পাতা:বাল্মীকি রামায়ণ - উপেন্দ্রনাথ মুখোপাধ্যায়.pdf/২৮৯

এই পাতাটির মুদ্রণ সংশোধন করা প্রয়োজন।

O অযোধ্যাকাও বিরহে চন্দ্রহীন আকাশ ও জলহীন সাগরের ন্যায় উহা শোভা পাইতেছে না । মহাবীর ভরত আপনার পরম সুকুমার মুখমণ্ডল বস্ত্রে আচ্ছাদিত করিয়া, রুদ্ধপ্রায়-কণ্ঠে অশ্রুবারি মোচন-পূর্বক নিতান্ত ব্যাকুলচিত্তে বিলাপ করিতে লাগিলেন । কুঠার দ্বারা কর্তিত হইয়া শালবৃক্ষের শাখা যেমন পতিত হইয়া থাকে, দেবসদৃশ ভরত পিতৃশোকে অভিভূত হইয়া সেইরূপে ভূমিতে পড়িয়া গেলেন দেখিয়া, কৈকেয়ী সেই চন্দ্র, স্বৰ্য্য ও মাতঙ্গসদৃশ তেজস্বী শোকাকুল পুত্রকে ভূতল হইতে উথিত করিয়া বলিতে লাগিলেন,-—১৫-২৩ হে সদাশয় রাজপুত্র! উঠ, উঠ, ভূমিতে শয়ন করি: কেন? ভবাদৃশ সাধু-সন্মত জনগণ কখনও শোক করেন না । হে বুদ্ধিসম্পন্ন ! সুৰ্য্যের প্রভার স্যায়, দান, যজ্ঞ, শাল, শ্রুতি ও তপস্যা-বিষয়িণী বুদ্ধি তোমাতে নিয়ত বিদ্যমান রহিয়াছে । অনন্তর বহু শোকা ক্রান্ত ভর ত অনেকক্ষণ রোদন ও ধরাতলে লুণ্ঠন-পূর্বক জননীকে প্রত্যুত্তর করিলেন,—মতঃ ! রাজা রামকে রাজ্য দিবেন এবং যজ্ঞ করিলেন, ইহা মনে করিয়া অামি পরম আহলাদে মাতামহের নিকট হইতে যাত্রা করিয়াছিলাম। কিন্তু এক্ষণে তাহার অন্যথা ভূত দেখিয়া আমার হৃদয় বিদীর্ণ হইতেছে। যিনি সর্ণবদাই প্রিয় ও হিত অনুষ্ঠান করিতেন, সেই পিতাকে দেখিতেছি না । মাতঃ ! আমার অনুপস্থিতিতে কোন রোগে তাহার প্রাণত্যাগ হইয়াছে ? রাম প্রভৃতি যাহারা স্বয়ং পিতৃদেবের সৎকার করিয়াছেন, র্তাহারাই ধন্য । আজ যে আমি এখানে আসিয়াছি, কীৰ্ত্তিমান মহারাজ দশরথ নিশ্চয়ই তাহা জানিতেছেন না। জানিলে তিনি সত্বর হইয়া আমার মস্তক সন্নত করিয়া আত্মাণ করিতেন । আহা ! অক্লিষ্টকৰ্ম্ম৷ পিতৃদেবের সেই মুখস্পর্শ হস্ত কোথায়? আমি ধূলিধূসরিত হইলে, তিনি সর্বদাই আমাকে সেই হস্ত দ্বারা পরিষ্কার করিয়া দিতেন । যিনি আমার २२39 ভ্ৰাত, পিতা ও বন্ধু এবং আমিও সাহার অভিমত দাস, এক্ষণে সেই অক্লিষ্টকৰ্ম্ম রামের নিকট শীঘ্রই সংবাদ করুন, আমি আসিয়াছি । যিনি ধাৰ্ম্মিক ও বিজ্ঞ, তাহার নিকট জ্যেষ্ঠ ভ্রাতা পিতৃতুল্য, আমি র্তাহার পাদ গ্রহণ করিব, তিনিই এখন আমার এক মাত্র আশ্রয়। আর্ঘ্যে ! ধৰ্ম্মজ্ঞ, ধৰ্ম্মশীল, মহাভাগ, সত্য বিক্রম, দৃঢ়ত্রত, রাজ পিতা দশরথ মৃত্যুকালে তামার বিষয় কি বলিয়া গিয়াছেন? শুনিতে ইচ্ছা করি। ২৪-৩৫ ভরত এই প্রকার জিজ্ঞাসা করিলে, কৈকেয়ী র্তাহাকে যথার্থ ঘটনা বলিলেন,—হ রাম ! হা সীতা ! হা লক্ষণ ! বলিয়া বিলাপ করিতে করিতে মতিমানদিগের শ্রেষ্ঠ মহাত্মা রাজা পরলোকগমন করিয়াছেন। মহাগজ যেমন পাশ দ্বারা বন্ধ হয়, তোমার পিতাও তেমনি কালধৰ্ম্মের বশবৰ্ত্তী হইয়া, মৃত্যুসময়ে এই শেষ কথা বলিয়ছিলেন। যাহারা সীতা ও লক্ষণের সহিত মহাবাহু রামকে পুনরায় সমাগত দেখিলে, তাহারাই কৃতাৰ্থ হইবে । কৈকেয়ী সেইরূপে অপর একটি তাপ্রিয় বার্তা বলিলে, ভরত অতিশয় মলিন হইয়া, তাহাকে জিজ্ঞাসা করিলেন,— মাতঃ ! কৌশল্যানন্দবৰ্দ্ধন ধৰ্ম্মাজা রাম ভ্রাতা ও ভাৰ্য্যার সহিত এখন কোথায় গিয়াছেন ? ভরত এই প্রকার জিজ্ঞাসা করিলে, তদীয় মাতা কৈকেয়ী যথাযথভাবে সমুদায় ঘটনা বলিবার উপক্রম করিলেন। ভাবিলেন, এই হাতি দারুণ অপ্রিয় কথায় ভরতের মনে অবশ্যই প্রীতি জন্মিবে। পুত্র । রাজপুল রাম বন্ধল পরিধান করিয়া লক্ষণ ও জানকীর সহিত দণ্ডকনামক মহাবনে গমন করিয়াছেন। এই কথা শুনিয়া, ভরত স্বীয় বংশের মাহাত্ম্য জানিতেন বলিয়া রামের চরিত্র বিষয়ে শঙ্কিত ও ত্রাসান্বিত হইয়া জননীকে জিজ্ঞাসা - করিলেন,*—রাম ত কোন ১। ভরত নিজ বংশের আচার নীতি সকলই জানিতেন, রাম কোনরূপ জুগুন্সিত কার্ধ না করিলে দণ্ডকারণে নিৰ্ব্বাসি ও ইষ্টতে পারেন না, তবে কি তিনি পূর্ব-পুরুষ জনমঞ্জের স্তায় কোন প্রজানিঃকর কার্য্য করিয়াছেন ? এই সকল বিষয় মনে করিয়াই ভরতের প্রশ্ন ।