পাতা:বাল্মীকি রামায়ণ - উপেন্দ্রনাথ মুখোপাধ্যায়.pdf/৩৬২

এই পাতাটির মুদ্রণ সংশোধন করা প্রয়োজন।

S) е е কামপরতন্ত্রহীদয়া, অসতী কামিনীগণ—যাহারা ভরণপোষণার্থ কেবল ভৰ্ত্তাকে নাথ বলিয়া থাকে, তাহার ঐ প্রকার গুণদোষ অবগত নহে। হে মৈথিলি ! উল্লিখিত নিকৃষ্ট-গুণশালিনী কামিনীগণ নিশ্চয়ই অকার্য্যের বশীভূত হইয়া যুগপৎ যশ ও ধৰ্ম্মভ্ৰষ্ট হইয়া থাকে । কিন্তু যাহার তোমার স্যায় গুণগ্রামে বিভূষিত এবং লোকে যাহা কিছু উৎকৃষ্ট ও অপকৃষ্ট সমস্তই জ্ঞানগোচর করিয়াছে, তাদৃশ রমণীরা প্রকৃত পুণ্যশীলের স্যায় স্বর্গেই বিচরণ করেন। অতএব তুমি পতিব্ৰত কামিনীগণের নিয়মানুসারিণী হইয়া সৎপথ অবলম্বন-পূর্বক সৰ্ব্বদা স্বামীর সহধৰ্ম্মচারিণী হও ; তাহা হইলে যশ ও ধৰ্ম্ম উভয়ই প্রাপ্ত হইবে । ১৫-২৯ অষ্টাদশোত্তরশততম সর্গ অস্থয়াবর্জিত জনকনন্দিনী সীতা অনসুয়াকর্তৃক এইরূপ কথিত হইয়া, অনস্বয়ার বাক্য অভিনন্দন করিয়া ধীরে ধীরে বলিতে লাগিলেন,—আপনি যে উপদেশ করিলেন, পতিই স্ত্রীলোকের গুরু, ইহা আপনার পক্ষে আশ্চৰ্য্য নহে। আমিও ইহা বিদিত আছি। যদি আমার এই স্বামী দরিদ্র ও অসচ্চরিত্র হইতেন, তাহা হইলেও মামার যখন তাহার প্রতি দ্বৈধভাব পরিহার-পূর্বক সদয় ব্যবহার করা মাদৃশ রমণীগণের অবগু কৰ্ত্তব্য, তখন যে স্বামী জিতেন্দ্রিয়, স্থিরানুরাগ, অতিশয় ধৰ্ম্মনিষ্ঠ, পিতা ও মাতার স্যায় বিরতিশয় প্রীতিমান এবং শ্লাঘ্যগুণসম্পন্ন, তাহার প্রতি যে সমুচিত ব্যবহার করিতেছি, তাহ বিচিত্র কি ? মহাবল রাম আৰ্য্যা কৌশল্যার প্রতি যে প্রকার ব্যবহার করেন, অষ্ঠাষ্ঠ রাজমহিষীগণের প্রতিও তদনুরূপ ব্যবহার করিয়া থাকেন। এমন কি, রাজা দশরথ একবারমাত্রও যে স্ত্রীর প্রতি দৃষ্টিপাত করিয়াছেন, নৃপবংসল বীরবর ধৰ্ম্মজ্ঞ রাম অভিমান বাল্মীকি-রামায়ণ পরিত্যাগ করিয়া সে স্ত্রীকেও মাতৃবং ব্যবহার করিয়া থাকেন । আমি যখন এই ভয়াবহ বিজন কাননে আগমন করি, তখন শ্বশ্রী কৌশল্যাও আপনার স্যায় যে উপদেশ প্রদান করেন, তাহা আমার হৃদয়ে স্থিরভাবে বর্তমান রহিয়াছে। পূর্বে বিবাহকালে অগ্নির সমক্ষে মদীয় জননী যাহা উপদেশ করেন, তাহাও আমি মনে করিয়া রাখিয়াছি । অয়ি ধৰ্ম্মচারিণি ! পতিসেবা ভিন্ন অদ্যবিধ তপস্যা স্ত্রীগণের বিহিত নহে ইত্যাদি, মদীয় আত্মীয়বর্গ যে সকল উপদেশ করিয়াছেন, আমি তাহার কিছুই বিস্মৃত হই নাই। সাবিত্রী পতিশুশ্ৰষা করিয়া স্বগে বাস করিতেছেন। আপনিও সাবিত্রী-সদৃশ-চরিত্র ; সুতরাং স্বামি-সেবাবশতঃ স্বর্গে গমন করিবেন। সকল রমণীর শ্রেষ্ঠ ও স্বৰ্গীয় দেবতা রোহিণীকেও এক মুহূৰ্ত্ত চন্দ্র-বিনা দেখিতে পাওয়া যায় না। এইরূপে বরণীয়া রমণীগণ স্বামীর প্রতি দৃঢ়ভক্তিসম্পন্ন হইয়া সকলেই স্বামিসেবারূপ স্ব স্ব পুণ্যকৰ্ম্ম-প্রভাবে স্বগে বাস করিয়া থাকেন । ১-১২ তখন অনসূয়া সীতার বাক্য শ্রবণে অতিশয় হৃষ্ট হইয়া সীতার মস্তক অাত্রাণ করিয়া আহলাদিত করিতে করিতে বলিলেন,—আমি নানাপ্রকার নিয়মানুষ্ঠান দ্বারা যে তপস্যা সঞ্চয় করিয়াছি, অয়ি শুচিস্মিতে জনকনন্দিনি ! সেই তপোবলে তোমাকে এক্ষণে বরদান করিতে ইচ্ছা করি । মৈথিলি । তোমার বাক্য যেরূপ যুক্তিযুক্ত, সেইরূপ অতিমাত্র পবিত্র। ইহাতে আমি অতিশয় সস্তুষ্ট হইয়াছি। অতএব বল, তোমার কি প্রিয়কাৰ্য্য করিব ? জনকনন্দিনী, তপোবল-সমন্বিতা অনস্বয়ার কথা শ্রবণে বিস্মিত হইয়া, মৃদুহান্ত সহকারে তাহাকে কহিলেন, আপনার অনুগ্রহেই আমার সমস্ত কামনা পূর্ণ হইয়াছে ধৰ্ম্মজ্ঞা অনস্বয়া এই কথায় আরও ১। আমার সকল কামনাই পূর্ণ আছে, কিছু করিবার নাই, ইহাই সাতোক্তির ভাষার্থ।