পাতা:বাল্মীকি রামায়ণ - উপেন্দ্রনাথ মুখোপাধ্যায়.pdf/৩১১

এই পাতাটির মুদ্রণ সংশোধন করা প্রয়োজন।

चारधांशTांकां७ বলিয়া প্রতীত হইতেছে ; আমার অন্তঃকরণ মুগ্ধ হইতেছে, আমি যেন স্বপ্ন দেখিতেছি বোধ হুইতেছে । ১-১০ বুঝিলাম, কাল অপেক্ষ কোন দেবতাই বলবত্তর নছেন ; নতুবা রাম দশরথের আত্মজ হইয়াও ভূমিতে শয়ন করিলেন কেন ? এবং যিনি বিদেহপতি জনকের কন্যা ও দশরথের পরম মেহের পাত্রী পুত্রবধূ, সেই প্রিয়দর্শন সীতাকেও এই কালপ্রভাবে ভূমিতে শয়ন করিতে হইল। ভ্রাতা রামের এই শয্যা, এই তাহার পার্শ্ব-পরিবর্তনের মনোহর চিঙ্গ, এই কঠিন কৰ্কশ ভূমিতে তৃণসকল তাহার গাত্রসংস্পর্শে বিমদিত হইয়াছে। কল্যাণী সীতাও অলঙ্কত হইয়া এই শয্যায় শয়ন করিয়াছিলেন, বোধ হইতেছে ; কেন না, ইহার সৰ্ব্বত্রই স্বর্ণকণা সকল সংলগ্ন দৃষ্ট হইতেছে। সঙ্গর উত্তরীয় যে ইহাতে সংলগ্ন ছিল, তাহা স্পষ্ট বোধ হইতেছে ; কেন না, রেশমের সুতা সকল উহাতে সংলগ্ন হইয়া শোভা পাইতেছে। বুঝিলাম, স্বামী যে শয্যায় শয়ন করেন, তাহাই মহিলাগণের সুখদায়িনী। পতিব্ৰতা সীতা সুকুমারী হইয়াও ঈদৃশ কঠিন ভূমিশয়নে কিছুই দুঃখ বোধ করেন নাই। হায়! আমি হত হইলাম ! হায়! আমি কি নৃশংস ! আমারই জন্য রঘুনন্দন রাম ভাৰ্য্যার সহিত অনাথের স্যায় ঈদৃশী শয্যায় শয়ন করিয়াছিলেন । যিনি সার্বভৌম কুলে জন্মগ্রহণ করিয়াছেন, যিনি সৰ্বলোকের মুখবিধাতা ও সর্বলোকের প্রীতির পাত্র, যিনি প্রীতিপ্রদ অত্যুত্তম রাজ্য পরিত্যাগ করিয়া বনবাসী হইয়াছেন, র্যাহার কলেবর ইন্দীবর সদৃশ শ্যামল, লোচনযুগল রক্তবর্ণ এবং যিনি দেখিতে অতি মনোহর, ধিনি সর্বদাই সুখভোগ করিয়াছেন, কখন কষ্ট পাইবার উপযুক্ত নহেন, এক্ষণে, তিনি অত্যুৎকৃষ্ট ও পরম অভীষ্ট রাজ্য ত্যাগ করিয়া, ভূমিতে শয়ন করিলেন, ইহা অপেক্ষ আমার দুর্ভাগ্য ও দুঃখের বিষয় আর কি আছে । বিবিধ-শুভ-লক্ষণ-সম্পন্ন ২৫১ মহাবাহু লক্ষণই ধন্য ; যিনি সঙ্কটসময়ে ভ্রাতা রামের অনুবৰ্ত্তী হইয়াছেন। ১১-২০ আর জানকীও স্বামীর সঙ্গে বনগামিনী হইয়া নিশ্চয়ই সফলমনোরথ হইয়াছেন। আমরাই কেবল সেই মহাত্মা কর্তৃক বর্জিত হইয়া, সংশয়-দশায় পতিত হইলাম। এক্ষণে রাজার স্বৰ্গলাভ এবং রাম বনবাসী হওয়াতে সমুদায় পৃথিবী, কর্ণধারহীন নৌকার স্যায় শূন্য বলিয়া আমার বোধ হইতেছে । রাম অরণ্য আশ্রয় করিয়াছেন ; তথাপি এই পৃথিবী তাহারই ভুজবল-রক্ষিত বলিয়া, কেহ মনেও তাহার প্রার্থী হইতে পারিতেছে না। অধুনা যদিও এই অযোধ্যার প্রাচীর সকল রক্ষকহীন, গজ ও অশ্ব সকল স্বাধীনভাবাপন্ন, পুরদ্বার সকল অনাবৃত এবং সৈন্য সকল অপঙ্গষ্ট হইয়াছে এবং যদিও ইহার পূর্বের ন্যায় বল নাই, রক্ষা নাই ও আবরণ নাই ; কিন্তু রামের বাহুবর্ণ্যে রক্ষিত বলিয়া, ঈদৃশ সঙ্কটাপন্ন অযোধ্যাকেও বিষময় খাদ্যের ন্যায় শক্ৰগণ গ্রহণ করিতে সাহসী হইতেছে না। যাহা হউক, আজি হইতে আমি তৃণে বা ভূমিতে শয়ন করিব এবং জটাচীর ধারণ-পূর্বক নিত্য ফল-মূল ভক্ষণ করিব। আমি তাহার হইয়া নিজেই বনে থাকিব । ইহাতে আমার স্থখলাভ এবং র্তাহারও প্রতিজ্ঞাপালন হইবে । রামের জন্য বনবাসী হইলে শত্রুঘ্ন আমার সঙ্গে থাকিবেন এবং আর্য্য রাম লক্ষণের সহিত অযোধ্যার পালন করিবেন । দ্বিজাতিগণ সেই ককুৎস্থনন্দন রামকে অযোধ্য-রাজ্যে অভিষেক করিবেন। দেবতারা আমার এই মনোরথ সত্য করুন । স্বয়ং অবনতমস্তকে নানা প্রকারে প্রসন্ন করিয়া, যদি তিনি প্রতিশ্রুতি-প্রতিপালনে নিবৃত্ত না হন, তাহা হইলে আমি চিরকাল তাহার সঙ্গে বনে থাকিব ; তিনি কখনই আমাকে উপেক্ষ করিতে পরিবেন না । ২১-৩০