পাতা:বাল্মীকি রামায়ণ - উপেন্দ্রনাথ মুখোপাধ্যায়.pdf/২২৪

এই পাতাটির মুদ্রণ সংশোধন করা প্রয়োজন।

N9e র্তাহার মনের বিকৃতি ঘটিল না। তিনি ক্রমে ক্রমে মত্ত মাতঙ্গবৎ মন্দগমনে কৈলাসাচল সদৃশ পিতৃভবনা ভিমুখে যাইতে লাগিলেন। ভবনের দ্বারদেশে বিনীত বীর পুরুষের প্রহরীর কাৰ্য্যে নিযুক্ত। রাম তাহা অতিক্রম করিয়া, অদূরে দীনভাবাপন্ন মুমন্ত্রকে দেখিতে পাইলেন। রামচন্দ্র পিতৃনিদেশ-পালনে সজ্জীভূত হইয়া প্রসন্ন-মনে পিতৃচরণ দর্শন করিবার আশায় দ্বারে উপস্থিত হইলেন। দেখিলেন, তত্রত্য ব্যক্তিগণ সকলেই সুদুঃখিত। ধৰ্ম্মবৎসল রামচন্দ্র পিতৃসত্যপালনাৰ্থে স্থিরনিশ্চয় হইয়া পিতৃচরণে বিদায় লইবার আশায় দ্বারদেশে উপস্থিত হইলেন এবং সুমন্ত্রকে নিকটবৰ্ত্তী দেখিয়া “আমার উপস্থিতি-সংবাদ পিতৃদেবকে বিজ্ঞাপিত কর”—র্তাহাকে এই কথা বলিলেন। ১৬-৩০ চতুস্ত্রিংশ সর্গ অনন্তর কমললোচন, দুৰ্ব্বাদলশ্যাম, নিরুপম রামচন্দ্র সুমন্ত্রকে আহবান করিয়া কহিলেন, তুমি গিয়া আমার উপস্থিতি-সংবাদ পিতার নিকট প্রদান কর । সুমন্ত্র রামের কথায় সত্বর গমন করিলেন ; দেখিলেন, মহারাজ শোকে সমাচ্ছন্ন, তিনি বারংবার দীর্ঘনিশ্বাস ত্যাগ করিতেছেন। র্তাহার অবস্থা রাহুগ্রস্ত দিবাকরের স্থায়, ভস্মাচ্ছাদিত বহ্নির স্যায়, জলহীন তড়াগের স্যায়। মহাপ্রাজ্ঞ স্বমন্ত্ৰ নৃপতিকে সম্বোধন-পূর্বক রামের উদ্দেশে বিলাপকারী মহারাজকে কৃতাঞ্জলিপুটে বলিলেন। অগ্রে জয়াশীৰ্ব্বাদ দ্বারা বৃদ্ধরাজাকে প্রোৎসাহিত করিয়া, দুঃখিত রাজা কি বলিবেন, এই ভয়ে বিকল মন্দ মন্দ উচ্চারিত বাক্যে বলিলেন, মহারাজ ! পুরুষশ্রেষ্ঠ আপনার পুত্র রামচন্দ্র ব্রাহ্মণদিগকে ধনদান ও অনুজীবিগণকে অর্থ বিতরণ করিয়া, আপনার সহিত সাক্ষাৎ প্রত্যাশায় দ্বারে অপেক্ষা করিতেছেন। বাল্মীকি-রামায়ণ সত্যপরাক্রম রাম সুহৃদ ও অন্তান্ত আত্মীয়দিগের নিকট বিদায় গ্রহণ করিয়াছেন, এক্ষণে আপনার চরণদর্শন করিতে ইচ্ছা করেন। স্বৰ্য্যদেব যেরূপ সৌরকিরণে সুশোভিত থাকেন, তাহার স্যায় তিনি বিবিধ রাজগুণে বিভূষিত হইয়া শোভা পাইতেছেন। ইনি সত্বর মহারণ্যে প্রবেশ করিবেন। হে পৃথিবীপতে ! তাহাকে আপনি অবলোকন করুন । ১-৮ তখন সমুদ্রতুল্য গম্ভীর, আকাশতুল্য স্বনিৰ্ম্মল, সত্যবাদী নৃপতি দশরথ তাহাকে কহিলেন,—হে সুমন্ত্র । এই ভবনে আমার যে সকল পত্নী আছেন, তুমি সর্বাগ্রে তাহাদিগকে আমার এখানে আনয়ন কর । আমরা মিলিত হইয়া প্রাণাধিক রামচন্দ্রের মুখচন্দ্র নিরীক্ষণ করিব। রাজাজ্ঞাপ্রাপ্তিমাত্র সুমন্ত্র অন্তঃপুরে প্রবেশ করিলেন এবং রাজপত্নীদিগকে “নৃপতি আপনাদিগকে আহবান করিতেছেন, অতএব সত্বর আগমন করুন”—এই কথা বলিলেন । সুমন্ত্রমুখে এরূপ উক্তি শ্রবণ করিয়া, সেই সকল রাজপত্নী স্বামীর আদেশে সেখানে যাইবার জন্য প্রস্তুত হইলেন। ব্রতধারিণী রোদন-নিবন্ধন তাম্রলোচনা সেই তিন শত পঞ্চাশং রাজপত্নী কৌশল্যাকে বেষ্টন করিয়া তথায় উপস্থিত হইলেন। র্তাহারা উপস্থিত হইলে, মহারাজ রামকে আনয়ন করিবার জন্য সুমন্ত্রের প্রতি আদেশ করিলেন। আদেশমাত্রে সুত সীতা ও লক্ষণ সমভিব্যাহারে রামচন্দ্রকে লইয়া সত্বর নৃপতি-সন্নিধানে উপস্থিত হইলেন। প্রমদাপরিবেষ্টিত নৃপতি দূর হইতে পুত্রকে কৃতাঞ্জলিপুটে আসিতে দেখিয়া, দুঃখিতচিত্তে আসন পরিত্যাগ করিয়া উঠিলেন। সেই রাজা, রামকে দেখিয়া বেগে অভিধাবিত হইলেন, রামচন্দ্রের নিকট পর্য্যন্ত না পৌঁছিয়াই মূচ্ছিত হইয়। ভূতলে নিপতিত হইলেন। তখন মহারথ লক্ষণ ও ধাৰ্ম্মিক রামচন্দ্র, শোকাচ্ছন্ন মুছাপন্ন নৃপতিকে ভূমি হইতে শশব্যস্তে উথাপিত করিলেন। তখন অলঙ্কার-ঝঙ্কার সহিত প্রমদাগণের জাৰ্ত্তনাদ রাজপুরী