পাতা:বাল্মীকি রামায়ণ - উপেন্দ্রনাথ মুখোপাধ্যায়.pdf/৪০৪

এই পাতাটির মুদ্রণ সংশোধন করা প্রয়োজন।

98 a প্রদীপ্ত বহুবজে সমাহত মহাচলের স্যায় কিছুমাত্র ব্যথিত হইলেন না ; পরস্তু সর্বশরীর শোণিত-সিক্ত হওয়াতে সন্ধ্যামেঘসমাবৃত দিনমণির স্যায় শোভা হইল। তৎকালে সমবেত দেব, গন্ধৰ্ব, সিদ্ধ ও পরমর্ষিগণ এক রামকে সহস্ৰ সহস্র রাক্ষসে পরিবৃত দেখিয়া বিষণ্ণ হুইয়া উঠিলেন। ১-১৫ অনন্তর রাম অত্যন্ত ক্রুদ্ধ হইয়া কাৰ্ম্মক মণ্ডলীকৃত করিয়া, শত শত ও সহস্ৰ সহস্ৰ সুশাণিত বাণ পরিত্যাগ করিতে লাগিলেন। ঐ সকল বাণ অনিবাৰ্য্য, অসহ এবং দেখিতে কৃতান্তের পাশাস্ত্রসদৃশ। তিনি অবলীলাক্রমে সুবর্ণ-চিত্রিত কঙ্কপত্রীলঙ্কত বাণ সকল শত্ৰু-সৈন্যমধ্যে মোচন করিলেন। সেই বাণ সকল কালপ্রক্ষিপ্ত পাশসমূহের ন্যায় রাক্ষসগণের দেহভেদ-পূর্বক প্রাণগ্রহণ করিয়া রুধিরলিপ্ত ও অন্তরীক্ষে উত্থিত হইয়া, প্রজ্বলিত অগ্নিসদৃশ শোভা ধারণ করিতে লাগিল। তখন রামের ধনুৰ্ম্মণ্ডল হইতে অসংখ্যেয় রাক্ষসপ্রাণহারী খরতর শর বিনিগত হইতে লাগিল। তিনি সেই সমস্ত শর দ্বারা রাক্ষসগণের শত শত ও সহস্ৰ সহস্র শরাসন, ধ্বজাগ্ৰ, চৰ্ম্ম, বৰ্ম্ম, হস্তাভরণ-যুক্ত বাহু এবং করিকরসদৃশ উরু সকল ছেদন করিলেন। রাম-ধমুমুক্ত শর-সকল, সারথি সহিত স্বর্ণকবচযুক্ত যোজিত অশ্ব, গজারোহিসহিত গজ এবং অশ্ব সহিত অশ্বারোহীদিগকে ছিন্নভিন্ন করিয়া পদাতিদিগকে হনন-পূর্বক শমন-সদনে প্রেরণ করিল । রাক্ষসগণ তীক্ষাগ নালীক, নারীচ ও বিকণিসমূহে হস্যমান হইয়া, ভয়ঙ্কর আর্তনাদ আরম্ভ করিল। শুষ্ক অরণ্যানী যেমন অগ্নি-সংযোগে সাতিশয় চঞ্চল হইয়া উঠে, রাক্ষসসৈন্তাও সেইরূপ রামের মৰ্ম্মভেদী শরসমূহে পীড়িত হইয়া, মুখলাভে সমর্থ হইল না। তাহদের মধ্যে কোন কোন ভীমবল, শূর, রাক্ষস নিরতিশয় ক্রুদ্ধ হইয়া, রামের প্রতি প্রাস, পরশ্বধ ও শূল সকল নিক্ষেপকরিল। মহাবাহু বীৰ্য্যবান রাম বাণসমূহ দ্বারা তাহদের শস্ত্র সকল বাল্মীকি রামায়ণ প্রতিহত করিয়া, তাহদের প্রাণ হরণ ও মস্তক ছেদন করিয়া ফেলিলেন। গরুড়ের পক্ষপবনে বৃক্ষসমূহ যেরূপ ভূতলে পতিত হয়, সেইরূপ রাক্ষসগণ ছিন্নমস্তকে ধরাশায়ী হইতে লাগিল । তাহদের ধনু ও চৰ্ম্ম ছিন্ন হইয়া গেল। হতাবশিষ্ট রাক্ষসেরা রামশরে আহ ত ও বিষণ্ণ হইয়া মলিনভাবে আশ্রয় গ্ৰহণার্থ খরের অভিমুখে ধাবমান হইল। ১৬-৩০ অনন্তর দূষণ নিতান্ত ক্রুদ্ধ হইয়া, ধনুগ্রহণ-পূর্বক তাহাদিগকে আশ্বাসিত করিয়া, কুপিত কৃতান্তের স্যায় ক্রোধাম্বিত রামের প্রতি ধাবিত হইল। তখন রণবিমুখ নিশাচরগণ দূষণের আশ্রয়লাভে প্রতিনিবৃত্ত হইয়া, শাল, তাল, শিলা, প্রাস, মুদগর ও শূল সকল আয়ুধ-স্বরূপ ধারণ করিয়া, রামের অভিমুখে ধাবমান হইল। তাহারা যুদ্ধস্থলে শরবৃষ্টি করিতে লাগিল । আবার বৃক্ষবৃষ্টি ও শিলাবৃষ্টি আরম্ভ হইলে, তখন অতীব ভয়াবহ ও তুমুল রোমহর্ষণ যুদ্ধ উপস্থিত হইল । রাক্ষসগণ রোষাবিষ্ট হইয়া পুনর্বার চারিদিক্ হইতেই রামকে পীড়ন করিতে লাগিল । তিনি দেখিলেন, সমুদায় দিক ও বিদিক এবং নিজেও শরবন্ধী নিশাচরগণে সমাচ্ছন্ন হইয়াছেন। তদর্শনে তিনি ভীষণ শব্দ করিয়া, রাক্ষসগণের উদ্দেশ্যে পরম দীপ্তিশালী গান্ধীবাস্ত্র যোজনা করিলেন। পরে র্তাহার কৰ্ম্মক হইতে সহস্ৰ সহস্র শর নির্গত হইতে লাগিল। সেই শরসমূহে সমুদায় দিক পূর্ণ হইয়া গেল। রক্ষসেরা ঐ সময়ে তিনি যে ভয়ঙ্কর উৎকৃষ্ট শর সকল গ্রহণ ও মোচন এবং ধনু অাকর্ষণ করিতে লাগিলেন, তাহ দেখিতে পাইল না ; কেবল তদীয় শরে নিতান্ত নিপীড়িত হইতে লাগিল । র্তাহার শরে শরে অন্ধকার প্রাচুভূত হইয়া, দিবাকরসহিত আকাশমণ্ডল আচ্ছন্ন করিয়া ফেলিল । রাম নিরন্তর রাশি রাশি শর প্রক্ষেপ করিতে লাগিলেন। তদার ভূরি ভূরি রাক্ষস, কেহ যুগপৎ হত ও কেহ পতিত হইল এবং কেহ বা পতমান