পাতা:বাল্মীকি রামায়ণ - উপেন্দ্রনাথ মুখোপাধ্যায়.pdf/৩১৬

ミむ\b অলঙ্কত, সুগন্ধি জলসিক্ত, চতুষ্কোণ, শয়ন-আসনযানযুক্ত, মনোহর-রস-সমুদয়-সমন্বিত, দিব্য ভোজনদ্রব্য ও বস্ত্রবিশিষ্ট ছিল। কৈকেয়ীনন্দন মহাবাহু ভরত মহর্ষির অনুজ্ঞায় সেই রত্ন-পরিপূর্ণ গৃহে প্রবেশ করিলেন । মন্ত্রিগণ সকলেই পুরোহিত বশিষ্ঠদেবের সহিত র্তাহার অনুগামী হইলেন এবং সেই গুহের গঠনাদি দর্শনে পরম প্রীতিলাভ করিলেন । তথায়নে রাজযোগ্য সিংহাসন, ছত্র ও চামর ছিল, ভরত মন্ত্রীদিগের সহিত তৎসমস্ত প্রদক্ষিণ করিলেন । সেই রাজাসন রামচন্দ্রের যোগ্য এবং তিনি তাহাতে অধিষ্ঠিত আছেন, ইহা ভাবিয়া, ভরত র্তাহাকে প্রণামপূর্বক তাহার পূজা করিলেন ; পরে বালব্যঞ্জন গ্রহণ করিয়া, মন্ত্রীর আসনে স্বয়ং আসীন হইলেন। তখন মন্ত্রিগণ ও পুরোহিত বশিষ্ঠদেব যথাযোগ্য আসনে উপবেশন করিলে, প্রথমে সেনাপতি, তৎপশ্চাৎ শিবিররক্ষক উপবিষ্ট হইলেন । ২৩-৪০ অনন্তর মুহূৰ্ত্তকালমধ্যেই পায়সরূপ কর্দমশালিনী নদী সকল মহৰ্ষির আদেশে ভরতের নিকট সমাগত হইল। ঐ নদীসমূহের উভয় কূলে শ্বেত মুত্তিকার (চুণের ) প্রলেপযুক্ত দিব্য রমণীয় গৃহ সকল শোভা পাইতেছে। ঐ গৃহসমূহ ভরদ্বাজের প্রসাদে সমুদ্ভূত হইয়াছে। অনন্তর সেই মুহূর্তেই ব্রহ্মা কর্তৃক প্রেরিত দিব্যাভরণ-ভূষিত বিংশতিসহস্র রমণী সমাগত হইল। তদ্ভিন্ন স্বয়ং কুবের কর্তৃক প্রেরিত বিংশতি সহস্ৰ স্ত্রী আগমন করিল ; তাহারা সকলেই মণি, মুক্ত, প্রবাল ও সুবর্ণে ভূষিত। যাহাদের দর্শনে লোকে বশীভূত ও উন্মত্তের স্যায় লক্ষিত হয়, তাদৃশী আপলরা সকলও নন্দন-কানন হইতে উপস্থিত হইল । অনন্তর সুৰ্য্যের স্যায় দীপ্তিমান নারদ, তুম্বুরু ও গোপ এই কিল গন্ধৰ্বর্বরাজ ভরতের সম্মুখে আসিয়া গান ৪ । এই নারদ ব্ৰহ্মপুত্র নারদ নহেন, ইনি দেবগন্ধৰ্ব্ব, ইহার উল্লেখ সৰ্ব্বদাই ভুরুঙ্কর সহিত দেখা যায়। ব্ৰহ্মার পুত্র নারদ পৰ্ব্বত-সহচর দেখা যায় । বাল্মীকি-রামায়ণ করিতে লাগিলেন এবং অলম্বুষা, মিশ্রকেশী, পুণ্ডরীকা ও বামন, ইহারা মহর্ষির আদেশক্রমে ভরতের সমীপে নৃত্য করিতে আরম্ভ করিল। প্রয়াগক্ষেত্র, চৈত্ররথ বন এবং নন্দন এই সকল স্থলে ষে মাল্যদাম প্রাপ্ত হওয়া যায়, তৎসমস্ত মহর্মির তেজে তথায় দেখিতে পাওয়া গেল। বিল্পবৃক্ষ সকল মৃদঙ্গবাদকের রূপ ধারণ, বিভীতক সকল তাল গ্রহণ ও অশ্বথ সকল নর্টকের বেশ পরিগ্রহপূর্বক তথায় বিরাজমান হইল। অনন্তর তাল, তমাল, তিলক ও দেবদারু সকল, কেহ কুজ ও কেহ বা বামনরূপে আগমন করিল। শিংশপা, আমলকী, জম্বু, তদ্ভিন্ন কাননস্থিত অন্যান্য লতা সকল প্রমদাশরীর ধারণপূর্বক ভরদ্বাজের আশ্রমে বাস করিল। মুরাপায়িগণ সুরাপান করিল ; ক্ষুধিত ব্যক্তি সকল পায়স ও পরম পবিত্র মাংস সকল, অথবা যাহার যে ইচ্ছা, সে তাহাই ভক্ষণ করিল। অনন্তর সাত আট জন নারী এক এক জন পুরুষকে মনোহর নদীতীরে উদ্বর্তন করাইয় স্বান করাইতে লাগিল। বিশাললোচনা বরাঙ্গনা সকল মাত পুরুষদিগের আর্দ্র অঙ্গ বস্ত্র দ্বারা মার্ভুিত করিয়া চরণসেবা করত সুধাপান করাইতে প্রবৃত্ত হইল। বাহন-পালকেরা উৎকৃষ্ট অশ্ব, গজ, উঃ ও বৃষদিগকে যথাবিধানে তাহদের ভোজ্য দ্রব্য ভোজন করাইতে লাগিল। তন্মধ্যে ইক্ষাকুবংশীয় প্রধান প্রধান যোদ্ধগণের যে সকল বাহন ছিল, মহাবল বাহনপালকগণ তাহাদিগকে ভক্ষণার্থ প্রেরণ করত ইক্ষু, মধু ও লাজ ভোজন করাইল। অশ্ব-বন্ধনকারী অশ্বের প্রতি এবং কুঞ্জরগ্রাহী গজের দিকে দৃষ্টি রাখে নাই। সেই সমস্ত সৈন্য মাদকদ্রব্য সেবনে মত্ত, মধুপানে প্রমত্ত এবং মুদিত হইয়া, তথায় সম্যক শোভিত হইল । এইরূপে সৈন্যগণ সর্বপ্রকার অভীষ্ট ভোগলাভে পরিতৃপ্ত, রক্তচন্দনে চর্চিত এবং অপরাগণে পরিবেষ্টিত হইয়া বলিতে লাগিল,—আমরা আর অযোধ্যায় যাইব না এবং দণ্ডকেও গমন করিব না।