পাতা:বাল্মীকি রামায়ণ - উপেন্দ্রনাথ মুখোপাধ্যায়.pdf/৩৫৫

এই পাতাটির মুদ্রণ সংশোধন করা প্রয়োজন।

অযোধ্যাকাও ঘটিয়াছে। মহাযুদ্ধে কবচ-সকল ছিন্নভিন্ন, বীরগণ নিহত এবং গজ, অশ্ব, রথ ও ধ্বজ সকল রুগ্ন হইলে আপদাপন্ন সেনা যেরূপ হইয়া থাকে, অযোধ্যা সেইরূপ হইয়াছে। অথবা, প্রবল বায়ুবেগে সাগরের উৰ্ম্মি যেন সফেনে ও সগর্জনে সমুখিত হইয়া পুনরায় বায়ুর উপশমে মন্দ মন্দ আন্দোলিত হইয়া নিঃশব্দে অবস্থিতি করিতেছে । অথবা যজ্ঞের অবসানে ঋত্বিকগণ ত্যাগ করিয়াছেন, ত্রুক্ক্রবাদি যজ্ঞীয় প্রশস্ত পাত্র সকল স্থানান্তরিত হইয়াছে এবং পূর্বের ন্যায় বেদপাঠাদি শব্দ ও আর শ্রত হইতেছে না, এই প্রকার অবস্থায় যেন যজ্ঞবেদি পতিত রহিয়াছে। অথবা বৃষ পরিত্যাগ করাতে, সেই তরুণ-বৃষপত্নী যেন ఫిసె(t জ্যা ( ধনুর ছিল ) যেন বলবান পুরুষগণের বাণপরম্পরায় ছিন্ন হইয়া ধনু হইতে ভূমিতলে স্বলিত হইয়াছে ; অথবা যুদ্ধোন্মত্ত অশ্বারোহি-কর্তৃক বলপূর্বক বাহিত অশ্ব যেন বিপক্ষ সৈন্তহস্তে নিহত হইয়া, রণভূমিতে নিপতিত হইয়াছে। ১-১৭ শ্ৰীমান দশরথনন্দন ভরত রথে অবস্থান করত সেই রধবরের পরিচালক সারথি সুমন্ত্রকে কহিলেন,— পূর্বে অযোধ্যায় যে দিগন্তপ্রসারী সুগভীর গীত ও বাদ্যশব্দ শুনা যাইত, তাজ কি জন্য তাহা শ্রত হুইতেছে না ? বারুণী, মদগন্ধ, মাল্য, চন্দন ও অগুরু এই সকলের গন্ধ আর পূর্বের স্থায় চতুদিক ব্যাপ্ত করিয়া প্রবাহিত হইতেছে না । তদীয় বিরহোৎকণ্ঠায় নিতান্ত ব্যাকুল হইয়া, নবীন তৃণ- এতদ্ভিন্ন উৎকৃষ্ট যানশব্দ, সুস্নিগ্ধ অশ্ব-গর্জন, প্রমত্ত ভক্ষণে বিরত ও আর্ন্ত হইয়া গোষ্ঠমধ্যে অবস্থিতি করিতেছে। অথবা মুক্তাবলী যেন পদ্মরাগ ও স্ফটিকাদি সুস্নিগ্ধ প্রভা-সমন্বিত ও উৎকৃষ্ট জাতীয় মণি সকলের বিয়োগদশা ভোগ করিতেছে ; পুণ্যের ক্ষয় হওয়াতে, তারা যেন সহসা স্বস্থান হইতে বিচলিত ও আকাশচু্যত হইয়া ধরাতলে নিক্ষিপ্ত হইয়াছে ; পূর্বের স্যায় তাহার আর সে সুবিস্তৃত প্রভা বা তেজস্বিতা নাই। অথবা বসন্তাবসানে মধুপান-মত্ত মধুকর যুক্ত বিকসিতপুষ্প বনলতা যেন প্রবলদাবাগ্নিবেষ্টিত হইয়া একবারেই অবসন্ন হইয়া পড়িয়াছে। রাজপথ সকল জনসঞ্চার-বিরহিত ও পণ্যবীথিকা সমুদয় সংরুদ্ধ হওয়ায়, অযোধ্যানগর প্রচ্ছন্ন চন্দ্রনক্ষত্ৰশালী মেঘসমাবৃত আকাশের সাদৃশ্ব ধারণ করিয়াছে। অথবা পানভূমি যেন মদ্যপায়িগণের বিরহে, মদ্যহীন ভগ্নপাত্রপরিবৃত ও অসংস্কৃত হইয়া অনাবৃত স্থানে অধিষ্ঠিত রহিয়াছে । অথবা কি চত্বরভূমি ( চাতলা), কি পানপাত্র, কি স্তম্ভ, সমুদায়ই ভগ্ন হইয়াছে; জলের আর লেশমাত্র নাই, এই প্রকার অবস্থায় যেন কোন জলছত্রশাল ভূগর্ভে নিহিত ও পতিত হইয়াছে। অথবা বিপুল, বিস্তৃত ও পাশযুক্ত মাতঙ্গ-ধ্বনি এবং সুবিপুল রথ-নিঃস্বনও আর শ্রবণপথে পতিত হয় না। আর্য্য রাম নির্নর্বাসিত হওয়াতে অযোধ্যার তরুণ পুরুষগণ শোক-সন্তপ্ত হইয়া চন্দন ও অগুরুগন্ধ এবং মহামূল্য মাল্য সকলও আর ধারণ বা গ্রহণ করিতেছে না। লোক সকলও আর পূর্বের ন্যায় বিচিত্র মাল্য ধারণ করিয়া বহির্ভাগে নিৰ্গত হয় না । সমুদায় নগরই রামের শোকে অভিভূত হওয়াতে পুরমধ্যে উৎসব-সকলও প্রবর্তিত হয় না। ফলতঃ, আৰ্য্য রাম বনে গিয়াছেন, নগরীর সমুদায় শোভা-সমৃদ্ধিও তাহার সঙ্গে গমন করিয়াছে। এক্ষণে বেগবান বু৪ি-ধারাচ্ছন্ন শরৎকালীন অথবা শুক্লপক্ষীয় রজনীর ন্যায় অযোধ্যার আর কিছুমাত্র শোভা বা সৌন্দৰ্য্য নাই। কত দিনে মদীয় ভ্রাতা আৰ্য্য রাম মহোৎসবের স্যায় পুনরায় এখানে আগমন করিবেন ? কত দিনে আবার তিনি গ্রীষ্মকালের মেঘের স্যায় অযোধ্যায় সমুদিত হইয়া, সকলেরই হর্ষ সমুৎপাদন করিবেন ? অযোধ্যায় আর পূর্বের স্যায় তরুণ পুরুষগণ সুন্দর বেশে সজ্জিত হইয়া, উদ্ধত-গমনে ইতস্ততঃ সঞ্চরণ করিয়া, প্রধান প্রধান রাজপথ-সকলের শোভা বিস্তার করে না। সারথির সহিত এইপ্রকার