পাতা:বাল্মীকি রামায়ণ - উপেন্দ্রনাথ মুখোপাধ্যায়.pdf/৪০৩

এই পাতাটির মুদ্রণ সংশোধন করা প্রয়োজন।

Q আরণ্যকাণ্ড হইয়া থাকে, অক্লিষ্টকৰ্ম্মা রামের রূপও সেইরূপ অপ্রতিম হইয়া উঠিল । সমাগত দেব, গন্ধৰ্ব্ব ও চারণগণ পরস্পর কথোপকথন করিতেছেন, এমন সময়ে রাক্ষসসৈন্য ভয়ঙ্কর চৰ্ম্ম, আয়ুধ ও ধ্বজ গ্রহণ করিয়া,গভীর শব্দে চতুর্দিক ব্যাপিয়া উপস্থিত হইল। তাহারা পরস্পরাভিমুখীন হইয়া, বীরবাক্যে সম্ভাষণ, শরাসন সকল বিস্ফারণ, বারংবার জন্তাত্যাগ, উচ্চৈঃস্বরে চীৎকার এবং দুন্দুভি সকলে আঘাত করাতে তাহদের সেই সুবিপুল শব্দে সেই বন পরিপূরিত হইল। বনচারিগণ সেই শব্দে বিত্রস্ত হইয়া, পশ্চাদদিকে তার তাবলোকন না করিয়া, যে প্রদেশে ঐ শব্দ শুনিতে পাওয়া যায় না, তথায় পলায়ন করিল । এ দিকে রাক্ষস-সেনা বিবিধ শস্ত্র ধারণ পূর্বক সাগর-সদৃশ গম্ভীরভাবে মহাবেগে রামের সম্মুখবন্তী হইল । রণপণ্ডিত রাম চতুদিকে চক্ষু সঞ্চালন করত থরসৈন্য দর্শন করিলেন এবং যুদ্ধের জন্য তাহাদের অভিমুখীন হইলেন। তিনি ভয়ঙ্কর ধনু বিস্তৃত করিয়া ও তুণ হইতে সায়ক-সমূহ উত্তোলন-পূর্বক রাক্ষসকুলের সংহার-বাসনায় যারপর-নাই ক্রোধাবিষ্ট হইলেন এবং যুদ্ধের জন্য তাছাদের অভিমুখীন হইলেন। ক্রোধাবির্ভাব প্রযুক্ত প্রজ্বলিত প্রলয়াগ্নির স্যায় তিনি দুনিরীক্ষ্য হইয়া উঠিলেন। বনদেবতাগণ র্তাহাকে তেজোময় দর্শন করিয়া নিতান্ত ব্যধিত হইলেন । পরস্তু দক্ষযজ্ঞবিনাশোদ্ভত মহাদেবের স্যায় তাহার রামের সেই রোষাবিষ্ট মূৰ্ত্তি দেখিতে পাইয়াছিলেন । নীলবর্ণ মেঘসমূহ ষেরূপ স্বৰ্য্যোদয়ে শোভা পায়, রাক্ষসসৈন্যও অগ্নিসমবর্ণ কবচ, রথ, আভরণ ও ধনুঃসমন্বিত হইয়া তৎকালে সেইরূপ শোভা পাইতে লাগিল। ২৬৩৬ পঞ্চবিংশ সগ খর অগ্রগামীদিগের সহিত আশ্রমে আগমন করিয়া অবলোকন করিল, রিপুঘাতী রাম ক্রোধভরে শরাসন গ্রহণ করিয়াছেন । তদর্শনে সে কঠোরনিম্বন জ্যাযুক্ত ধনু উদ্যত করিয়া, সারথিকে রামের অভিমুখে রথ চালনা করিতে আদেশ করিল। সারথি তদীয় আজ্ঞানুসারে, যথায় মহাবাহু রাম ধনু কম্পিত করিয়া একাকী অবস্থিতি করিতেছেন, তথায় অশ্বদিগকে চালনা করিল। এ দিকে খর রামাভিমুখে ধাবিত হইতেছে দেখিয়া, তদীয় অমাত্য রাক্ষসের ঘোরতর গভীর গর্জন-পূর্বক তাহাকে চতুর্দিকে পরিবৃত করিল। তখন রথারোহী দুবিনীত খর, রাক্ষসগণের মধ্যে থাকিয়, তারাগণ-মধ্যবৰ্ত্তী উদ্ধত মঙ্গলগ্রহের সাদৃশ্য লাভ করিল। অনন্তর সে যুদ্ধে অনুপমতেজ রামকে সহস্ৰবাণ দ্বারা নিপীড়িত করিয়া, মহাশব্দে চীৎকার করিতে লাগিল । অনন্তর সমুদায় নিশাচর ক্রুদ্ধ হইয়া, ভয়ঙ্কর ধনুৰ্দ্ধর দুর্ববার রামকে লক্ষ্য করিয়া, বিবিধ শরবর্ষণে প্রবৃত্ত হইল। তাহার ক্রোধান্বিত হইয়া, যুদ্ধস্থলে ভুরি ভূরি লৌহময় মুদগর, শূল, প্রাস, খড়গ ও পরশ্বধ দ্বারা তাহাকে প্রহার করিতে লাগিল। পরে সেই বৃহদাকার মহাবল মেঘসদৃশ নিশাচরগণ অশ্ব ও গিরিশৃঙ্গাকৃতি হস্তিসমূহে আরোহণ করিয়া, যুদ্ধে কাকুৎস্থ রামকে বধ করিবার অভিলাষে র্তাহার অভিমুখে ধাবিত হইল এবং যেমন মহামেঘ পৰ্ব্বতেপরি বারিধারা বর্ষণ করে, তস্কপ র্তাহার প্রতি শরবৃষ্টি আরম্ভ করিল। রাম ক্র রদর্শন রাক্ষসগণে পরিবৃত হইয়া, প্রদোষরাত্ৰি সকলে পারিষদ-পরিবৃত মহাদেবের সাদৃশ্য ধারণ করিলেন এবং সাগর যেমন স্বীয় বেগে নদী সকলকে প্রতিগ্রহ করে, সেইরূপ তিনি শরসমূহ দ্বারা রাক্ষসগণ-প্রেরিত শস্ত্র সকল প্রতিহত করিলেন । তিনি তাহদের ভয়ঙ্কর শস্ত্রসমূহে বিদ্ধদেহ হইয়াও