পাতা:বাল্মীকি রামায়ণ - উপেন্দ্রনাথ মুখোপাধ্যায়.pdf/২৩৪

এই পাতাটির মুদ্রণ সংশোধন করা প্রয়োজন।

১৭২ রাম লক্ষণ দুই ভ্রাতা, অস্ত্র, বৰ্ম্ম ও চৰ্ম্মপরিবৃত পেটকাদি রথমধ্যে রক্ষা করিয়া, তাহাতে আরোহণ করিলেন। চামীকর-বিভূষিত প্রদীপ্ত বহ্লিকুল্য সেই রথ অপূর্ব গতিতে গমন করিতে লাগিল। বায়ুবেগগামী মনোমত অশ্বে কশীঘাতমাত্রে ঘর্ঘররবে রথের গতি হইল। যখন মহারণ্যাভিমুখে রথগতি অবধারিত হয়, তখন নগরবাসিগণ, স্যৈগণ ও জনসমূহ মূচ্ছিত হইয়া পড়িল । ১০-১৮ চতুদিকেই আৰ্ত্তনাদ, মাতঙ্গগণ কোপভরে অনবরত আস্ফালন করিতে লাগিল, সর্বত্রই ভয়াবহ কোলাহল । নগরে আবালবৃদ্ধবনিতা সকলে অতিশয় কাতর হইল, যেরূপ নিদাঘ-তাপতাপিত লোক জল দর্শনে তদভিমুখে অগ্রসর হয়, তাহার স্যায় রামচন্দ্রের পশ্চাৎ ধাবিত হইল। অসংখ্য লোক রথে লম্বমান হইয়া, সজলনয়নে পৃষ্ঠ ও পার্থ দেশ হইতে তারস্বরে বলিতে লাগিল,—হে সুমন্ত্ৰ ! তুমি অশ্বরশ্মি সংযত করিয়া মৃদুভাবে গমন করিতে থাক ; রামের মুখচন্দ্ৰ দেখিব, অতঃপর আমরা বহুদিন এ মুখ আর দেখিতে পাইব না। আমাদের বিবেচনায় নিশ্চয়ই রামজননীর হৃদয় লৌহময়, যদি তাহা না হইবে, তবে কুমার-তুল্যরাজকুমারকে বনবাস দিয়া, তাহা বিদীর্ণ হইল না কেন ? আহা ! ধৰ্ম্মপরায়ণ সীতাদেবী ছায়ার স্যায় স্বামীর অনুবৰ্ত্তিনী হইয়া কৃতকাৰ্য্য হইয়াছেন। সুর্য্যপ্রভা যেরূপ সুমেরুকে পরিত্যাগ করে না, ইনিও সেইরূপ রামকে পরিত্যাগ করেন নাই। আহা ! হে লক্ষণ ! তুমি যখন দেবতুল্য সত্যবাদী জ্যেষ্ঠকে পরিত্যাগ না করিয়া র্তাহার পরিচর্য্যাভার গ্রহণ করিয়াছ,তখন তুমি কৃতার্থ হইয়াছ। লক্ষণ ! তোমাকে অধিক কি বলিব, তুমি যে রামের অনুগমনেস্থিরমতি হইয়াছ,তোমার এবুদ্ধি প্রশংসার যোগ্য ; তুমি যে পথ অবলম্বন করিয়াছ, বাস্তবিক ইহাতে তোমার উন্নতি ও স্বৰ্গপ্রাপ্তি ঘটিবে। তাহারা এই কথা বলিতে বলিতে নয়নজলে অভিষিক্ত বাল্মীকি রামায়ণ হইল এবং সকলেই অনুরাগ নিবন্ধন রামের পশ্চাৎ প্রধাবিত হইল। ১৯-২৭ এ দিকে মহারাজ জীনচেতা দশরথ, কাতর স্ত্রীগণের সমভিব্যাহারে ‘প্রিয় পুত্রকে দেখিব’ এই বলিয়া গৃহ হইতে পদব্রজে ধাবমান হইলেন। হস্তকে শৃঙ্খলাবদ্ধ দেখিয়া হস্তিনীগণের মধ্যে যেরূপ আৰ্ত্তশব্দ উত্থিত হয়, তদ্রুপ সর্বাগ্রে কেবল স্ত্রীলোকদিগের আর্তনাদ শ্রীতিগোচর হইতে লাগিল। সেই রামচন্দ্রের বননিৰ্গমনকালে রাজা পিতা দশরথ অত্যন্ত বিষণ্ণ হইয়াছিলেন,—যেমন পূর্ণ শশধর রাহু কর্তৃক গ্ৰাসিত হইয়া স্নান হয়েন, সেইরূপ। অচিন্তাত্মা দাশরথি সত্বর রথচালনের জন্য সুমন্ত্রকে ‘শীঘ্র রথ চালনা কর এইরূপ বলিতে লাগিলেন। এই সময়ে সুমন্ত্রের সঙ্কট অবস্থা ; এক দিকে 'সত্বর রথ চালনা কর’ রামের অনুমতি, অন্য দিকে ‘রথবেগ নিবৃত্ত কর', লোকদিগের এইরূপ অনুরোধ ; সুতরাং এককালে উভয় কাৰ্য্য সম্পাদন করা সুমন্ত্রের পক্ষে কঠিন হইয়া উঠিল । রামের গমনসময়ে রথচক্র-পেষণে মহীমণ্ডল যে ধূলিপটলে সমাচ্ছন্ন হইয়াছিল, এক্ষণে পেীরগণের নয়ন-জলে তাহ নিবারিত হইল। রামের বন-প্রয়াণ-সময়ে সেই পুরী রোদন শব্দেও অশ্রুজলে পরিপূর্ণ হইল,সকলেই হাহাকার রবে আৰ্ত্তনাদ করিয়া অচেতন হইল। এইরূপে সকলেরই অতিশয় পীড়া ঘটিয়াছিল। পুরনারীগণের নয়ন হইতে নিরন্তর শোকাশ্ৰ নিপতিত হইতে থাকিল। মীনসংক্ষোভ-চালিত পঙ্কজ দ্বারা সলিলের অবস্থা যেরূপ হয়, তাহদের নয়ন-জলও সেইরূপে প্রতীয়মান হইল। বৃদ্ধ মহারাজ নগরীর সমস্ত লোকের তুল্যাবস্থা ও রামের প্রতি তদগতভাব দর্শনে ছিন্নমূল পাদপের স্যায় দুঃখভারে নিপতিত হইলেন । ২৮-৩৬ তদনন্তর রামচন্দ্রের পশ্চাদ্ভাগে যে সকল লোক ছিল, মহারাজের এ অবস্থায় তুমুল আৰ্ত্তনাদ করিয়া উঠল। নৃপতিকে নারীদিগের সহিত দুঃখিত ও বিদ দেখিয়া, কতকগুলি লোক হা রাম ! কেহ কেহ বা