পাতা:বাল্মীকি রামায়ণ - উপেন্দ্রনাথ মুখোপাধ্যায়.pdf/৩১৭

এই পাতাটির মুদ্রণ সংশোধন করা প্রয়োজন।

অযোধ্যাকাও ভরত কুশলে থাকুন এবং রামও মুখে থাকুন। গজারোহী, অশ্বারোহী, হস্তিরক্ষক ও অশ্বরক্ষক এবং পদাতি যোধগণ সকলেই তাদৃশ সৎকারলাভে স্বাধীনভাবাপন্ন হইয়া এই প্রকার বলিতে লাগিল । ৪১-৬০ লরতের অনুযাত্রিক সহস্ৰ সহস্ৰ লোক নিরতিশয় আহলাদিত হইয়া, ইহাই স্বৰ্গ’ বলিয়া, উচ্চৈঃস্বরে শব্দ করিতে লাগিল। মাল্যধারী সৈন্যগণ গীত ও হাস্য করিতে করিতে ইতস্তত: ধাবিত হইতে লাগিল । অমৃতোপম অন্ন ভক্ষণ করিয়া যদিও তাহারা পরম তৃপ্ত হইয়াছিল, তথাপি পরম উপাদেয় খাদ্য সকল দর্শন করিয়া আবার ভোজনে ইচ্ছা হইল। সৈনিকমণ্ডলে যে দাস, দাসী ও স্ত্রী ছিল, তাহারা সকলেই নুতন বস্ত্র পরিধান করিয়া অতিমাত্র প্রীতিলাভ করিল এবং অশ্ব, গজ, উঃ, গো, গর্দভ, মৃগ ও পক্ষিগণ সকলেই প্রচুর পরিমাণে আহার করাতে আর কোন দ্রবো মুখও দিল না। ফলতঃ তথায় ক্ষুধিত, মলিন, ধূলি-ধ্বস্ত-কেশ, অথবা মলিন পরিচ্ছদ পরিধান করিয়া আছে, এমন কোন ব্যক্তিই লক্ষিত হইল না। আমাদি ফলের কাথ-রস, আজ ও বরাহের মাংস, উৎকৃষ্ট ব্যঞ্জন ও বিবিধ-গন্ধরসপূর্ণ সুপ সকলে পূর্ণ রজত, স্বর্ণপাত্র সকল শুভ্রবর্ণ অন্নরাশির চতুর্দিকে বিচিত্র পুষ্পনিৰ্ম্মিত ধ্বজযুক্ত হইয়া শোভা পাইতেছিল, ইহা বিস্ময়পূর্ণ নয়নে ভরত-সৈন্যগণ দেখিয়াছিল। সেই পঞ্চ যোজনপরিমিত বন-ভূমির চতুষ্পার্থস্থ যাবতীয় কূপ সকল পায়সের কর্দমবিশিষ্ট ও গাভী সকল কামধেনু হইয়াছিল এবং যাবতীয় বৃক্ষ অনবরত মধু ক্ষরণ করিতে লাগিল। তদ্ভিন্ন বৃহৎ, বৃহৎ জলাশয় সকল মৈরেয় নামক মন্তে পূর্ণ এবং সম্যকরূপে উত্তপ্ত পাত্র সকল স্বপক্ক ও পরম পরিষ্কৃত মৃগ, ময়ুর ও কুকুটমাংসে পরিপূর্ণ ছিল । সহস্ৰ সহস্ৰ অন্নাথার-পাত্র, নিযুত নিযুত ব্যঞ্জনপূর্ণ স্থালী, অৰ্বদ অৰ্ব্বদ স্বর্ণময় হস্তপ্রক্ষালনপাত্র, কুন্তীস্থালী (জলপানপত্রবিশেষ) এবং স্বগন্ধযুক্ত পীতবর্ণ সুপক্ক তক্র ও দধিপূর্ণ করম্ভী VII ኟ® ግ ( দধিমন্থনপাত্ৰ ) সকল তথায় দেখা গিয়াছিল।* তত্ৰত্য হ্রদ সকলের মধ্যে কোন কোনটি তক্রে, কোন কোনটি দধিতে, কোন কোনটি দুগ্ধে এবং কোন কোনটি শর্করারাশিতে পূর্ণ হইয়া উঠিল । লোক সকল নদীসমূহের স্নানঘটে গিয়া দেখিতে পাইল, পাত্রমধ্যে আমলকাদির কন্ধ, সুগন্ধি চূর্ণ, স্নানার্থ উঞ্চোদক ও অন্যান্য দ্রব্য সকল রহিয়াছে। চাকচিক্যময় দন্তধাবন কাষ্ঠ, সমুদ্গক-(কেটাবিশেষ) মধ্যে বিশুদ্ধ ঘৃষ্ট চন্দন, সুমাজ্জিত দৰ্পণ, ধৌত বস্ত্ররাশি এবং সহস্ৰ সহস্ৰ চৰ্ম্মপাকা, অঞ্জনযুক্ত করণ্ডিকা, কঙ্কত ( কাকুই ), কুর্চ (যাহা দ্বারা শ্মশ্র মার্জন করা যায় , ছত্র, ধনু, কবচ, বিচিত্ৰ শয্যা ও আসন এবং ভূক্ত বস্তু জীৰ্ণ করিবার জন্য যাহা পান করা যায়, তাদৃশ রসপূর্ণ-হ্রদ সকল এবং অশ্ব, গজ, গর্দভ ও উষ্ট সকল অবতরণ ও অবগাহন করিতে পারে, ঈদৃশ হ্রদসমূহ ; তদ্ভিন্ন, তথায় পশুগণের ভক্ষণার্থ নীলবৈদূৰ্য্য-বর্ণ স্থকোমল তৃণরাশি প্রচুর পরিমাণে সজ্জিত রহিয়াছে, তাহদের দৃষ্টিগোচর হইল। মহর্ষি এইরূপে ভরতের যে আতিথ্য করিলেন, তাহা স্বপ্ন-সদৃশ নিতান্ত বিস্ময়াবহ দর্শন করিয়া লোকমাত্রেই আশ্চৰ্য্যাম্বিত হইল । নন্দন-বনে দেবতার। যেমন বিহার করেন, তক্রপ রমণীয় ভরদ্বাজাপ্রমে এই প্রকার আমোদআহলাদ করিতে করিতে তাহদের সেই রাত্রি অতিবাহিত হইয়া গেল। তখন সমাগত অপসরা ও গন্ধৰ্ব্বগণ এবং বরবর্ণিনী রমণী সকল ভরদ্বাজের অনুমতি লইয়া যথাস্থানে প্রতিগমন করিল। কিন্তু ভারতের অনুযায়ী লোক সকল সেইরূপই দৃপ্ত ও মদমত্ত এবং সেইরূপই দিব্য অগুরু চন্দনে চর্চিত ৫। তৎকলে উপাদেয় খাদ্য সকলের সম্বন্ধে যাহা বর্ণনায় পাওয়া যায়, বৰ্ত্তমানে উহার প্রচলন নাই ! আহারস্থান মগন্ধি পুপমালো অলঙ্কৃত হইত, মদ্য মাংস এবং নানারূপ পেয় জবাও ব্যবহার হইত ; নানাবিধ সুগন্ধি দ্রব্যে মুবাসিত ঘোল ও দধি দেওয়া হইত, শাঙ্গধরও ঐ হুগন্ধি দ্রবোর উল্লেখ করিয়াছেন। উষ্ণ উষ্ণ মাংস ভক্ষণ করিত বলিয়৷ পাকপাত্রেই রাখা হইত এবং অগ্নিতাপে উত্তপ্ত রাখা হইত।