পাতা:বাল্মীকি রামায়ণ - উপেন্দ্রনাথ মুখোপাধ্যায়.pdf/৩৯০

এই পাতাটির মুদ্রণ সংশোধন করা প্রয়োজন।

●ネb সুখকর হইয়াছে। আতপস্পর্শে মুখ অনুভূত হইয়া থাকে। এক্ষণে সুৰ্য্য সকলেরই মুখসেব্য এবং ছায়া ও জল একবারেই অসেব্য হইয়া উঠিয়াছে। অধুনা সুৰ্য্যের আর সে তেজ নাই ; নীহারাবৃত হওয়াতে প্রভূত শীত হইয়াছে ; সুতরাং প্রাণিমাত্রেই জড়ীভূত হওয়ায় অরণ্য সকলও শূন্যপ্রায় হইয়াছে। প্রাতঃকাল হিমগ্ৰস্ত হইয়া প্রকাশিত হইতেছে। পুষ্যা নক্ষত্রযুক্ত এই পৌষমাসে হিম-প্রযুক্ত ধূসরবর্ণ রজনীতে অনাবৃত প্রদেশে শয়ন নিবৃত্ত হইয়াছে। অধুনা রজনী সকল শীত-প্রযুক্ত বৰ্দ্ধিত হইয়া অতিবাহিত হইতেছে। সুৰ্য্য মন্দরশ্মি হওয়ায় চন্দ্রের যাহা কিছু সৌভাগ্য, তাহ সুর্ঘ্যে সংক্রমিত হইয়াছে, চন্দ্রের চতুদিকে অরুণবর্ণ তুষারাচ্ছন্ন মণ্ডল প্রকাশ পাওয়ায় নিশ্বাস-মলিন দর্পণের স্যায় চন্দ্র আর সেরূপ প্রকাশ পাইতেছে না। তুষারমলিন হওয়াতে জ্যোৎস্না আর পৌর্ণমালী-রজনীতেও স্ফৰ্ত্তিমতী হয় না এবং আতপ-প্রযুক্ত নিতান্ত বিবর্ণ সীতা দেবীর ন্যায় সত্তামাত্রে পরিণত হইয়াছে ; আর ইহার সে শোভা নাই। স্বভাবতঃ শীতলস্পর্শ পশ্চিম-বায়ু সম্প্রতি হিমে আচ্ছন্ন ও তৎপ্রযুক্ত দ্বিগুণ শীতল হইয়া প্রবাহিত হইতেছে। ১-১৫ যব ও গোধুমপূর্ণ বাষ্পাচ্ছন্ন অরণ্য সকল, স্বৰ্য্য উদিত হইলে, শব্দায়মান সারস ও ক্রৌঞ্চসমূহে পরিব্যাপ্ত হইয়া শোভা বিস্তীর করিয়া থাকে। স্বর্ণবর্ণ শালিসমূহ, খৰ্জ্জুরপুষ্পের ন্যায়, তণ্ডুলপূর্ণ মস্তক দ্বারা কিঞ্চিৎ অবনত হইয়া বিরাজমান হইতেছে। সুৰ্য্য উদ্ধে উত্থিত হইয়া, চন্দ্রের স্যায় লক্ষিত হয়েন ; কেন না, ইতস্ততঃ বিস্তৃত তদীয় কিরণসমূহ হিমাচ্ছন্ন হইঃ রহিয়াছে। রৌদ্রের তেজ পূর্বাহ্লে প্রায়ই থাকে না ; মধ্যাঙ্গে স্পর্শ করিলে স্থখবোধ হয় এবং বর্ণ ঈষৎ পাণ্ডু হওয়াতে পৃথিবীতে সংসজ হইয়া উহা শোভা পাইতে থাকে। প্রভাতে শিশিরবিন্দুপাতে হরিদ্বর্ণ তৃণস্থলী ঈষৎ বাল্মীকি-রামায়ণ অর্জ হইয়া উঠিয়াছে। তাহাতে তরুণাতপ প্রতিফলিত হওয়াতে বনভূমির শোভার সীমা নাই। বন্তহস্তী নিতান্ত পিপাসিত হইলেও শীতল সলিল স্পর্শমাত্র তৎক্ষণাৎ শুণ্ড সংকোচ করিয়া থাকে। ভীরু লোক যেমন যুদ্ধে প্রবেশ করে না, সেইরূপ ঐ জলচর পক্ষিগণ জলসমীপে উপবিষ্ট থাকিয়াও কোনমতেই সলিলে অবগাহন করিতেছে না। পুষ্পশূন্ত বনরাজি রাত্রিতে শিশির ও তন্ধকারে আচ্ছন্ন এবং প্রভাতে কুজ বটিকাতিমিরে গাঢ়বিদ্ধ হওয়াতে বোধ হল, যেন প্রমুপ্ত রহিয়াছে। নদী সকলের জল বাম্পের দ্বারা আচ্ছন্ন, তীরস্থিত সারসগণ শব্দের দ্বারাই অনুমিত হয়, পুলিনের বালুক আৰ্দ্ৰ, এইরূপে নদী সকল শোভা প্রাপ্ত হইতেছে। তুষার পতিত ও সুৰ্য্যের তেজ মৃদু হওয়াতে শৈত্যবশতঃ পৰ্ব্বতের অগ্রভাগস্থ জলও প্রায় বিষবৎ হইয়া উঠিয়াছে। ১৬-২৫ অধুনা জরাবশতঃ পত্র সকল জর্জরিত-কেশর ও কণিকা সকল বিশীর্ণ এবং হিমগ্ৰস্ত হওয়াতে কমল সকল নালমাত্রে অবশিষ্ট হওয়ায়, কমলাকর সরোবরে আর শোভা পাইতেছে না। হে পুরুষশ্রেষ্ঠ ! এই দারুণ হেমন্তকালে ধৰ্ম্মাত্মা ভরত আপনার প্রতি ভক্তিবশতঃ নগরে থাকিয়াও, দুঃখভার বহন-পূর্বক তপস্যাচরণ করিতেছেন এবং রাজ্য, মান ও নানাবিধ রাজ্যেচিত মুখ পরিত্যাগ করিয়া, অtহারসংযম-পূর্বক তপস্বী হইয়া, সুশীতল ভূমিভলে শয়ন করিতেছেন । তিনি নিশ্চয় প্রতিদিন এই সময়ে নিরালস্ত ও অমাত্যবর্গে পরিবৃত হইয়া, সরঘুনদীতে স্নান করিতে গমন করেন। তিনি স্বভাবতঃ সুকুমার ও পরম মুখে সংবদ্ধিত হইয়াছেন। কিরূপে হিমাদ্রিত হইয়া, শেষ রাত্রে সরযুসলিলে অবগাহন করিতেছেন ? আৰ্য্য ! সেই পদ্মপলাশলোচন, শু্যামবর্ণ, মহত্বসম্পন্ন, শাস্তস্বভাব, দীর্ঘবাহু, জিতেন্দ্রিয়, ধৰ্ম্মজ্ঞ, সত্যবাদী, প্রিয়ভাষী, আরিদমন এবং লজ্জাশীল শ্ৰীমান ভরত সমুদায় ভোগমুখে