পাতা:বাল্মীকি রামায়ণ - উপেন্দ্রনাথ মুখোপাধ্যায়.pdf/৩৬৪

এই পাতাটির মুদ্রণ সংশোধন করা প্রয়োজন।

७ ● ३ হইলেন ; পোতহীন বণিকের ন্যায় কোনরূপেই পার প্রাপ্ত হইলেন না। আমি অযোনিসস্তুবা জানিয়া, তিনি অনেক চিন্তা করিয়াও কুত্ৰাপি আমার সদৃশ বা অনুরূপ পাত্র প্রাপ্ত হইলেন না ; তজ্জন্ত সৰ্ব্বদাই চিন্তা করেন। অনন্তর তাহার মনে উপস্থিত হইল, ধৰ্ম্মানুসারে কন্যার স্বয়ম্বরবিধান করিব। ২৪-৩৮ ইতিপূর্বে মহাত্মা বরুণ জনকের পূর্বপুরুষ দেবরাতকে দেবগণের প্রার্থনায় দক্ষযজ্ঞে শিবের প্রসাদে লব্ধ উৎকৃষ্ট ধনু এবং অক্ষয় সায়কপূর্ণ তুণীরদ্বয় প্রদান করিয়াছিলেন। ঐ ধনু এ প্রকার ভারশালী যে, মনুষ্যেরা যত্ন করিয়াও চালনা করিতে পারে না এবং নরপতিগণ স্বপ্নেও যাহাকে নত করিতে সমর্থ হয়েন না,পিতৃদেব সত্যবাদী জনক উত্তরাধিকারসুত্রে সেই ধনু প্রাপ্ত হয়েন । তিনি রাজাদিগকে প্রথমে নিমন্ত্রণ-পূর্বক একত্রিত করিয়া, তাহদের সাক্ষাতে কহিলেন,—আপনাদের মধ্যে যিনি এই ধনু উত্তোলন করিয়া জাযুক্ত করিবেন, আমার দুহিত। র্তাহারই ভাৰ্য্যা হইবে, ইহাতে সংশয় নাই । নরপতিগণ সেই শৈলসম ভারবিশিষ্ট ঐ ধনুরত্ব দর্শন করিয়া তাহার চালনার্থ উদ্যত হইলেন ; কিন্তু সফলকাম হইতে না পারিয়া অভিবাদন করিয়া চলিয়া গেলেন । অনন্তর বহুকালের পর এই মহাদু্যতি রাম বিশ্বামিত্রের সহিত পিতার যজ্ঞ দর্শনার্থ সমাগত হইলেন। পিতৃদেব জনক, ভ্রাত লক্ষণের সহিত সমবেত সত্যপরাক্রম রাম এবং ধৰ্ম্মায়ু বিশ্বামিত্ৰ সকলেরই সবিশেষ পূজা করিলেন। পরে বিশ্বামিত্র পিতৃদেব জনককে তথায় বলিলেন, এই রাম ও লক্ষণ রাজা দশরথের পুত্র, আপনার ধনু দর্শন করিতে অভিলাষী আছেন। মহর্ষি এই প্রকার কহিলে জনক দেবদত্ত ধনু আনয়ন করিয়া রাজপুত্র রামকে দর্শন করাইলেন। মহাবল বীৰ্য্যবান রাম নিমেষমাত্রেই ঐ ধনু অবনত ও জ্যাযুক্ত করিয়া তৎক্ষণাৎ আকর্ষণ করিলেন । বেগভরে অাকর্ষণ কৱিৰামাত্র সেই মহৎ ধনু দুই খণ্ডে ভাঙ্গিয়া গেল । বাল্মীকি-রামায়ণ তাহাতে ভয়ানক বজ্রপাতসদৃশ শব্দ সমুখিত হইল । তৎক্ষণাৎ সত্যপ্রতিজ্ঞ পিতৃদেব অত্যুৎকৃষ্ট জলপাত্র গ্রহণ করিয়া আমাকে রামের হস্তে সম্প্রদান করিতে উদ্যত হইলেন। কিন্তু রাম পিতা দশরথের অভিপ্রায় না জানিয়া আমাকে গ্রহণ করিতে সম্মত হইলেন না। পরিশেষে পিতা আমার শ্বশুর বুদ্ধ রাজা দশরথকে আহবান করিয়া, তাহার মতানুসারে আমাকে এই সর্বলোকবিখ্যাত রামের হস্তে সম্প্রদান করিলেন এবং আমার কনিষ্ঠ ভগিনী সাধবী শুভদর্শন উৰ্ম্মিলাকে লক্ষণের করে সম্প্রদান করিলেন । তদবধি সেই স্বয়ম্বরে আমি রামের সহিত পরিণীত হইয়া, ধৰ্ম্মানুসারে পতির প্রতি অনুরক্ত রছিয়াছি । ৩৯-৫৪ একোনবিংশোত্তরশততম সর্গ ধৰ্ম্মজ্ঞা অনসূয় এই মহতী কথা শ্রবণ করিয়া মস্তকাম্ৰাণ-পূর্বক বাহুযুগল দ্বারা জানকীকে আলিজন করত কহিলেন,—স্বয়ম্বর যেরূপে ঘটিয়াছিল, সমস্তই পরিস্ফুট পদযুক্ত বিচিত্র মধুর বাক্যে বর্ণন করিলে, অয়ি মধুরভাষিণি! এক্ষণে সূৰ্য্যদেব অস্তাচলে যাইতেছেন ; রজনীও উপস্থিতপ্রায়। বিহঙ্গগণ সমস্ত দিন আহারের অন্বেষণে দিকে দিকে বিচরণ করিয়া, সন্ধ্যা উপস্থিত হইয়াছেদেখিয়া, নিদ্রা যাইবার নিমিত্ত স্ব স্ব নীড়ে যাইবার জন্য যে শব্দ করিতেছে, উহাশুনা যাইতেছে। ঐ দেখ, মুনিগণ স্নান করিয়া আর্দ্রশরীরে জলকলস হস্তে পরস্পর মিলিত হইয়া আশ্রমে প্রত্যাবৰ্ত্তন করিতেছেন। উ-হাদের বন্ধল সলিলে অভিষিক্ত হইয়াছে। ঋষিগণ বিধিপূর্বক অগ্নিহোত্রে হোম করাতে কপোতকণ্ঠবং অরুণবর্ণ ধুম সকল বায়ুবেগে আকাশপথে উখিত হইতেছে দেখা যাইতেছে। চক্ষুরাদি ইন্দ্রিয়ের দূরবর্তী প্রদেশে বিরলপল্লব তরুগণও যেন ঘনীভূতের স্থায় দিক সকলকে