পাতা:বাল্মীকি রামায়ণ - উপেন্দ্রনাথ মুখোপাধ্যায়.pdf/৩২৩

এই পাতাটির মুদ্রণ সংশোধন করা প্রয়োজন।

অযোধ্যাকাও কোথাও পুলিনশালিনী এবং কোথাও বা সিদ্ধগণে পরিব্যাপ্ত, অবলোকন কর। অয়ি ক্ষীণমধ্যমে ! এই সুবিপুল কুসুমরাশি কতকগুলি জলমধ্যে বায়ুভরে সঞ্চালিত এবং আর কতকগুলি জলের উপর ভাসমান হইতেছে, দেখ। কল্যাণি ! এ দিকে অবলোকন কর, চারুভাষী চক্রবাকসকল মধুর স্বরে শব্দ করিয়া পুলিনদেশে অধিরোহণ করিতেছে। অয়ি শোভনে । নগরে বাস এবং তোমায় দর্শন অপেক্ষাও আমার এই চিত্ৰকূট ও মন্দাকিনীদর্শনে মুখ উপলব্ধি হইয়া থাকে । তপস্যা ও শম-দম-সমন্বিত নিষ্পাপ সিদ্ধ পুরুষেরা নিত্য যাহার জলে অবগাহন করেন, এক্ষণে তুমি আমার সহিত সেই মন্দাকিনীতে অবগাহন কর । ভামিনি । রক্তোৎপল ও শ্বেতপদ্মসকল প্রক্ষেপ করত তুমি সখীর স্থায় এই মন্দাকিনীতে নিৰ্ভয়ে অবগাহন কর। সীতে ! তুমি ঐ হিংস্ৰজন্তুদিগকে পৌরজনের স্যায়, এই পৰ্ব্বতকে অযোধ্যার ন্যায় এবং এই মন্দাকিনীকে সরযুর ন্যায় মনে করিও। বৈদেহি! লক্ষণ পরম ধাৰ্ম্মিক ও আমার আজ্ঞা-প্রতিপালক ; তুমিও আমার অনুকূল ভাৰ্য্য, সৰ্ব্বদাই প্রতিসাধন করিয়া থাক। এইরূপে তোমাদের সহবাসে থাকিয়া, ত্রিসন্ধ্যা স্নান এবং মধুপান ও ফলমূল আহার করিতে পাইলে, আর আমার অযোধ্যায় বা রাজে। কিছুমাত্র স্পুহ হয় না । গঙ্গযুথ-কর্তৃক আলোড়িত, সিংহ, মাতঙ্গ ও বনের বানরগণ-কর্তৃক নিপীতসলিলা,পুষ্পিত বনশালিনী এবং কুসুমনিকর-বিভূষিত এই রমণীয়া নদীতে অবগাহন করিয়া যে ব্যক্তি সুখী ও ক্লান্তিহীন না হয়, তেমন লোকই নাই। রঘুবংশবৰ্দ্ধন রাম মন্দাকিনী-প্রসঙ্গে এইরূপ নানা বাক্য বলিতে বলিতে নয়নাঞ্চনপ্রভ রমণীয় চিত্ৰকূটে প্রিয়া সমভিব্যাহারে বিচরণ করিতে লাগিলেন। ১-১৯ ՀՆՏ) ষঃবতিতম সর্গ তৎকালে, রাম জনকনন্দিনী সীতাকে গিরিনদী মন্দাকিনী দর্শন করাইয়া, এবং মাংসবিশেষ প্রদর্শনে সীতার প্রীতি উৎপাদন করিয়া পৰ্ব্বতের একটি শিলার উপরে বসিয়াছিলেন। তিনি বলিতে লাগিলেন,— জনকি ! এই মাংস অতি পবিত্র, এই মাংস অতি স্বাদু এবং এই মাংস অগ্নিতে উত্তমরূপে পাক করা হইয়াছে । ধৰ্ম্মাত্মা রাম সীতার সহিত এইরূপে গিরিপ্রদেশে বসিয়া আছেন, এমন সময়ে তৎসমীপে গমনোন্মুখ ভরতের সৈন্যগণের পাদরেণু ও কোলাহল আকাশ ব্যাপিয়া প্রাদুর্ভূত হইল। এই অবসরে সেই সুবিপুল শব্দ শ্রবণে যুথপতি মত্ত হস্তী সকল ভীত ও ব্যাকুলিত হইয়া, দলে দলে চতুর্দিকে পলায়ন করিতে লাগিল। রঘুনন্দন রাম সৈন্য-সমুদ্ভূত শব্দ শ্রবণ করিয়াছিলেন এবং ধাবমান যুথপতি গজদিগকে ইতস্ততঃ পলায়ন করিতে অবলোকন করিলেন । যুথপতিদিগকে পলায়ন করিতে দেখিয়া এবং সেই মহাশব্দ শ্রবণ করিয়া, তিনি দীপ্ততেজা লক্ষণকে কহিলেন;–লক্ষণ ! সুমিত্রাদেবী তোমা কর্তৃক মুসন্তানবতী হইয়াছেন। এক্ষণে অবলোকন কর, ঐ ভয়ঙ্কর মেঘগজ্জনসদৃশ সুগভীর তুমুল শব্দ শুনা যাইতেছে। ঐ দেখ, এই গহন-কানন-সঞ্চারী মৃগ, মহিষ ও গজযুথ সিংহগণের সহিত নিতান্ত ভীত হইয়া সহসা দশদিকে পলায়ন করিতেছে। হে সৌমিত্রে ! কোন রাজা বা রাজপুত্র বনমধ্যে মৃগয়ায় আসিয়াছে, কিম্বা অন্য কোন হিংস্ৰজন্তু হইতে এরূপ উৎপাত হইতেছে কি না, তোমাকে জানিতে হইতেছে। হে লক্ষণ। এই চিত্ৰকূট পৰ্ব্বতে পক্ষীরাও অনায়াসে বিচরণ করিতে পারে না; অতএব ভুমি সমুদয় ঘটনা যথার্থরূপে জানিয়া আইস । ১-১০ তখন লক্ষণ অতি সত্বর কুম্বমিত এক শালবৃক্ষে আরোহণ করিয়া চতুৰ্দ্দিক নিরীক্ষণ পূর্বক পূর্বদিকে