পাতা:বাল্মীকি রামায়ণ - উপেন্দ্রনাথ মুখোপাধ্যায়.pdf/২৮৩

এই পাতাটির মুদ্রণ সংশোধন করা প্রয়োজন।

O অযোধ্যাকাণ্ড অপ্রিয় স্বপ্ন দর্শন করিয়া অতিশয় পরিতপ্ত হইয়াছিলেন । র্তাহীর মনোমধ্যে অসুখ জম্মিয়াছে বুঝিতে পারিয়া, তদীয় প্রিয়বাদী বয়স্যগণ ঐ অসুখ নিবারণ জন্য সভামধ্যে নানাপ্রকার কথার প্রসঙ্গ করিলেন । র্তাহীদের মধ্যে কেহ তাছার শান্তির জন্য বীণাবাদন করিতে লাগিলেন, কেহ নৃত্য আরম্ভ করাষ্টয়া দিলেন, কেহ বা হাস্যরসপ্রধান নাটকাদি পাঠ করিতে লাগিলেন। ভরতকে আপনাদের পরম প্রতিভাজন বলিয়া, ঐ সকল বয়স্তের বিলক্ষণ বোধ ছিল। যাহা হউক, দশ জনে মিলিত হইয়া সচরাচর যেরূপ হাস্যপরিহাস করিয়া থাকে, তাহারা সেইরূপ হাস্যপরিহাস দ্বারাও রঘুনন্দন মহাত্মা ভরতকে কোন মতেই আনন্দিত করিতে পারিলেন না। তদর্শনে এক জন প্রিয়সগা মিত্রমণ্ডলীমণ্ডিত ভরতকে কহিলেন,—সথে ! স্থঙ্গদগণ নানা প্রকারে তোমার চিত্তবিনোদনের চেটা করিতেছেন, কি নিমিত্ত তুমি সে সকলে মন দিতেছ না ? তিনি এই কথা বলিলে, তদুত্তরে তাহকে و-الاسسوTaةTCة]ة ভাই ! আমি যে কারণে এরূপ ব্যাকুল হইয়াছি, শ্রবণ কর । —তামি গত রাত্রে স্বপ্নে দেখিয়াছি, পিতা দশরথ আলুলায়িত-কেশে মলিন-বেশে পৰ্ব্বতের শিখর হইতে গোময়পূর্ণ পঙ্কিল হ্রদে পতিত হইতেছেন, অনন্তর দেখিলাম, তিনি সেই গোময়-হ্রদে ভাসিতে ভাসিতে বারংবার যেন হাস্য করিয়া, অঞ্জলি দ্বারা তৈল পান করিতে লাগিলেন। তৎপরে তিনি পুনঃ পুনঃ তিলমিশ্রিত অন্ন ভোজন করিয়া, সর্ববঙ্গে ভরত তৈল মাখিয়া, তধোমস্তকে তৈলেই অবগাহন করিলেন । পুনরায় স্বপ্নে দেখিলাম, সাগর শুষ্ক হইয়াছে, চন্দ্রদেব ভূমিতে পতিত হইয়াছেন, সমুদায় পৃথিবী অন্ধকারে আচ্ছন্ন হইয়া যেন অন্তৰ্হিত হইয়াছেন ; রাজার বহনকারী হস্তীর দন্ত সকল ভগ্ন হইয়াছে, হুতাশন জ্বলিতে জ্বলিতে সহসা নিৰ্ব্বাণ శీS్చరీ হইয়াছেন, পৃথিবী বিদীর্ণ হইয়াছেন, বৃক্ষ সকল শুষ্ক হইয়াছে এবং পৰ্ব্বত সকল ছিন্নভিন্ন ও ধূম-সমন্বিত হইয়াছে। কৃষ্ণায়স-নিৰ্ম্মিত পীঠের উপরে উপবিষ্ট মলিনবসন রাজাকে কৃষ্ণ ও পিঙ্গল উভয় বর্ণ-মিশ্রিত স্ত্রীগণ প্রহার করিতেছে । ধৰ্ম্মাত্মা রাজা চরাপর হইয়া, রক্তমাল্য ও রক্তানুলেপন ধারণ-পূর্বক গৰ্দ্দভযোজিত রথে আরোহণ কবিয়া, দক্ষিণমুখে প্রস্থান করিতেছেন। আরও দেখিলাম, কোন বিকটবদন রাক্ষসী রক্তবস্ত্র পরিধান করিয়া, যেন হাটহাস্য করিতে করিতে রাজকে বলপূৰ্ব্বক অল-পাণ করিতে লাগিল । আমি এই রাত্রিতে এই প্রকার ভয়াবহ দুঃস্বপ্ন দর্শন করিয়াছি । নিশ্চয়ই বোধ হইতেছে, তামার বা রাজার কিংবা রামের, অথবা লক্ষণের মৃত্যু হইবে । যে ব্যক্তি স্বপ্নে গর্দভযোজিত রথে তারোহণ করিয়া গমন করে, অচিরাং চিতামধ্যে তাহর ধূমাগ্র দেখিতে পাওয়া যায়। এই জন্যই আমি নিতান্ত ব্যাকুল হইয়া উঠিয়াছি এবং তোমাদের কথায় প্রীতি অনুভব করিতে পারিতেছি না ; বলিতে কি, আমার অতিমাত্র কণ্ঠশোষ উপস্থিত এবং মনও নিতান্ত চঞ্চল হইতেছে । ভয়ের এই সমস্ত কারণ যদিও এখন দেখিতে পাইতেছি না, কিন্তু মনে যে ভয় জন্মিয়াছে, তাহা কোন মতেই দূর করিতে পারিতেছি না । তামার স্বর বিরুত হইয়ছে ও শারীরিক লাবণ্যপ্রভা নিম্প্রভ হইয়াছে এবং আমি কেন জন্মিয়াছি, ইত্যাদি প্রকারে আত্মকেও যেন নিন্দা করিতে আমার ইচ্ছা হইতেছে ; কিন্তু নিন্দার কারণ কিছুই দেখিতেছি না। পূর্বে কখন এইপ্রকার বিচিত্র দুঃস্বপ্ন মনেও ভাবি নাই ; সুতরাং উহা দেখিয়া অবধি রাজাকে আর দেখিতে পাইব কি না, চিন্তা করিয়া মনোমধ্যে যে গুরুতর উদ্বেগের সঞ্চার হইয়াছে, তাহা কোনও মতেই দূর হইতেছে না । সখে ।