পাতা:বাল্মীকি রামায়ণ - উপেন্দ্রনাথ মুখোপাধ্যায়.pdf/২৭১

এই পাতাটির মুদ্রণ সংশোধন করা প্রয়োজন।

সরফুর্তীরে গমন করিলাম। অনন্তর সেই ঘোর অন্ধকারময় জলমধ্যে কুম্ভ-পূর+শব্দ শুনিতে পাইলাম। বোধ হইল, যেন কোন হস্তী শব্দ করিতেছে। এই প্রকার অনুমান করিয়া, সেই শব্দ লক্ষ্য করত ঐ হস্তী শীকার জন্য তুণীর হইতে বিষধর সপসদৃশ, দীপ্তিমান শর উদ্ধৃত করিলাম এবং তৎক্ষণাৎ লক্ষ্যের দিকে শর নিক্ষেপ করিলাম। আমি যথায় সেই আশীবিষত্বল্য নিশিত বাণ মোচন করিলাম, তথায় সেই বাণে আহতমৰ্ম্ম হইয়া, জল-পতিত কোন এক বনবাসী ব্যক্তির “হা ! হা!” এই স্পষ্টধ্বনি শুনিতে পাইলাম। সে ব্যক্তি ভূমিতে পতিত হইলে, এই মনুষ্যবাক্য শুনিতে পাইলাম,—২০-২৫ আমি তপস্বী ; রাত্রিতে জল লইয়া যাইবার জন্য এই নির্জন নদীতে আসিয়াছি ; অতএব আমার উপর কিরূপে শস্ত্রাঘাত হইল ? মাদৃশ তপস্বিগণের উপর কি প্রকারে শস্ত্রাঘাত হইল ? এই নির্জন রাত্রিতে নদীতীরে জলাহরণ করিবার জন্য আসিয়াছিলাম, কোন জন কর্তৃক আমি বাণাহত হইলাম ? কাহারই বা আমি অপকার করিয়াছি ? বন্যফলমূলাহারে জীবন ধারণ করি ও বনে বাস করিয়া থাকি। আমরা ন্যস্তদও (অর্থাৎ অহিংস ) ঋষি, তবে কেন আমার উপর প্রহর হইল ? বন্ধলাজিনবাসী জটাভারধারী মদ্বিধ জনের শস্ত্রবধ কিরূপে বিধান হইতে পারে ? আমাকে বধ করিয়া কি অর্থসিদ্ধি হইবে ? অথবা আমি ত কাহারও অপকার করি নাই, ইহা নিস্ফল কাৰ্য্য, কেবল অনর্থকর। গুরু-পত্নীগামীকে যেমন কেহ কোন কালে সাধু মনে করে না, যিনি আমার এই বধসাধন করিলেন, তাহাকেও কেহ ভাল বলিবে না। আমি আপনার প্রাণভয়ে এইরূপ শোক করিতেছি না, আমি কেবল পিতামাতার জন্যই মরণভয় করিতেছি, তাহাদিগকে এতাবৎকাল আমি ভরণপোষণ করিয়াছি। আমি বাণাহত হইয়া পঞ্চত্ন প্রাপ্ত হইলে, আমার বৃদ্ধ পিতামাতা কোন বৃত্তি অবলম্বনে অযোধ্যাকাও २> > জীবন ধারণ করিবেন ? আহা ! আমি এবং আমার সেই বৃদ্ধ পিতামাতা একবাণে সকলেই নিহত হইলাম ! হায়! কোন বালকবুদ্ধি আমাদের সকলকেই হনন করিল ? দেবি ! আমি নিয়ত ধৰ্ম্মাকাঙ্ক্ষী ; সুতরাং সেই করুণান্বিত বাক্য শ্রবণ করিয়া নিতান্ত ব্যথিত হইলাম ; এমন কি, আমার হস্ত হইতে ধনুৰ্ব্বাণ ভূতলে পতিত হইল। রাত্ৰিযোগে বিলাপকারী সেই ঋষির করুণাযুক্ত বাক্য শুনিয়া আমি শোকাচ্ছন্ন এবং কর্তব্যাকৰ্ত্তব্যজ্ঞানরহিত হইলাম। পরে দীনভাবাপন্ন ও অত্যন্ত দুঃখিত-মনে সেই স্থানে গমন করিলাম। গমন করিয়া দেখি, সরযুতীরে সেই তাপস অস্ত্র-বিদ্ধ, ধূলি-সমাচ্ছন্ন, শোণিতাক্ত-কলেবর ও প্রকীর্ণজটাভার হইয়া ভূমিতলে শয়ান রহিয়াছেন এবং তাহার হস্ত হইতে জলকুন্ত স্খলিত হইয়াছে। সেই তাপসও আমাকে নয়ন দ্বারা ভীত ও ব্যাকুলচিত্ত দেখিয়া, যেন স্বীয় তেজে দগ্ধ করিয়া, এই ক্রুর বাক্য বলিলেন। ২৬-৩৮ রাজন ! বনবাসী আমি, তোমার কি অপকার করিয়াছি ? আমি গুরুজনের জন্য জল আহরণ করিতে গিয়াছিলাম, আপনি আমাকে তাড়না করিলেন এবং একটি বাণ দ্বারাই আমার মৰ্ম্মস্থান বিদ্ধ করিয়া আরও দুইটি বৃদ্ধ অন্ধকে বধ করিলেন । আমার পিতামাত উভয়েই বৃদ্ধ ও অন্ধ ; তুৰ্ম্মতে । র্তাহারা পিপাসিত হইয়া নিশ্চয়ই আমার প্রতীক্ষা করিতেছেন। র্তাহার আমার প্রতিগমনের প্রত্যাশায় অতি কষ্টে তৃষ্ণ ধারণ করিয়া থাকিবেন। বোধ হয়, আমার জ্ঞান ও তপস্যার কোন ফলই নাই । পিতা জানেন না যে, আমি এইরূপে ভূমিতলে শয়ান রহিয়াছি। জানিলেই বা তিনি কি করিতে পারেন ? তিনি স্বয়ং অশক্ত এবং অন্ধত্ব-নিবন্ধন গমনে সম্পূর্ণ অক্ষম। একটি বৃক্ষকে ভেদ করিলে যেমন অন্য বৃক্ষ তাহাকে রক্ষণ করিতে অসমর্থ, আমার পিতাও সেইরূপ আচল ও অসমর্থ। রাঘব ! আপনি শীঘ্র আমার পিতার নিকট