পাতা:বাল্মীকি রামায়ণ - উপেন্দ্রনাথ মুখোপাধ্যায়.pdf/২৩৫

এই পাতাটির মুদ্রণ সংশোধন করা প্রয়োজন।

O অযোধ্যাকাও হা কৌশল্যা । এই বলিয়া শোক প্রকাশ করিতে লাগিল। অনন্তর দাশরথি পশ্চাদিকে দৃষ্টি সঞ্চারণপূর্বক দেখিলেন, তাহার জনকজননী পদব্রজে তাহার পশ্চাং আগমন করিতেছেন ; তাহারা শোকাচ্ছন্ন ও বিষাদগ্ৰস্ত। শৃঙ্খলবদ্ধ অশ্বশাবক যেরূপ তাহার মাতাকে দেখিতে পায় না, তাহার স্যায় তিনি সত্যপাশে আবদ্ধ বলিয়া, তাহাদিগকে সুস্পষ্ট দেখিতে পারিলেন না । যানে গমনাগমন করা যাহাঁদের অভ্যাস, র্যাহারা সুখ ভিন্ন দুঃখ পদার্থের মৰ্ম্মাবগত নহেন, তাহার অদ্য পদব্রজে গমন করিতেছেন দেখিয়া, রাম সুমন্ত্রকে সম্বর রথচালনা করিতে অনুমতি করিলেন। অঙ্কুশ-পীড়িত মত্ত মাতঙ্গের অবস্থা যেরূপ হয়, পিতা-মাতার অবস্থা দর্শনে রামের অবস্থাও সেইরূপ হইল। তখন কৌশল্য, বৎসকে বন্ধন করিয়া রাখিলে, গাষ্ঠী যেরূপ গোষ্ঠাভিমুখে গমন করে, তাহার স্যায় তিনি সস্নেহে রামের অভিমুখে ধাবমান হইলেন। র্তাহার দুই চকু দিয়া দরদরিত ধারা প্রবাহিত। তিনি হা রাম ! হা সীতে ! হা লক্ষণ ! এই কথা বলিয়া শোক প্রকাশ-পূর্বক রথের পশ্চাতে গমন করিতে লাগিলেন। রাম একবারমাত্র চাহিয়া দেখিলেন যে, র্তাহার জননী রাম, লক্ষণ ও সীতার উদ্দেশে রোদন করিয়া, ইতস্ততঃ ভ্রমণ করিতেছেন। ৩৭-৪৫ তখন স্বমন্ত্রকে মহারাজ রথবেগ নিবৃত্ত করিতে ও রামচন্দ্র সত্বর রথচালন করিতে আদেশ করিলে, তিনি যুদ্ধাৰী উভয়পক্ষীয় সৈন্যমধ্যগত পুরুষের স্থায় কিংকৰ্ত্তব্যবিমূঢ় হইলেন। এই সময় রামচন্দ্র কহিলেন, স্বমন্ত্র। যদি নৃপতি তোমাকে তিরস্কার করেন, তুমি আপনার আদেশ শুনিতে পাই নাই, এই কথা বলিতে পরিবে ; কিন্তু আমার কথা না শুনিলে, বিলম্ব হেতু আমাকে কষ্টভোগ করিতে হইবে। দুঃখের ধারাবাহিকতা অসহ । সুমন্ত্র রামবাক্যে, অমুগামী ব্যক্তিদিগকে বিদায় দিয়া, অধিকতর বেগে রথচালনা করিলেন। তখন রাজপরিবার ও অপরাপর SQS) ব্যক্তিগণ রামকে মনে মনে প্রদক্ষিণ করিয়া গমনে নিবৃত্ত হইলেন বটে, কিন্তু র্তাহাদের অন্তঃকরণ র্তাহার প্রতি ধাবমান রহিল। এই সময়ে মহারাজের অমাত্যেরা বলিতে লাগিলেন, প্রভো ! যাহার পুনরাগমন প্রতীক্ষা করিতে হয়, তৎসমভিবাহারে বহুদূর গমন করিতে নাই। মহারাজ দশরথ অমাত্যদিগের মুখে এরূপ ব্যবস্থা শ্রবণ করিয়া, ভাৰ্য্যাদিগের সমভিব্যাহারে রামামুগমনে বিরত হইলেন। তিনি কিয়ৎকালের জন্য ঘৰ্ম্মাক্তকলেবরে বিষণ্ণবদনে রামের মুখের দিকে একদৃষ্টে চাহিয়া রছিলেন। ৪৬-৫১ একচত্বারিংশ সর্গ কৃতাঞ্জলিপুটে বিদায় লইয়া, পুরুষশ্রেষ্ঠ রামচন্দ্র নিষ্ক্রান্ত হইলে, অন্তঃপুরে অন্তঃপুরবাসিনীদিগের তুমুল আৰ্ত্তনাদ সমুথিত হইল। তাহার একবাক্যে বলিতে লাগিলেন, যিনি অনাথ, দুর্বল ও শোচনীয় ব্যক্তির একমাত্র গতি, সেই রামচন্দ্র এখন কোথায় চলিলেন ? মিথ্যা দোষারোপেও যিনি ক্রুদ্ধ হন না, যিনি ক্রোধপদার্থকে বিসর্জন দিয়াছেন, যিনি ক্রুদ্ধ ব্যক্তিকে সকল প্রকারে প্রসন্ন করিয়া থাকেন, র্যাহার সুখ-দুঃখে সমান জ্ঞান, তিনি এখন কোথায় চলিলেন? যিনি গর্ভধারিণী জননী কৌশল্যার স্যায় আমাদিগকে দেখিয়া থাকেন, সেই মহাত্মা কোথায় গেলেন ? যিনি জগতের পরিত্রাতা, তিনি কৈকেয়ী-নিপীড়িত মহারাজের নিয়োগে এক্ষণে কোথায় চলিলেন ? হায়! নিশ্চয়ই রাজা দশরথ জ্ঞানশূন্ত হইয়াছেন, যদি তাহ না হইবেন, তাহ হইলে সর্বজীবের আশ্রয়স্থানস্বরূপ ধৰ্ম্মব্রত সত্যসন্ধ রামকে বনবাসী করিলেন কেন ? এই বলিয়া, সকল মহিষী বিবৎসা ধেনুর স্যায় দুঃখিত-মনে রোদন ও উচ্চৈঃস্বরে শোক করিতে লাগিলেন। অন্তঃপুরে অবস্থিতি ও সেই আৰ্ত্তনাদ শ্রবণ করিয়া, অবনীনাথ অতিশয় দুঃখিত