পাতা:বাল্মীকি রামায়ণ - উপেন্দ্রনাথ মুখোপাধ্যায়.pdf/৪২২

এই পাতাটির মুদ্রণ সংশোধন করা প্রয়োজন।

○○rb" সীতার নিমিত্ত হৰ্ম্ম্যপ্রাসাদপরিপূর্ণ নানারক্রু-ভূষিত। লঙ্কানগরীকে তোমায় বিনষ্ট দেখিতে হইবে। যে হ্রদে সর্প থাকে, সেই হ্রদবাসী মৎস্যগণও যেমন গরুড়-কর্তৃক বিনষ্ট হয়, সেইরূপ র্যাহারা পাপ করেন না, তাদৃশ শুদ্ধচিত্ত ব্যক্তিগণও পাপাত্মার আশ্রয়ে থাকিলে, তাহার পাপ-জন্ত বিনাশ প্রাপ্ত হইয়। থাকেন। অতএব তুমি দেখিবে, তোমার নিজের দোষে দিব্যচন্দনলিপ্তাঙ্গ ও দিব্যাভরণভূষিত নিশাচরগণ সমূলে নিহত হইয়া ভূমিসাৎ হইয়াছে এবং নিরাশ্রয় রাক্ষসগণ কেহ বা হৃতদার হইয়া, কেহ বা পত্নীর সহিত দশদিকে পলায়ন করিয়াছে । তুমি আরও দেখিবে, শরজালে সমাকুল ও অগ্নিশিখায় পরিব্যাপ্ত হইয়া, লঙ্কার সমুদায় গুহই এককালে ভস্মীভূত হইয়া গিয়াছে ; কেন না, পরদারহরণ অপেক্ষা গুরুতর পাপ আর নাই। রাজন ! তোমার অন্তঃপুরে সহস্ৰ সহস্র রমণী বিরাজ করিতেছে । তুমি আপনার পরিগৃহীত সেই সকল ভাৰ্য্যাতেই আসক্ত হইয়া, স্বীয় বংশ, অভীষ্ট প্রাণ, রাজ্য, সমৃদ্ধি, মান ও রাক্ষসগণ, এই সকলের রক্ষা কর। যদি পরমসুন্দর কলত্র ও মিত্রবর্গ লইয়া চিরকাল সুখভোগের ইচ্ছা থাকে, তাহা হইলে রামের অপ্রিয় কাৰ্য্য করিও না। আমি তোমার, সুহৃৎ, বারম্বার নিররণ করিতেছি ; তথাপি যদি বল-পূর্বক সীতার ধর্ষণ কর, তাহা হইলে নিশ্চয়ই তোমাকে রামশরে সবান্ধবে ক্ষীণবল ও ক্ষণপ্রাণ হইয়া শমনসদনে গমন করিতে হইবে । ১-৩৮ একোনচত্বারিংশ সগ তৎকালে আমি কোন প্রকারে যুদ্ধে রাম দ্বারা ঐরূপে মুক্ত হইয়াছিলাম। অধুনা যাহা ঘটিয়াছিল, তাহা বলিতেছি, শ্রবণ কর –হে রাবণ ! আমি পূর্বে রাম কর্তৃক পরাজিত হইয়াও নিবেদ প্রাপ্ত হই নাই। তজ্জন্যই পুনর্বার তীক্ষশৃঙ্গ অতি ভয়ানক বাল্মীকি-রামায়ণ দন্তযুক্ত, উজ্জ্বল জিহবা-বিশিষ্ট, মাংসাহারী, মহাবল ও অতি ভয়ানক হইয়া, মৃগরূপধারী দুই নিশাচরের সহিত দণ্ডকারণ্যে প্রবেশ করিয়াছিলাম ও পরে চৈত্য-বৃক্ষ ও অগ্নিহোত্ৰ-গৃহমধ্যে ঋষিদিগকে ধৰ্ষিত করিয়া বিচরণ করিতেছিলাম। এইরূপে আমি তাপসমাংসভোজী তীক্ষশৃঙ্গযুক্ত ক্রুর মৃগ হইয়া ধৰ্ম্মের ব্যাঘাত করত ধৰ্ম্মাত্মা ঋষিদিগকে হত্যা করিয়া, র্তাহাদিগের রুধির পান ও মাংস ভক্ষণ করিয়া, মত্ত হওত বনবাসিগণের ত্রাস উৎপাদন-পূর্বক দণ্ডকারণ্যে বিচরণ করিতে করিতে, তাপস-ধৰ্ম্মাবলম্বী রাম, মহাতেজা বিদেহরাজ-তনয়া সীতা ও সমস্ত প্রাণিগণের হিত-নিরত তপস্যাকার মহারথ লক্ষণের সমীপবৰ্ত্তী হইলাম এবং পূর্বতন শত্রুভাব ও পূর্বপ্রহর স্মরণ করিয়া, প্রজ্ঞাহীনতাপ্রযুক্ত বনবাসী মহাতেজ রামকে তপস্বী জানিয়া, অভিভব-পূর্বক হত্যা করিতে অভিলাষ করিয়া রোষাবেশে তাহার সম্মুখদেশে ধাবমান হইলাম। তিনি স্বমহৎ ধনু আকৰ্ষণ-পূর্বক মুশাণিত শরত্রয় নিক্ষেপ করিলেন । সমীরণ ও গরুড়সদৃশ বেগশালা শোণিতাশ শক্রহন্ত বঞ্জসদৃশ অতি ভয়ানক সন্নত-পৰ্ব্ব সেই শরত্রয় মিলিত হইয়া আমাদিগের সম্মুখে আগমন করিতে লাগিল। আমি নিতান্ত শঠ এবং পূর্বে রাম হইতে ভয়দৰ্শন করিয়া, তদীয় ক্ষমতা বিশেষরূপে অবগত হইয়াছিলাম, তজ্জন্য অমনি পলায়ন করিয়া রক্ষণ পাইলাম ; কিন্তু সেই উভয় রাক্ষস বিনষ্ট হইল। হে রাবণ ! আমি কোন প্রকারে রামশর হইতে মুক্ত ও জীবন প্রাপ্ত হইয়া তাপনধৰ্ম্মগ্রহণ-পূর্বক সমাহিতচিত্তে এই স্থলে আসিয়া, যোগ অবলম্বন করত তপস্যা করিতেছি। আমি তদবধি পাশহস্ত কৃতান্তের স্যায় সেই চারপরিধায়ী কৃষ্ণাজিনোত্তরীয়বাসা ধনুৰ্দ্ধারী রামকে প্রত্যেক বৃক্ষে দেখিতে পাই। আমি ত্ৰাসিতৃ হইয়া নিরন্তর সহস্ৰ সহস্র রামকে দেখিতে পাই। এই সমস্ত অরণ্যেই যেন রাম আমার সমীপে প্রতিভাত হয়েন ।