পাতা:বাল্মীকি রামায়ণ - উপেন্দ্রনাথ মুখোপাধ্যায়.pdf/২২৩

এই পাতাটির মুদ্রণ সংশোধন করা প্রয়োজন।

O অযোধ্যাকাও লোক প্রাসাদ, হৰ্ম্ম্য ও বিমান-শিখরে আরোহণপূর্বক দীন-নয়নে নিরুৎসাহ-মনে তাহাদিগকে দেখিতে লাগিল। রাজপথ অতিক্রম করিয়া যাওয়া অতিশয় কষ্টসাধ্য হইয়া উঠিল ; এই কারণে জনস্রোতপ্রাসাদশিখরের আশ্রয় গ্রহণ করিল। তখন রামচন্দ্রকে অনুজ লক্ষণ ও প্রাণাধিক জানকীর সহিত পদব্রজে গমন করিতে দেখিয়া, শোকাবিভূত হইয়া, সকলে এইরূপ বলিতে লাগিল,—যে রামচন্দ্রের গমনসময়ে চতুরঙ্গ বল সঙ্গে যাইত, অদ্য অমুজ লক্ষণ দেবী জানকীর সহিত র্তাহারই অনুগমন করিতেছেন। যিনি সমস্ত ঐশ্বৰ্য্যের রসজ্ঞ ও বিলাসের আকরস্থান, আঞ্জ তিনি ধৰ্ম্ম-গৌরবে বাধ্য হইয়া, পিতৃবাক্যের অন্যথাচরণ করিতে পারিলেন না । যে সীতাকে অন্তরীক্ষের প্রাণিগণ পর্যন্ত দেখিতে পায় নাই, আজ র্তাহাকে রাজ-পথ-চারী ব্যক্তিগণও অনায়াসে দেখিতেছে। যে জানকা অঙ্গরাগ ও রক্তচন্দনে লিপ্ত থাকিতেন, র্তাহাকেই গ্রীষ্মের উত্তাপ, বর্ষার জলধারা ও দুরন্ত শীতের কোপ সহ্য করিয়া বিবর্ণ হইতে হইবে । বুঝিলাম, মহারাজ নিশ্চয়ই পিশাচোপহত হইয়াছেন। তাহা না হইলে, এরূপ প্রিয় পুলকে বনবাসী করিতে পারিতেন না। আশ্চৰ্য্য, যে রামের চরিত্র সম্বন্ধে সকলে একবাক্যে মুখ্যাতি করিয়া থাকে, তাহার কথা দূরে থাকুক, নিগুণ পুত্রের প্রতিও কেহ এরূপ নিষ্ঠর ব্যবহার করে না। রামচন্দ্রে অহিংসা, দয়া, শাস্ত্রবিজ্ঞতা, সুশীলতা, দম ও শান্তি এই ছয়টি গুণ জাজ্বল্যমান। প্রবল নিদাঘতাপে সরোবর শুষ্কসলিল হইলে, যেরূপ তাহাতে জলজন্তুর অবস্থিতি অসম্ভব, সেইরূপ রামবিবাসনও প্রজালোকের পক্ষে সাতিশয় পীড়াজনক হইবে। জগৎপতি রামচন্দ্রের এরূপ অবস্থাতে সকলেই উৎপীড়িত। বৃক্ষের মুলোচ্ছেদ ১। প্রাসাদ শব্দে দৈৰালয় ও রাজাদের গৃহ বুঝায়, বর্ঘ্য শৰে ধনী নাগরিকগণের বাসগৃহ, বিমান শৰে সপ্তভল বাড়ী বা দেবালুয়কে बूषाग्न । 峻 ఫి(tన হইলে যেরূপ ফলপুপাদির অনিষ্ট-সঙ্ঘটন হয়, রামের অভাবে প্রজাগণের অবস্থাও তাছাই হইবে। ধাৰ্ম্মিকচুড়ামণি মহাত্মা রামচন্দ্র সকল মনুষ্যের মূল, অপরাপর লোক সকল ইহার ফল, পুষ্প ও শাখামাত্র । ১-১৫ অতএব লক্ষণ যেমন রামের অনুবৰ্ত্তী হইয়াছেন, আমরা সপত্নীক বন্ধুবান্ধবের সহিত সকলে রাম যেখানে যাইবেন, সেইখানে গমন করিব। আমাদের উদ্যান, ক্ষেত্র ও গৃহাদির প্রয়োজন নাই, আমরা ধাৰ্ম্মিক রামের সমদু:খমুখী হইয়া তাহারই অনুবর্তী হইব। অতঃপর আমাদের যে সকল অর্থাদি ভূগর্ভে নিহিত আছে, তাহা উদ্ধত হইবে, ধেনু-ধান্তাদি অপহৃত হইবে, গৃহ-দেবতাগণ গৃহ পরিত্যাগ করিবেন, গৃহের সর্বত্রই ধূলিধূসরিত ও অপরিচ্ছন্ন হইবে, মুষিক সকল চতুর্দিকে প্রধাবিত ও নানা স্থানে বিল সকল প্রাচুভূত হইবে। জলের সম্পর্ক থাকিবে না, রন্ধন ধূমনিরস্ত থাকিবে, যাগ, যজ্ঞ ও ক্রিয়াদি সমেত মন্ত্রপ্রভাব বিলুপ্ত হইবে। অকালে গৃহ ভগ্ন ও নানা উৎপাত প্রকাশিত হইবে। আমরা এই পুরী পরিত্যাগ করিয়া যাইলে, কৈকেয়ী আমাদের পরিত্যক্ত গৃহসকল লাভ করুন। রামচন্দ্র যে বনে গমন করিবেন, তাহা নগর হউক এবং আমাদিগের পরিত্যক্ত নগর বনরূপে পরিণত হউক । সপগণ আমাদের ভয়ে ভীত হইয়া বাসস্থান বিল, মৃগপক্ষিগণ গিরিশিখর এবং মাতঙ্গ ও মৃগেন্দ্র সকল বনভূমি পরিত্যাগ করুক। আমরা যে স্থান ত্যাগ করিয়া যাইব, উহারা তাহ অধিকার করুক ; এখন অবধি যেখানে তৃণ, মাংস ও ফলপ্রাপ্তির সুবিধা, উহারা তাহা পরিত্যাগ করুক। আমরা এক্ষণে মনের সুখে রামের সঙ্গে বনে বাস করিব। কৈকেয়ী পুত্র ও আপনার আত্মীয়দিগের সহিত এই পুরী পালন করিতে থাকুন। যদিও রামচন্দ্র এই প্রকার নানা কথা অনেকের মুখে শুনিলেন, তথাপি কোনরূপে