পাতা:বাল্মীকি রামায়ণ - উপেন্দ্রনাথ মুখোপাধ্যায়.pdf/২৭৫

এই পাতাটির মুদ্রণ সংশোধন করা প্রয়োজন।

অযোধ্যাকাণ্ড উদকক্রিয়া করিতে প্রবৃত্ত হইলেন। ঐ সময় সেই ধৰ্ম্মবিদ ঋষিকুমার স্বীয় কৰ্ম্ম-বলে দিব্য রূপ ধারণ করিয়া, ইন্দ্রের সহিত অবিলম্বে স্বর্গে আরোহণ করিলেন । যাইবার সময় ইন্দ্রের সহিত, পিতামাতা উভয়কেই মুহূৰ্ত্তকাল আশ্বাস প্রদান করিয়া বলিতে লাগিলেন,—আমি যে আপনাদের সেবা করিয়াছিলাম, সেই পুণ্যবলেই মহৎ স্থান প্রাপ্ত হইলাম। আপনারাও সত্বরই আমার নিকটে গমন করিবেন। এই বলিয়া জিতেন্দ্রিয় ঋষিকুমার দিব্য বিমানে আরোহণ করিয়া, তৎক্ষণাৎ স্বর্গারাঢ় হইলেন। এ দিকে পরম তেজস্বী অন্ধ মুনি ভাৰ্য্যার সহিত অতি সত্বর পুত্রের তর্পণ করিয়া, কৃতাঞ্জলিপুটে নিকটে দণ্ডায়মান আমাকে কহিলেন;–রাজন ! আমাকে মারিয়া ফেল, মরণে তার আমার ব্যথা নাই । আমার সেই একমাত্র পুত্র ছিল, তুমি তাহাকে বাণ দ্বারা হনন করিয়া, আমাকে অপুত্ৰক করিয়াছ। তুমি যে অজ্ঞান প্রযুক্ত আমার বালক পুত্রের প্রাণহত্য করিয়াছ, সেই জন্য আমি তোমাকেও অতি দুর্বিবষহ দারুণ শাপ দিব। আমি যেমন পুত্রের মৃত্যু জন্য এক্ষণে দুঃখ ভোগ করিতেস্থি, মহারাজ ! তোমাকেও এমনি পুত্ৰশোকে কষ্ট পাইয়া মরিতে হইবে। তুমি ক্ষত্ৰিয়, বিশেষতঃ ন জানিয়াই ঋষি-হত্যা করিয়াছ ; সেই জন্য হে নরাধিপ ! তোমার ব্রহ্মহত্যার পাতক হইবে না। কিন্তু দাতা ব্যক্তির দানের ফল যেমন অবশ্যই হইয়া থাকে, সেইরূপ তোমাকেও অচিরে আমার স্যায় এই প্রকার প্রাণান্তকর ঘোর দশায় পড়িতে হইবে। আমাকে এইরূপ শাপ দিয়া, করুণ-স্বরে অনেক বিলাপ করিয়া, চিতারোহণ-পূর্বক স্বর্গে প্রস্থান করিলেন । ৪৫-৫৭ হে দেবি । আমি যে তৎকালে অজ্ঞান প্রযুক্ত শব্দবেী হইয়া তাদৃশ পাপ করিয়াছিলাম, অধুন চিন্তা করিতে করিতে তাহা মনে পড়িল । হে দেবি । অপথ্য অন্ন ভোজন করিলে যেমন ব্যাধি জন্মে, S.めQ আমারও তেমনি সেই পাপে এই দশা ঘটিল। অয়ি ভদ্রে । উদারস্বভাব অন্ধমুনি যাহা বলিয়াছিলেন, এত দিনে আমার সেই ফলই ফলিয়াছে। এই কথা বলিয়াই রাজা দশরথ ক্ৰন্দন করিতে লাগিলেন এবং মরণ-ভয়ে ভীত হইয়া কৌশল্যাকে বলিলেন,— কৌশল্যে ! পুস্ত্ৰশোকে আমার প্রাণ বহির্গত হইবে বলিয়া, আমি আর তোমায় দেখিতে পাইতেছি না ; অতএব তুমি আমায় স্পর্শ কর। যমালয়ে যাইবার সময় লোকে আর কাহাকেও দেখিতে পায় না । রাম যদি আমায় একবারও নিজে বা অন্য কিছু দ্বারা স্পর্শ করিতেন কিংবা যদি তিনি যৌবরাজ্য ও ধনাগার গ্রহণ করেন, তাহা হইলে, বোধ হয়, আমি বঁচিতে পারিতাম। হে কল্যাণি ! আমি বৎস রামের প্রতি যে ব্যবহার করিয়াছি, তাহা আমার; কোন অংশেই শোভনীয় নহে। কিন্তু তিনি আমার প্রতি যে ব্যবহার করিয়াছেন, তাহা তাহারই উপযুক্ত হইয়াছে। পুত্র জ্বরাচার হইলেও কোন বিচক্ষণ ব্যক্তি তাহাকে ত্যাগ করিতে পারে ? যাহা হউক, দেবি ! আর আমি তোমায় দেখিতে পাইতেছি না, আমার স্মরণশক্তি লোপ পাইতেছে। ৫৮-৬৫ ঐ দেখ, কালদূত সকল আমাকে লইয়া যাইবার ত্বর দিতেছে । ইহা অপেক্ষা অধিক দুঃখ আর কি আছে যে, আমি মৃত্যুকালেও সত্যপরাক্রম ধৰ্ম্মজ্ঞ রামকে দেখিতে পাইলাম না ? সুর্য্যকিরণ যেমন অল্প সলিল শোষণ করিয়া থাকে, সেইরূপ সেই অনুপমকৰ্ম্ম রামের আদর্শন জন্য শোক আমার প্রাণ শোষণ করিতেছে। আহা ! যাহারা পঞ্চদশ বর্ষে পুনরায় রামের সুন্দর ও সুনিৰ্ম্মল কুণ্ডল-মণ্ডিত মুখমণ্ডল নিরীক্ষণ করিবে, তাহারা মনুষ্য নহে, তাহারা দেবতা। হে সুন্দরভ্রশালিনি। যাহারা ধন্থ, তাহারাই রামের সেই শোভন-প্ৰশালী, চারুনাসিক-সমন্বিত, পদ্মতুল্যলোচনবিরাজিত ও মনোহর-দন্ত-শোভিত প্রিয়দর্শন বদন দর্শন করিবেন। শরতের চন্দ্র এবং প্রফুল্ল