পাতা:বাল্মীকি রামায়ণ - উপেন্দ্রনাথ মুখোপাধ্যায়.pdf/২৭২

এই পাতাটির মুদ্রণ সংশোধন করা প্রয়োজন।

২১২ গমন করিয়া, এই সমুদয় ঘটনা নিবেদন করুন। যে পৰ্য্যন্ত পিতা আপনাকে বায়ু-বদ্ধিত অগ্নি কর্তৃক বনদহনের স্যায় দগ্ধ করিয়া না ফেলেন, তন্মধ্যেই আপনি শীঘ্ৰ যাইয়া পিতার নিকট এই বার্তা প্রদান করুন। হে রাজন। এই ক্ষুদ্র পথ দিয়া আমার পিতার আশ্রমে যাওয়া যায়। তথায় গিয়া আপনি পিতাকে প্রসন্ন করুন, যাহাতে তিনি কুপিত হইয় আপনাকে অভিশাপ প্রদান না করেন। হে রাজন। আমার মৰ্ম্মস্থান হইতে নিশিত শর উদ্ধার করিয়া, আমাকে শল্যহীন করুন। হে রাজন। নদীবেগ যেমন সমুচ্ছিত বালুকাময় তীর প্রদেশকে আহত করে, সেইরূপ আপনার এই সুতীক্ষ শর আমার মৰ্ম্মে আঘাত করিতেছে ; অতএব আমার বক্ষ হইতে শাল্য উদ্ধার করিয়া লউন । ৩৯-৪৬ দেবি ! এই সময়ে আমার হৃদয়ে এইরূপ চিন্তার উদয় হইল যে, মৰ্ম্মবিদ্ধ শল্য ঋষিকুমারকে যার-পর-নাই যাতনা দিতেছে ; কিন্তু যদি আমি শল্য উদ্ধার করি, তাপসকুমার এখনি জীবন পরিত্যাগ করিবেন ; শল্য আকর্মণের সময় আমি দুঃখিত, শোকাকুলিত ও একান্ত কাতর হইয়া এইরূপ চিন্তা করিতেছি, এমন সময় বিবৃত্তাঙ্গ, অবসন্ন, ক্ষয়োমুখ, পরমাত্মদর্শী মুনিকুমার আমাকে তাদৃশ কাতরভাবাপন্ন দেখিয়া ধৈর্য্যাবলম্বন-পূর্বক কহিলেন,—য়াজন। আমি ধৈর্য্য সহকারে শোক-দুঃখ সহ্য করিয়া স্থিরচিত্ত হইব । আপনি আমাকে বধ করিয়া ব্ৰহ্মহত্যার আশঙ্কা হৃদয় হইতে দূরীভূত করুন। আমি দ্বিজাতি নহি । আপনার মনে যেন এজন্য কোন দুঃখ না হয়। হে নরবরাধিপ ! আমি বৈশ্য হইতে শূদ্রাণীর গর্ভে জন্মগ্রহণ করিয়াছি। বাণাভিহত হইয়া অতি কষ্টে মুনিকুমার এইরূপ বলিলে পর, আমি তাহার বক্ষ হইতে শল্য উদ্ধার করিয়া লইলাম। তাহার সর্বাঙ্গ ঘূর্ণিত ও কম্পিত হইতে লাগিল। তিনি অত্যন্ত ভাত হইয়া, আমার বাল্মীকি-রামায়ণ প্রতি দৃষ্টিপাত-পূর্বক প্রাণত্যাগ করিলেন। মৰ্ম্মস্থল ক্ষত হওয়াতে অতিশয় ক্লেশপ্রযুক্ত জলে পড়িয়া গিয়া, তাহার সর্বশরীর আর্দ্র হইয়া গিয়াছিল। সেই অবস্থায় তিনি বারংবার দীর্ঘ নিশ্বাস ত্যাগ করিয়া, বিলাপ করিতে করিতে সরযু নদীতীরে প্রাণ বিসর্জনপূর্বক শয়ন করিয়া রহিলেন। মহিষ । তদর্শনে আমি যার-পর-নাই বিষাদিত, শোকান্বিত ও মৰ্ম্মাহত श्लांम । 8१-८७ চতুঃষষ্টিতম সর্গ তাপসকুমারের অপ্রতিরূপ অন্যায়-বধ-বিবরণ স্মরণ করিয়া, ধৰ্ম্মাত্মা মহারাজ দশরথ বিলাপ করিতে করিতে কৌশল্যাকে এই কথা বলিলেন,—দেবি । আমি অজ্ঞানপ্রযুক্ত এই প্রকার মহাপাপ করিয়া আকুলেন্দ্রিয় হইয়া, একাকী বসিয়া চিন্তা করিতে লাগিলাম যে, এখন কিসে মঙ্গল হয় ? অনন্তর আমি জলপূৰ্ণ ঘট লইয়া, ঋষিকুমার-কথিত পথ ধরিয়া, তদীয় পিতার আশ্রমে গমন করিলাম। তথায় যাইয়া তাহার বৃদ্ধ পিতা-মাতাকে দেখিলাম। র্তাহাদিগকে লইয়া ইতস্ততঃ বিচরণ করিবার অন্য কোন লোক নাই, র্তাহীদের শরীর অতিশয় দুর্বল ; দেখিয়া বোধ হইল, ষেন পক্ষিদ্বয়ের পক্ষ ছিন্ন হইয়া গিয়াছে ; তজ্জন্ত র্তাহারা আর উঠতে বা চলিতে পারেন না । পুত্র জল আনিবে, র্তাহাদের এই আশা যদিও আমি জন্মের মত বিচ্ছিন্ন করিয়া দিয়াছি, তথাপি র্তাহারা সেই আশা করিয়া, অনাথের ন্যায় বসিয়া পুত্রের কথা ভাবিয়া অনবরতই পুত্রের কথা কহিতেছেন ; তাহাতে র্তাহারা কিছুমাত্র শ্রম বোধ করিতেছেন না। আমি শোকাকুলচিত্ত ও ভয়প্রযুক্ত প্রায় চৈতন্য-বিহীন হইয়াছিলাম ; সেই আশ্রমে যাইয়া আমার শোক আরও বর্জিত হইল। পুত্ৰবোধে ঋষি আমার পদশব্দ শুনিয়া বলিতে লাগিলেন,—বৎস! কি জন্য তোমার