপ কমলদল হইতে জলবিন্দু নিঃস্থত হয়, তাহার স্যায় তদীয় নয়ন হইতে স্ফটিকসদৃশ শুভ্র সন্তাপাশ্র পতিত হইতে লাগিল। তখন প্রবল শোকাগ্নিতে সীতার পূর্ণশশধরন্থতি মুখমণ্ডল জলোন্ধত অরবিন্দের স্যায় শুস্কভাব ধারণ করিল। এই সময়ে রামচন্দ্র জানকীকে বিচেতনপ্রায় ও অতিশয় শোকাৰ্ত্ত দেখিয়া, তাহকে আলিঙ্গন-পূর্বক সমাশ্বাসিত করিয়া