পাতা:বাল্মীকি রামায়ণ - উপেন্দ্রনাথ মুখোপাধ্যায়.pdf/৪০৭

এই পাতাটির মুদ্রণ সংশোধন করা প্রয়োজন।

আরণ্যকাও করে, সেইরূপ শরধারা বর্ষণ করত জলাদ্র দুন্দুভির ন্যায় শব্দ করিতে লাগিল। রঘুনন্দন রাম ত্রিশির রাক্ষসকে অভিমুখে আগমন করিতে দেখিয়া, শরাসনে স্বশাণিত সায়ক সকল বিধুনিত করিয়া, তাহাকে যুদ্ধার্থ গ্রহণ করিলেন। তখন অতি বলবান সিংহ ও কুঞ্জরের স্যায় রাম ও ত্রিশিরা উভয়ে তুমুল ংগ্রাম আরিস্ত হইয়াছিল। অনন্তর অমর্ম-স্বভাব রাম, ত্রিশিরা রক্ষস-কর্তৃক তিন বাণে ললাটদেশে তাড়িত হইয়া, রোষভরে গৰ্বিবত বচনে বলিতে লাগিলেন,—১-১১ অরে বিক্রমশূর নিশাচর ! তোর ঈদৃশ বল যে, আমি ললাটদেশে ত্বৎকর্তৃক বহু শর দ্বারা যেন পুষ্পসমুহে তাড়িত হইলাম ! কি আশ্চৰ্য্য ! সে যাহা হউক, অধুনা তুই আমার ধনুগুণমুক্ত শর সমস্ত প্রতিগ্রহ কর । এই বলিয়া, সেই ক্রোধান্বিত দীপ্ততেজ রাম আশীবি-সদৃশ চতুর্দশ শরে ত্রিশিরার হৃদয় বিদ্ধ করিলেন এবং চারিটি নতপৰ্বল বাণে তাহার অশ্ব-চতুষ্টয় নিহত ও অন্টবাণে সারথিকে রথনীড়ে নিপাতিত করিয়া, এক শরে তদীয় অত্যুন্নত ধ্বজ ছেদন করিলেন । অনন্তর সারথি ও অশ্বগণ নিহত হওয়ায়, সেই রথ হইতে ত্রিশিরা রাক্ষস উৎপতিত হইলে, রাম বহুশরে তাহার হৃদয় বিদ্ধ করিলেন ; সে আর আয়ুধ গ্রহণে সমর্থ হইল না। পরে অপ্রমেয়াত্মা রাম রোধভরে বেগযুক্ত শরত্রয় দ্বারা তাহার মস্তকত্রয় ছেদন করিয়া ফেলিলেন । এইরূপে মস্তক পতিত হইলে, সমরস্থ নিশাচর ত্রিশিরা রামবাণে অত্যন্ত আহত হইয়া, সধুম শোণিত উদগীর করত ধরাতল আশ্রয় করিল। তদর্শনে খরের আশ্রিত হতাবশিষ্ট নিশাচরেরা রণে ভঙ্গ দিয়া, শাৰ্দ্দ লতাড়িত মৃগযুথের স্যায় পলায়ন করিল, কোনমতেই স্থির থাকিতে পারিল না। খর তাহাদিগকে পলায়নোন্তত দেখিয়া, ভরে দ্রুতপদনিক্ষেপে চন্দ্রের উদেশে রাহুর স্থায় রামের অভিমুখে সবেগে ধাবমান হইল। ১২-২০ S83) অষ্টাবিংশ সর্গ দৃষণ ও ত্রিশিরা রাক্ষসকে নিহত এবং রামের শৌৰ্য্য দর্শন করিয়া, থরেরও ভয়সঞ্চার হইল। সেই রথস্থ মহারথ রক্ষস খর দূষণ ও ত্রিশিরাকে দুর্বিষহ পরাক্রমসম্পন্ন মহাবল রাক্ষসী সেনাসহ একাকী রাম কর্তৃক নিহত হইতে দেখিল । সেই খর এইরূপে স্বীয় সৈন্যসংখ্যা স্বল্পাবশিষ্ট দেখিয়া, বিমনা হইয়া, নমুচি যেমন ইন্দ্রকে, সেইরূপ রামকে আক্রমণ করিল এবং অতিদৃঢ় ধনু আকর্ষণ করিয়া, রামের প্রতি আশীবিষ-সদৃশ শোণিতপায়ী নারাচ সকল নিক্ষেপ করিল। পরে সে বারম্বার জ্য আকর্ষণ-পূর্বক স্বীয় শিক্ষা ও তস্থলল প্রদর্শন করত বহুবিধ শর মোচন করিতে করিতে সমরস্থলে বিচরণ করিতে লাগিল এবং শরনিক্ষেপে দিজুগুলও আচ্ছন্ন করিল। অনন্তর রামও তাহাকে দর্শন করিয়া, প্রকাণ্ড কোদণ্ড গ্রহণ করত অগ্নিস্ফুলিঙ্গের ন্যায় অসহনীয় সায়কসমূহবৃষ্টি দ্বারা মহামেঘের ন্যায় নভোমণ্ডল অবকাশ-বিহীন করিলেন। নভোমণ্ডল খর ও রামের বিমুক্ত শিতশরসমূহে সমাচ্ছন্ন হইয়া, সৰ্ব্বতোভাবে অবকাশ-বিহীন হইল। তখন পরস্পরের বধাভিপ্রায়ে সমরপ্রবৃত্ত সেই উভয় বীরের শরজালে গগনমণ্ডল আচ্ছন্ন হওয়াতে দিবাকরও অপ্রকাশিত হইলেন । অনন্তর মহাগজ যেরূপ অঙ্কুশ দ্বারা আহত হয়, সেইরূপ খর তীক্ষাস্ত্র নালীক, নারাচ ও বিকীর্ণ অস্ত্রসমূহে রামকে আহত করিতে লাগিল। সেই সময়ে সকল প্রাণীই রথস্থিত ধনুৰ্দ্ধারী খরকে পাশধারী কৃতান্তের স্যায় দেখিতে লাগিল। তৎকালে খরও স্বীয় সমুদায় সৈন্যবিনাশী, পুরুষকার-সম্পন্ন, ধৈর্য্যশীল রামকে পরিশ্রান্ত বোধে সিংহের ন্যায় বিক্রম প্রকাশ করিয়া, বিচরণ করিতে লাগিল। সিংহ যেমন মৃগশিশুকে দেখিয়া উদ্বিগ্ন হয় না, তদ্রুপ রাম তাহাকে দেখিয়া উদ্বিগ্ন হইলেন না। অনন্তর খর স্বৰ্য্যসদৃশ স্থতিশালী