পাতা:বাল্মীকি রামায়ণ - উপেন্দ্রনাথ মুখোপাধ্যায়.pdf/৪১৫

এই পাতাটির মুদ্রণ সংশোধন করা প্রয়োজন।

tরণ্যকাণ্ড মাল্যে ভূষিত এবং মন্ত্ৰিগণে পরিবেষ্ঠিত হইয়া, সাক্ষাৎ কালের দ্যায় আসনে উপবিষ্ট রহিয়াছে। শূৰ্পণখা সৰ্ব্বত্রই মির্ভয়ে বিচরণ করিয়া থাকে। মহাত্মা লক্ষণ নাসাকণ ছেদন করতে সে ভয়ে বিহবল হইয়াছিল এবং রাক্ষসগণের মৃত্যুজন্ত শঙ্কায় ও রামের রূপাতিশয্য দর্শনে লোভবশতঃ সে হতজ্ঞান হইয়াছিল, সে তদবস্থায় দীপ্ত-বিস্তৃত-লোচন-বিশিট রাবণের নিকটবৰ্ত্তিন হইয়াও আত্মদশ প্রদর্শন করাইয়া অতি ভয়ঙ্কর বাক্যে কহিতে লাগিল । ১-২৫ ত্রয়স্ত্রিংশ সগ তখন দীন উদ্বেগপ্রদ রাবণকে মন্ত্রিগণের সমক্ষে কটুবাক্যে কহিতে লাগিল,—তুমি স্বেচ্ছাচারী হইয়া সৰ্ব্বদাই কামভোগে সাতিশয় মত্ত হুইয়া আছে এবং কোন বিষয়ে কাহারও নিষেধ বা বাধা গ্রাহ কর না ; সেই জন্য তুমি অবশ্য জ্ঞাতব্য এই যে ভয়ঙ্কর বিপদ উপস্থিত হইয়াছে, তাহ জানিতেছ না । কিন্তু যে রাজা স্ত্রী প্রভৃতি গ্রাম্য ভোগে সর্বদাই আসক্ত, স্বেচ্ছাচারী ও লুব্ধ হয়েন, প্রজাগণ শ্মশানাগ্নির ন্যায় সেই রাজার সমাদর করে না । যে রাজা যথাকলে স্বয়ং কাৰ্য্য সকলের অনুষ্ঠান করেন না, তিনি রাজ্য ও তত্তৎ অনুষ্ঠিত কাৰ্য্য সকলের সহিত বিনিন্ট হয়েন । যে রাজা স্ত্রী প্রভৃতির অধীন হয়েন এবং চার সকল নিয়োগ ও প্রজাদিগবে সমুচিত সময়ে দর্শনদান করেন না, হস্তী সকল যেরূপ দূর হইতেই পঙ্কযুক্ত নদী ত্যাগ করে, প্রজারাও সেইরূপ সেই রাজাকে দূর হইতে পরিত্যাগ করিয়া থাকে। পুনশ্চ, যে সকল মহীপতি স্বীয় অনায়ত্ত রাজ্য উপায় দ্বারা আয়ত্ত করেন না, সাগরমধ্যবৰ্ত্তী পর্বতসমূহের স্যায় তাহদের সমৃদ্ধি প্রকাশমান হয় না । তুমি স্বভাবতঃ চঞ্চল এবং চারও নিয়োগ কর নী ; সুতরাং বিশুদ্ধচিত্ত দেব, দানব ও গন্ধৰ্ব্বগণের শূপণখা ক্রোধ-সহকারে সকল লোকের , S(t S সহিত শক্রতা করিয়া কিরূপে রাজত্ব করিবে ? হে রাক্ষস ! তুমি বুদ্ধিহীন, বালকস্বভাব এবং যাহা জানা উচিত, তাহীও তুমি জান না ; অতএব কিরূপে রাজপদ রক্ষা করিবে ? হে বিজয়িশ্রেষ্ঠ ! যাহাদের চার, কোষ ও নীতি আয়ত্ত নহে, তাদৃশ মহাপতির প্রাকৃত লোকের সমান। ভূপতিগণ চার দ্বারা দূরস্থ বিষয় সমুদায় অবলোকন করেন, এই জন্য র্তাহাদিগকে দীর্ঘচক্ষু বলিয়া থাকে। আমার বোধ হইতেছে; তুমি কুত্ৰাপি চারনিয়োগ কর না এবং ইতরপ্রকৃতি মন্ত্ৰিগণে সৰ্ব্বদাই বেষ্টিত থাক। সেই জন্য স্বজন ও জনস্থান যে বিনন্ট হইয়াছে, তোমার সে জ্ঞান নাই। অক্লিষ্টকৰ্ম্মা রাম একাকাই ভীমকৰ্ম্ম৷ চতুদশ সহস্র রাক্ষস ও দূষণের সহিত খরকে হত করিয়াছেন, ঋষিদিগকে অভয় দিয়াছেন, সমুদায় দণ্ডকারণ্য নিষ্কণ্টক ও জনস্থান ধৰ্ষিত করিয়াছেন। কিন্তু রাবণ ! তুমি লোভের বশীভূত, প্রমত্ত এবং সৰ্ব্বদাই পরের অধীন হইয়া আছ,সেই জন্য স্বীয় রাজ্যমধ্যে যে ভয় উপস্থিত হইয়ছে, তাহা বুঝিতেছ না। যে রাজা তায়, প্রমত্ত, গৰ্বিবত ও শঠ এবং অল্প দান করেন, বিপৎকালে কোন প্রজাই তাহার রক্ষার্থ যত্ন করে না। যে রাজা আতিশয় অভিমানী ও ক্রোধনস্বভাব, যিনি নিজেই আপনার গৌরব করেন এবং আত্মীয়গণ বাহকে গ্রাহ করে না, ব্যসনকালে তদীয় আত্মীয়গণও র্তাহাকে বিনষ্ট করে। যে রাজা স্বয়ং কাৰ্য্য নির্বাহ করে না এবং ভয়ে ভীত হয় না, তাদৃশ নরপতিকে শাস্ত্র রাজ্যচ্যুত ও তৃণভুল্য ক্ষীণ হইতে হয়। শুষ্ক কাষ্ঠ, লোষ্ট্র ও ধূলি দ্বারাও কাৰ্য্য হইতে পারে, কিন্তু স্থানভ্রষ্ট নরপতি দ্বারা কোন কাৰ্য্যই হয় না। পরিত্যক্ত বস্ত্র ও মন্দিত মাল্য যেমন কোম কাৰ্য্যেরই নহে, রাজ্য-ভ্রষ্ট রাজাও তেমনি সমর্থ হইলেও নিরর্থক হয়েন । যে রাজা প্রমাদহীন, অভিজ্ঞ, বিশিষ্টরূপ জিতেন্দ্রিয়, কৃতজ্ঞ ও ধৰ্ম্মরত, তিনিই রাজপদে চিরস্থায়ী হয়েন। যে রাজা নয়ন