পাতা:বাল্মীকি রামায়ণ - উপেন্দ্রনাথ মুখোপাধ্যায়.pdf/৩৪১

এই পাতাটির মুদ্রণ সংশোধন করা প্রয়োজন।

অযোধ্যাকাও পরে পৃথক পৃথক বিচলিত হইয়া থাকে, সেইরূপ পুত্র, পত্নী, জ্ঞাতি ও বিষয়-বিভব কিছু কালের জন্য পরস্পর মিলিত হইয়া, পুনরায় বিযুক্ত হইয়া যায়। এইরূপে এই দৃশ্যমান পদার্থসমূহের পরস্পর বিয়োগ স্থিরনিশ্চয় । ফলতঃ, জন্ম ও মৃত্যু সংসারের স্বভাব । কোন প্রাণীই তাহ অতিক্রম করিতে পারে না । তথন পরলোকগত পিতার জন্য শোক প্রকাশ করিয়া, তাহার প্রেতত্ব নিবারণ করিতে কাহার সমর্থ্য আছে ? পথিককে যেমন অগ্রগামী ব্যক্তিগণকে বলিতে হয়, আমিও তোমাদের অনুগমন করিব, সেইরূপ পূর্বপিতৃ-পিতামহের অনুস্থত পথে সকলকেই অবশ্য গমন করিতে হয় । কোনমতেই ইহার ব্যতিক্রম হয় না । এইরূপে যখন নিজেকে মরিতে হইবে, তখন মৃতের উদ্দেশে শোক করা কখনই উচিত নহে। প্রত্যাবৃত্তিরহিত স্রোতের ন্যায় বয়সও কেবল যাইতেছে, আর ফিরিয়া আসিতেছে না । ইহা দেখিয়া, আত্মাকে সুখসাধন ধৰ্ম্মকাণ্যে নিযুক্ত করা কৰ্ত্তব্য ; কেন না, সুখভোগ করিবার জন্য লোক সকলের জন্ম হইয়াছে। ভ্ৰাতঃ ! পিতাও আমাদের পরম ধাৰ্ম্মিক এবং সাধুগণের পূজনীয়। তিনি যথাবিধানে দান-দক্ষিণ সহকারে সমুদায় পবিত্র যজ্ঞ সম্পাদন করিয়া স্বর্ণে গমন করিয়াছেন ; সুতরাং তাহার জন্য শোক কৰ্ত্তব্য নহে। ২৩-৩২ পিতৃদেব জীর্ণ মানব-দেহ ত্যাগ করিয়া, নিশ্চয়ই ব্ৰহ্মলোকবিহারিণী দৈবী সমৃদ্ধি প্রাপ্ত হইয়াছেন। অতএব তাহার জন্য শোক করা তোমার ও অামার fায়, এইরূপ বুদ্ধিমান শাস্ত্রজ্ঞ ব্যক্তির কৰ্ত্তব্য নহে। তুমি ধীর ও বুদ্ধিমান ; তোমার এই প্রকার শোক, বিলাপ ও রোদন বর্জন করা অবশ্য কৰ্ত্তব্য । অতএব তুমি প্রকৃতিস্থ হও, আর শোক করিও না এবং অযোধ্যাপুরীতে গিয়া বাস কর। হে বাগ্নিশ্রেষ্ঠ ! সত্যপরতন্ত্র পিতৃদেব তোমাকে অযোধ্যায় বাস করিতে আদেশ করিয়া গিয়াছেন । সেই পুণ্যকৰ্ম্ম পরম \ON3 ૨છr> পূজনীয় পিতৃদেব আমাকে যেরূপ কাৰ্য্যে নিয়োগ করিয়াছেন, আমিও তাহাই করিব। হে শত্রুদমন । তাহার শাসন লঙ্ঘন করা আমার পক্ষে কোনক্রমেই ন্যায়ানুগত নহে । তোমারও সর্ণবদা তাহাকে মান্য করা কৰ্ত্তব্য ; কেন না, তিনি আমাদের পিতা, তিনিই আমাদের বন্ধু। ভরত ! আমি বনবাস দ্বারা ধৰ্ম্মচারী জনগণের অনুমোদিত সেই পিতৃবাক্য পালন করিধ। হে নরবর। মাহার পরলোক জয় করিতে অভিলাষ আছে, তাদৃশ ধাৰ্ম্মিক ও অনৃশংস ব্যক্তি অবশ্ব গুরুর বশবৰ্ত্তী হইবেন ! হে নরোত্তম । আমাদের পিতৃদেবের পবিত্র চরিত্র পর্ম্যালোচনা করিয়া, স্বীয় স্বভাব-গুণে নিজের পরলোক-হিতচিন্তায় প্রবৃত্ত হও । মহাত্মা রাম পিতার আজ্ঞা প্রতিপালনার্থ কনিষ্ঠ ভ্রাতা ভরতকে এইপ্রকার অর্থযুক্ত বাক্য বলিয়া মুহূৰ্বকাল ক্ষান্ত হইলেন । ৩৩-৪২ ষড়ধিকশততম সর্গ এইপ্রকার অর্থযুক্ত কথা বলিয়া রাম বিরত হইলে প্রজাবৎসল ধাৰ্ম্মিক রামকে ধৰ্ম্মাত্মা ভরত সমবেত লোক সকলের বিস্ময় উৎপাদন-পূর্বক ধৰ্ম্মসঙ্গত বাক্য বলিয়াছিলেন। হে বৈরিদমন। আপনি যেরূপ গুণশালী, এমন আর পৃথিবীতে কে আছে ? তাপনি দুঃখে ব্যথিত বা মুখেও হৰ্ষিত হন না। বৃদ্ধমাত্রেই আপনার বহু-মাননা করেন ; তথাপি ধৰ্ম্মবিষয়ে সন্দেহ উপস্থিত হইলে, আপনি র্তাহাদিগকে জিজ্ঞাসা করিয়া থাকেন। মৃতব্যক্তি যেমন স্ত্রী, পুত্র ও দেহ প্রভৃতির সম্বন্ধ-বিরহিত, জীবিত ব্যক্তিও তদ্রুপ ; অতএব মৃত ও জীবিত, এই উভয়ে কিছুই প্রভেদ নাই ; আবার অবিদ্যমান বিষয়ে যেমন রাগাদি জন্মে না, বিদ্যমান বস্তুতেও সুতরাং আপনি সৰ্ব্বজ্ঞ ও আপ্তকাম, এই জঙ্ক আপনার দুঃখ নাই ।