পাতা:বাল্মীকি রামায়ণ - উপেন্দ্রনাথ মুখোপাধ্যায়.pdf/৩৪৫

এই পাতাটির মুদ্রণ সংশোধন করা প্রয়োজন।

অযোধ্যাকাণ্ড জগতে কে কার বন্ধু ? কাহার দ্বারা কাহারই বা কি ইষ্টনিষ্ট হইয়া থাকে ? প্রাণিমাত্রেই একাকী জন্মগ্রহণ করে, আবার একাকীই বিনষ্ট হইয়া থাকে । অতএব রাম ! ইনি আমার মাতা, ইনি আমার পিতা, এইরূপ সম্বন্ধ নিবন্ধন যে ব্যক্তি তাহাতে আসক্ত হয়, তাহাকে উন্মত্তবৎ জ্ঞান কর ; ফলতঃ কেহই কাহারই নহে । যেমন কোন ব্যক্তি গ্রামান্তরগমন-সময়ে কোন গৃহের বহির্ভাগে বাস করে, পরদিন আবার তাহা ত্যাগ করিয়া প্রস্থান কবে, মনুমোর পিতা, মাতা, গৃহ ও ধনাদি বিভব ইত্যাদির সহিতও এই প্রকার ক্ষণস্থায়ী সম্বন্ধ ; সজ্জন ব্যক্তি এই জন্য সে সকলে আসক্ত হয়েন না। হে নরোত্তম! পৈতৃক রাজ্য একবারেই ত্যাগ করিয়া, বহু বিল্লময় ও বিনম দুঃখজনক বনমার্গ অবলম্বন করা তোমার কোনক্রমেই উচিত নহে। তুমি সমৃদ্ধিশালিনী অযোধ্যায় গমন করিয়া আপনাকে অভিষিক্ত কর। ঐ নগরী একবেণী-ধারিণী বিরহিণীর ন্যায় তোমার সমাগম প্রতীক্ষা করিয়া আছে। হে নৃপকুমার! এক্ষণে তুমি স্বর্গে ইন্দ্রের ন্যায় মহাই রাজভোগ সকল অনুভব করত অযোধ্যায় পরম সুখে বিহার কর । দশরথ তোমার কেহ নহেন, তুমিও তাহার কেহই নহ ; ফলতঃ রাজাও অন্ত, তুমি ও অন্য । অতএব যাহা কহিতেছি, তাহাই কর।৩ জীবের জন্ম বিষয়ে পিতা নিমিত্তকারণমাত্র ; ঋতুমতী মাতার গর্ভে একত্র মিলিত শুক্র ও শোণিতই ইহার উপাদান-কারণ। রাজা সেইখানেই গিয়াছেন—যেখানে তাহাকে নিশ্চয়ই গমন করিতে হইবে। স্বভাবের প্রেরণাই এইরূপ ; অতএব তুমি Rbr& প্রত্যক্ষসিদ্ধ পুরুষাৰ্থ প্রাপ্ত হইলেও যাহারা তাহ ত্যাগ করিয়া ধৰ্ম্মে নিযুক্ত হয়, তাহদের জন্যই আমার শোক হইয়া থাকে ; অন্যের জন্য নহে ; কেন না, ঐরূপ ধৰ্ম্মপরায়ণ ব্যক্তিগণ ইহলোকে কষ্ট পায় এবং পরলোকেও বিনাশ প্রাপ্ত হয়। 5 লোকে যে অষ্টকাশ্ৰান্ধকে পিতৃগণের পরমমঙ্গলকর ভাবিয়া, তদনুষ্ঠান করিয়া থাকে, তাহাতে কেবল রাশি রাশি অন্নের বিনাশ হয় মাত্র । বিচার করিয়া দেখ, মৃত ব্যক্তির কি কখন ভোজন সন্তবে ? অার যদি এক জন ভোজন করিলে অন্য জনের ভোজন সিদ্ধ হয়, তাহা হইলে প্রবাসগামী ব্যক্তিকে পাথেয় প্রদান করার কোন প্রয়োজন নাই। তাহার উদেশে তন্য ব্যক্তিকে ভোজন করাষ্টলেই সেই ভুক্ত তন্নে তাহার তৃপ্তি হইতে পারে। সুতরাং লোকে যে পিতৃগণের তৃপ্তির জন্য শ্রীপে দ্বিজগণকে ভোজন করায়, তাহ বৃথা শ্রমমাত্র। ফলতঃ অন্য উপায়ে জীবিকানিৰ্বাহ ক্লেশকর দেখিয়া, কতিপয় মেধাবী, লোকদিগকে কৌশলে বশীভূত করিয়া দান করাইবার জন্য তাহর উপায়স্বরূপ বেদাদি গ্ৰন্থ সকল প্রচার করিয়াছে এবং লোকদিগকে “যাগ কর, দান কর, তপস্যা কর, দীক্ষিত হও এবং সন্ন্যাসধৰ্ম্ম অবলম্বন কর, ইত্যাকার উপদেশ দিয়াছে। পামরদিগকে প্রতারণা এবং অনায়াসে তাহদের ধন গ্রহণ, ইহাই বেদাদি গ্রন্থের মর্থ্য প্রয়োজন । তুমি ধীমান, অতএব বিবেচনা করিয়া দেখ, ঐহিক ভিন্ন পরলোক-প্রয়োজন কিছুই নাই। যাহা প্রত্যক্ষ, তাহারই বিধান কর, মিছামিছি পুরুষাৰ্থ-ভোগে আপনাকে বঞ্চিত করিতেছ। যাহা অপ্রত্যক্ষ বা অনুমেয়, তাহাতে প্রবৃত্ত ৩ । এই কথাগুলির মধ্যে প্রচ্ছন্নভাবে ক্ষণভঙ্গবাদ রহিয়াছে, ক্ষণভঙ্গবাদ মানিলেও তৎপরম্পরা দ্বারা কোন সম্বন্ধ স্থাপিত হইতে পারে, নতুবা পিতা ভিন্নও পুত্রের উৎপত্তি হইতে পারিত। এই প্রশ্নের উত্তরে বলা যায়, পিণ্ড পুত্রের প্রতি নিমিত্তকারণমাত্র, উপাদানকারণ নহেন। পরবর্তী মোকে ইহা বিম্পষ্টভাবে বলা হইয়াছে, শুক্ৰ-শোণিতসম্বন্ধই উপাদানকারণ। ৪। মূলে অর্থধৰ্ম্মপরাঃ' এইরূপ আছে—ইহার অর্থ, যাহার প্রতাক্ষ মুখ তাগ করিয়া কেবল অর্থসম্পাদনপর অথবা ধৰ্ম্মসম্পাদনপর, অথবা অর্থ হইতে র্যাহারা ধৰ্ম্মকেই শ্রেষ্ঠ বলিয়। জানেন, উাহাদিগের জন্ত আমি অমুশোচনা করি ইত্যাদি । ইহার তাৎপর্যr এই যে— “যাবজীবেৎ স্বত্থং জীবেৎ ঋণং কৃত্ব বৃত্তং পিবেৎ। ।