পাতা:বাল্মীকি রামায়ণ - উপেন্দ্রনাথ মুখোপাধ্যায়.pdf/২৪৬

এই পাতাটির মুদ্রণ সংশোধন করা প্রয়োজন।

>br8 বিধান করিবেন। বিবেচনা করিয়া দেখ, যেখানে অসুখ, যেখানে উৎকণ্ঠা, যেখানে উদাসভাব, সে গুহে বাস করিবার প্রয়োজন কি ? ১১-২০ যদি কৈকেয়ীরাজ্য অধৰ্ম্মযুক্ত ও নাথহীন হয়, তাহা হইলে ধন ও পুত্রাদির কথা দূরে থাকুক, আমাদের জীবনধারণেই বা প্রয়োজন কি ? ঐশ্বৰ্য্যামুরোধে যে স্ত্রী অনায়াসে পতি-পুত্রধনে বিসর্জন দিল, সেই কুলকলঙ্কিনী অতঃপর আর কাহাকে ত্যাগ করিবে ? আমরা পুত্রের শপথ করিয়া বলিতেছি যে, কৈকেয়ী যত দিন জীবিত থাকিবে, আমরা প্রাণ থাকিতে তাহার শাসনে এই রাজ্যে বাস করিব না। যে নিলাজ কৈকেয়ী মানবেন্দ্র মহারাজের প্রিয়পুস্তকে বনবাসী করিয়াছে, সেই দুষ্টাচারিণী অধৰ্ম্মাচারিণী কৈকেয়ীর শাসনাধীনে থাকিয়া, কে সুখভোগের প্রত্যাশ করে ? এখন হইতে এই রাজ্যে বিস্তর উপদ্রব ঘটিবে,রাজ্যশাসনসম্বন্ধে কাহারও কর্তৃত্ব প্রকাশ পাইবে না, যাগযজ্ঞ বিলুপ্ত হইবে ; বুঝিলাম, কৈকেয়ী হইতে সকলই নষ্ট হইবে । রাম যখন বনবাসী হইয়াছেন, তখন আর মহারাজ জীবিত থাকিবেন না ; মহারাজের মৃত্যুতে সকলই ছিন্নভিন্ন ও নিঃশেষ হইবে। এখন হইতে আমরা স্ত্রীপুরুষে সম্মিলিত হইয়া শিলায় বিষখণ্ড পেষণ-পূর্বক উহ! পান করিব, অথবা, রাম যেখানে গমন করিয়াছেন, হয় সেইখানে কিম্বা যেখানে কৈকেয়ীর নাম পৰ্য্যন্ত শুনিতে পাওয়া যায় ন,সেই দূরদেশে গমন করিব। বুঝিলাম, অকারণে সীতা-লক্ষণের সহিত রামচন্দ্র বনবাসী হইয়াছেন ; অতএব এক্ষণে পশুঘাতক-সন্নিধানে বধ্য পশুর স্যায় ভরতের নিকটে আমরা সন্নিবদ্ধ হইলাম। বলিতে কি, রামচন্দ্র পূর্ণচন্দ্র সদৃশ, তিনি শ্যামবর্ণ, অরিন্দম ও পদ্মপলাশলোচন,তাহার বাছ আজিামুলম্বিত এবং জব্রুস্বয় গুড়াকারে রচিত। তিনি মথুরালাপী, সত্যবাদী, বলবান, প্রিয়দর্শন এবং চন্দ্রের স্থায় সৌম্যদর্শন। সেই মহাবিক্রম, মহারথ অরণ্যে বিচরণ করিতে করিতে বাল্মীকি-রামায়ণ তৎস্থান সকল সুশোভিত করিবেন। এইরূপে মৃত্যুভয়ে জীব যেরূপ কাতর হয়, তাহার স্যায় নগররমণীগণ দুঃখসন্তপ্তমনে রামের উদ্দেশে বিলাপ করিতে লাগিল । ২১-৩২ এ দিকে দিবাকর, পুরনারীদিগের দুঃখ দেখিয়া, যেন অদৃশ্য হইলেন ও রজনী সমাগত হইল। এই সময়ে নগরমধ্যে হোমাগ্নি আর প্রজ্বলিত রছিল না, শাস্ত্রালাপ ও অধ্যয়নাদি একেবারে বন্ধ হইল, অন্ধকার যেন চতুৰ্দ্দিক গ্রাস করিয়া বসিল । এখন হইতে বণিকগণের পণ্যভারসংগ্রহ নিরস্ত হইল, সকলেই নিরাশ ও নিরাশ্রয়। তারকাবিহীন আকাশের শোভা যে প্রকার হয়, তাহার ব্যায় অযোধ্যা দৃশ্যমান হইতে লাগিল। রাম পুরনারাদিগের গর্ভজাত সন্তান অপেক্ষা অধিক ছিলেন, আপনাদের পুত্র বা ভ্রাতাকে নির্বাসিত করিলে যেরূপ হয়, তাহার স্যায় পুরনারীগণ রামের অভাবে কাতর হইয়া, এইরূপে দীনভাবে রোদন করিতে লাগিল । ক্রমে রামের অভাবে অযোধ্যাপুরী নৃত্য, গীত ও উৎসব-বর্জিত হইল, কাহারও অন্তরে হর্ষবিকাশ রহিল না, দেশমধ্যে পণ্যক্রয়বিক্রয় বন্ধ হইল ; এইরূপে সেই পুরী ক্ষীণোদক সমুদ্রের ভাব ধারণ করিল। ৩৩-৩৭ একোনপঞ্চাশ সগ অনন্তর রামচন্দ্র পিতৃসত্য স্মরণ-পূর্বক সেই নিশাবসানে বহুদূর গমন করিলেন। পথিমধ্যে রাত্রি প্রভাত হইল, তিনি প্রাতঃসন্ধ্যা সমাপনান্তে উত্তর-কোশলদেশের দক্ষিণ সীমায় প্রবিষ্ট হইলেন। উহার প্রান্তভাগে কৰ্ষিত ক্ষেত্র সকল, গ্রামসমূহ ও পুম্পিত কানন সকল সন্দর্শন করিয়া যাইতে লাগিলেন। সে সময়ে তাহার রথ অতিশয় বেগে যাইতেছিল ; কিন্তু বিবিধ দৃশ্ব নয়নগোচর হওয়াতে, রথকে তাহার অনুভূত হয় নাই। তিনি যাইতে ঘাইতে গ্রাম্য লোকদিগের মুখে