পাতা:বাল্মীকি রামায়ণ - উপেন্দ্রনাথ মুখোপাধ্যায়.pdf/২৯৭

এই পাতাটির মুদ্রণ সংশোধন করা প্রয়োজন।

অযোধ্যাকাণ্ড হইয়া ভূমিতে পড়িয়া, পুনঃ পুনঃ নিশ্বাস ত্যাগ করত শোক করিয়াই সেই রাত্রি যাপন করিলেন । ৫৯-৬৫ ബ ষট সপ্ততিতম সর্গ কৈকেয়ীনন্দন ভরত এইপ্রকর শোকতাপে অভিভূত হইলে, বাগিশ্রেষ্ঠ বশিষ্ঠ ঋষি তাহাকে কহিলেন –হে পরমযশস্বী রাজনন্দন ! তোমার মঙ্গল হউক। বৃথা শোকে প্রয়োজন নাই। এক্ষণে সময় উপস্থিত ; অতএব উৎকৃষ্ট বিধানে রাজার অন্ত্যেষ্টিক্রিয়া সম্পাদন কর । ধৰ্ম্মজ্ঞ ভরত বশিষ্ঠদেবের কথা শুনিয়া, ভূতলে লুষ্ঠিত হইয়া, সান্টাঙ্গে প্ৰণিপাতপূর্বক যাবতীয় প্ৰেতকৰ্ম্ম নির্দলাহ করিতে প্রবৃন্ত হইলেন। তিনি তৈলপূর্ণ কটাহ হইতে রাজার মৃতদেহ উদ্ধত করিয়া, ভূমিতে সন্নিবেশিত করিলেন। বহুদিবস তৈলের মধ্যে থাকাতে রাজার বদনমণ্ডল ঈষৎ পীতবর্ণ হইয়াছিল ; তথাপি ভঁাহাকে যেন নিদ্রিত রহিয়াছেন বলিয়া বোধ হইতে লাগিল । অনন্তর ভরত সেই মৃত কলেবর বিবিধ রত্নমণ্ডিত উৎকৃষ্ট শয্যায় শয়তা করাইয়া, শোকভারাচ্ছন্ন-হৃদয়ে এই বলিয়া বিলাপ করিতে লাগিলেন,—রাজন ! আমি বিদেশে ছিলাম, তজ্জন্ত আসিতে পারি নাই । আপনি এই অবসরে কি মনে করিয়া ধৰ্ম্মজ্ঞ রাম ও মহাবল লক্ষণকে বনবাসী করিলেন ? মহারাজ ! অক্লিষ্টকৰ্ম্ম পুরুষসিংহ রামবিহীন এই দুঃখিত জনকে পরিত্যাগ করিয়া কোথায় যাইবেন ? অথবা তাত ! আৰ্য্য রাম বনে গিয়াছেন, আপনিও আবার স্বর্গে প্রস্থান করিলেন ; অতএব কোন ব্যক্তি ধৈৰ্য্যসহকারে আপনার এই রাজধানীর যোগ-ক্ষেমবিধান করিবেন ? রাজন। আপনার বিরহে পৃথিবী বিধবা হইলেন, হঁহার আর সে শোভা নাই। আপনার এই রাজধানীকে চন্দ্রহীন যামিনীর স্যায় আমার মনে হইতেছে। ১-৯ שግ ভরত দীন-মনে এইপ্রকার বিলাপ করিতে আরম্ভ করিলে, মহর্ষি বশিষ্ঠ পুনরায় তাহাকে কহিলেন,— হে মহাবাহো! এক্ষণে ধৈর্য্য-ধারণ-পূর্বক অবিচারিত-চিত্তে রাজার যাবতীয় কর্তব্য প্রেতকার্ঘ্য সম্পাদন কর। মহাত্মা ভরত যে আজ্ঞ বলিয়া বশিষ্ঠদেবের কথা মান্য করত ঋত্বিক (যিনি যজ্ঞবৃত হয়েন), পুরোহিত (যিনি সর্বপ্রকার হিতসাধন করেন) এবং আচার্ণ্য ( যিনি বেদ পড়ান ) ইহাদের সকলকেই এ বিষয়ে ত্বর প্রদান করিলেন। তখন রাজার অগ্নি গুহে যে যে, অগ্নি স্থাপিত ছিল, তৎসমস্ত বাহিরে আনয়নই করিয়া, পত্নিক ও যাজক-( উপদেষ্টা ) গণ যথাবিধানে তাহাতে হোম করিতে লাগিলেন । অনন্তর পরি চারকগণ চেতনাহীন রাজাকে শিবিকায় আরোহণ করাইয়া, নিতান্ত ক্ষুন্ন-হৃদয়ে সবাষ্পকণ্ঠে বহন করিয়া লইয়া চলিল। লোক সকল পথিমধ্যে বিবিধ বস্ত্র, স্বর্ণ ও রৌপ্য ছড়াইতে ছড়াইতে রাজার অগ্ৰে অগ্ৰে যাইতে লাগিল এবং ন্যান্যেরা চন্দন ও গুগগুলাদি, সরল ও পদ্মকাষ্ঠ এবং প্রচুর পরিমাণে দেবদারু আহরণ পূর্ববক অন্যান্য নানাপ্রকার গন্ধও চিতাগ্নিতে নিক্ষেপ করিতে আরম্ভ করিল। তানন্তর ঋত্বিকগণ চিতাস্থানে গমন করিয়া, চিতামধ্যে রাজার মৃতদেহ স্থাপন করিলেন । ঐ সময় রাজকীয় ঋত্বিকগণ রাজার পরলোক-শুদ্ধির নিমিত্ত অনলে তাহুতি দিয়া, তৎকালোচিত জপ ও সামগায়ী ব্রাহ্মণ সকল শাস্ত্রণমুসারে সামগান করিতে লাগিলেন । রাজার মহিষীগণ যথাযোগ্য যান ও শিবিক সকলে আরোহণ করিয়া, বৃন্ধগণে পরিবেষ্টিত হইয়া, নগর হইতে নিগমন-পূর্বক চিতাস্থানে গমন করিলেন । পরে ঋত্বিকগণ ও কৌশল্যা-প্রমুখ রাজমহিষীগণ অতীব শোক-তাপিত ১। "মন্থে চ ধৰ্ম্মকুতো চ শাস্তিকৰ্ম্মণি পৌষ্টিকে । অধ্বরে যশ্চ কুশল: স স্তাত্রাজপুরোহিতঃ” । “উপনীয় দদবেদমাচার্য: স উদাহৃতঃ” । ২। ভিতরে শব ছিল বলিয়া শ্রেীম অগ্নিসকল বাহিরে অনিয়া তাহাতে চরম প্রাস্থানিক হোম করিয়াছিলেন ।