পাতা:বাল্মীকি রামায়ণ - উপেন্দ্রনাথ মুখোপাধ্যায়.pdf/৩৩৮

এই পাতাটির মুদ্রণ সংশোধন করা প্রয়োজন।

:ፃbሥ রাম স্থণ্ডিলে উপবিষ্ট রহিয়াছেন । তদর্শনে তাহারা কৈকেয়ী ও অহিতকারিণী মন্থরাকে নিন্দ করিতে করিতে রামের সম্মুখে যাইয়া রোদন করিতে লাগিল। রাম তাহদের সকলকেই বাষ্পপূর্ণচক্ষে একান্ত দুঃখিত দেখিয়া, পিতামাতার স্যায় তালিঙ্গন করিলেন । আলিঙ্গনযোগ্য ব্যক্তিদিগকে আলিঙ্গন করিলে পর তাহারাও র্তাহাকে অভিবাদন করিল। তৎকালে নৃপায়জ রাম বয়স্ত ও বান্ধবগণের প্রতি যথাযোগ্য ব্যবহার করিলেন । অনন্তর সমবেত মহাত্মগণ রোদন করিতে আরম্ভ করিলে, মৃদঙ্গশব্দ সদৃশ মহান শব্দ সমুথিত হইয়া, আকাশ, পৃথিবী, গিরিগুহা ও দিঙ্কগুল প্রতিধ্বনিত করিয়া, শ্রবণগোচর হইতে লাগিল । ৪১-৪৯ চতুরধিকশততম সর্গ এ দিকে বশিষ্ঠদেব রামদর্শনে অভিলাষী হইয়া, দশরথের মহিষীদিগকে অগ্ৰে করিয়া গমন করিতে লাগিলেন । মন্দাকিনীর দিকে মন্দ মন্দ গমন করিতে করিতে মহিষীগণ রামলক্ষণ-সেবিত সেই নদীর অবতরণস্থান দেখিতে পাইলেন । তদর্শনে কৌশল্য শুষ্ক ও বাষ্পপূর্ণ মুখে অতিমাত্র ব্যাকুলভাবাপন্ন সুমিত্রা ও অন্যান্য রাজপত্নীদিগকে কহিলেন,—যাহার রাজ্য হইতে নিষ্কাশিত হইয়াছেন এবং র্যাহারা অক্লিষ্টকৰ্ম্ম, সেই অনাথ রাম, লক্ষণ ও সীতার এই ঘাট । র্তাহারা অতি কন্টে এই ঘাটে স্নানাদি করিয়া থাকেন । হে সুমিত্রে ! তোমার পুত্র লক্ষণ অনলস হইয়া, আমার পুত্রের নিমিত্ত এইখান হইতেই সর্বদা স্বহস্তে জল লইয়া থাকেন। কিন্তু এই প্রকার জুলানয়নাদি জঘন্য কাৰ্য্য করিলেও লক্ষণ নিন্দনীয় হইতে পারেন না ; ভ্রাতার যে বিষয়ের প্রয়োজন নাই, তাদৃশ কাৰ্য্যমাত্রই গৰ্হিত হইয়া থাকে। অথবা ভ্রাতার যাহাতে বাল্মীকি-রামায়ণ প্রয়োজন সিদ্ধ হয়, তাদৃশ কাৰ্য্য গুণযুক্ত বলিয়া কথিত হয়। অযোধ্যায় প্রত্যাবৃত্ত হইলে, দুঃখামুচিত লক্ষণকে আর এই সকল নীচজনোচিত কষ্টকর অনুষ্ঠান করিতে হইবে না। এইপ্রকার বলিতে বলিতে বিশাললোচনা কৌশল্য অবলোকন করিলেন, রাম পিতার উদ্দেশ্যে ইঙ্গুদী-বীজ পেষণ করিয়া যে পিণ্ড দিয়াছেন, তাহা তথায় ভূমিতে দক্ষিণাগ্র কুশে - পরি ন্যস্ত রহিয়াছে। এইরূপে রাম শোকাৰ্ত্ত হইয়া, পিতার উদ্দেশ্যে পিণ্ড নিক্ষেপ করিয়াছেন দেখিয়া, দেবী কৌশল্য সমুদায় দশরথপত্নীদিগকে সম্বোধন করিয়া কহিলেন;–১-৯ যিনি ইক্ষাকুগণের নাথ, সেই রাজা দশরথের উদ্দেশে রাম যথাবিধানে এই পিণ্ড দিয়াছেন, দেখ, সাক্ষাৎ দেবতুল্য ভুক্তভোগ সেই মহাত্মা দশরথের এই প্রকার ভোজন কোনমতেই উচিত বলিয়া বোধ হয় না। যিনি পৃথিবীতে সাক্ষাৎ ইন্দ্রসদৃশ এবং চতুঃসাগরান্তা মেদিনী সন্তোগ করিয়াছেন, সেই বসুধাধিপ কিরূপে ইঙ্গুদী-পিণ্ড ভক্ষণ করিবেন ? আহা ! ইহলোকে ইহা অপেক্ষ আমার দুঃখতর আর কিছুই বোধ হয় না যে, বুদ্ধিমান রামকেও পিতার উদ্দেশে ইঙ্গুদী-পিণ্ড দিতে হইল। রামের প্রদত্ত এই ইঙ্গুদী-পিণ্ড দেখিয়াও কি জন্য আমার হৃদয় দুঃখে এখনও সহস্র খণ্ডে বিদীর্ণ হইল না ? লোকে যে যাহা আহার করে, তাহার পিতৃদেবতারাও নিশ্চয় তাহাই আহার করেন, এই যে লৌকিকী শ্রুতি আছে, এক্ষণে তাহা সত্য বোধ হইতেছে । কৌশল্য এইরূপে ব্যাকুল হইয়া পড়িলে, তদীয় সপত্নীগণ র্তাহাকে আশ্বাস প্রদান-পূর্বক রামের আশ্রমে গমন করিয়া দেখিলেন, তিনি ভোগ-সুখে বঞ্চিত হইয়া, সাক্ষাৎ স্বৰ্গ-ভ্ৰষ্ট দেবতার স্বায় তথায় আসীন রহিয়াছেন। তদর্শনে তাহার শোককর্শিত ১। রাম ভরতের প্রার্থনায়ুসারে ফিরিয়া অযোধ্যায় গমন করিবেন, এই আশায় কৌশল্য ঐক্কপ বলিয়াছেন ।