পাতা:বাল্মীকি রামায়ণ - উপেন্দ্রনাথ মুখোপাধ্যায়.pdf/৪২৫

এই পাতাটির মুদ্রণ সংশোধন করা প্রয়োজন।

আরণ্যকাগু ○○> আর, স্বামীর বৈগুণ্যে তৎসমস্ত ফলভোগে বঞ্চিত হয়। অধিকন্তু, স্বামী বিগুণ হইলে প্রজাদিগের বিষম বিপদ উপস্থিত হইয়া থাকে। নরপালের প্রজাবর্গের যশ ও ধৰ্ম্ম-প্রাপ্তির মূল ; অতএব সকল অবস্থাতেই রাজার বিশিষ্টরূপে রক্ষা করা বিধেয় । হে নিশাচর। প্রজাবর্গের প্রতিকূলচারী অবিনয়ী তীক্ষুস্বভাবাপন্ন রাজার রাজ্যপালনে সমর্থ হয়েন না এবং যে সকল অমাত্য তীক্ষু মন্ত্রণা প্রদান করেন, বন্ধুর প্রদেশে অনুপযুক্ত সারথিচালিত রথ যেমন সারথিসহ বিনাশপ্রাপ্ত হয়, সেইরূপ তীক্ষু-মন্ত্রণাদাতা মন্ত্রী সহ রাজা শীঘ্রই নিধন প্রাপ্ত হন । ইহলোকে অনেক উপযুক্ত ধৰ্ম্মানুষ্ঠায়ী স্বপদোচিত মানবেরা পরের অপরাধে সুসদ্বগের সহিত বিনস্ট হইয়াছেন । হে দশানন । প্রজার প্রতিকূলাচারী তীক্ষস্বভাব প্রভু-কর্তৃক রক্ষ্যমাণ হইয়া, গোমায়ু-রক্ষিত মৃগগণের স্যায় উত্তরোত্তর বৃদ্ধি প্রাপ্ত হয় না । ওহে রাবণ ! তুমি দুর্বদ্ধি, ইন্দ্রিয়পরায়ণ, কর্কশস্বভাব ; তুমি যাহাদিগের রাজা, সেই নিশাচরেরা অবশ্যই মৃত্যুগ্রাসে পতিত হইবে। আমি অকস্মাৎ তাদৃশ ভয়ানক ব্যসন প্রাপ্ত হইয়াছি। অদ্য তুমিই শোচনীয়, যে হেতু, তুমি সসৈন্তে বিনাশ প্রাপ্ত হইবে।” রাম আমাকে বিনিষ্ট করিয়া, অনতিবিলম্বে তোমাকে সংহার করিবেন ; যুদ্ধ করিয়া শক্রহস্তে নিহত হইলে, আমি কৃতকৃতার্থ হইব ॥২ নিশ্চয় জানিও, আমি ১Tমূলে কাকতালীয়ং এই কথা আছে, উহার অর্ধ-জাকমিক, জন্মিলেই মরিতে হয়, স্বতরাং আমার মৃত্যু শোচনীয় না হইলেও ভুমি সসৈন্তে নাশপ্রাপ্ত হইবে, এই জন্ত শোকের পাত্র। ২ । আমার মরণ নিশ্চিত কিরূপে স্থির করিলে, ইছার উত্তরে মারীচ বলিতেছে—মারীচ রাম-হন্তে মৃত্যুতে কৃতকৃত্য কেন হইবে ? ইহার উত্তর এই যে, রাজার হস্তে মরণাপেক্ষ শক্রহস্তে মরণ শ্রেষ্ঠ— কারণ, সেই মৃত্যু স্বৰ্গপ্রদ। রাজদণ্ডে মৃতব্যক্তির জন্ত শোক ও উদকক্রিয় নিষিদ্ধ, ঐ স্বত্যু অপমৃত্যু বলিয়। কথিত হয়। রামহস্তে মৃত্যু হইলে মুক্তি হইবে, স্বতরাং আমি কৃতকৃত্য হইব। মারীচ দীর্ঘদিন তপস্তল ও যোগাভ্যাস করায় তাহার চিত্তশুদ্ধি হইয়াছিল বলিয়। সে এই সকল বুঝিতে সমর্থ হইয়াছিল। নৃসিংহপুরাণে উক্ত হইয়াছে— “রামাদপি হি মৰ্ত্তৰাং মৰ্ত্তবাং রাবণাদপি । উভয়োরপি মৰ্ত্তৰ্যে বরং রামান্ন রাবণাৎ ॥* 8\9 রামকে অবলোকনমাত্রেই নিহত হইয়াছি, এবং ইহাও জানিও যে, সীতাকে হরণ করিলেই, তুমিও সপরিবারে নিধন প্রাপ্ত হইবে। যদি আমার সহিত একত্রিত হইয়া সীতাকে আশ্রম হইতে আনয়ন কর, তাহা হইলে তুমি, আমি, লঙ্কাপুরী ও নিশাচরগণ কাহারও রক্ষা হইবে না । ১-১৯ দ্বিচতুরিংশ সগ মরিচ রাক্ষসরাজ রাবণকে সেইরূপ পরুষ বাক্য বলিয়া, তদীয় ভয়ে ত্রাসি ত হইয়া বলিল, আমরা উভয়ে গমন করিব। সেই ধনুৰ্বাণখড়গধারী উদ্যতাস্ত্র রামকর্তৃক দৃষ্ট হইলে আমার জীবন যাইবে । হে তাত ! যদিও তুমি যমদণ্ড বিফল করিয়াছ, রঘুনন্দন রাম ও তোমার সাক্ষাং যমদগুরূপে বিরাজ করিতেছেন। র্তাহার প্রতি ক্ষমতা প্রকাশ করিয়া জাবিত-কলেবরে প্রতিনিবৃত্ত হওয়া সম্ভব নহে ; কিন্তু তুমি অতি দুরাত্মা, আমি তোমার কি করিতে পারি ? হে রাক্ষসরাজ ! তোমার মঙ্গল হউক, আমি গমন করিতেছি । রাক্ষসরাজ রাবণ মারীচের সেই বাক্যে আহলাদিত হইয়া, তাহকে গাঢ়তর আলিঙ্গন করিয়া এই বাক্য বলিল,—তুমি মদীয় অভিপ্রায়ের অনুবৰ্ত্তী হইয়া কাৰ্য্য করিতে উদ্যত হইয়াছ, উহাই তোমার বীরত্বের উপযুক্ত। পূর্বে তুমি অন্য রাক্ষস ছিলে, এক্ষণে তুমি আত্মসদৃশ হইলে । সম্প্রতি আমার সহিত শীঘ্র এই পিশাচ-সদৃশ-বদন গর্দভগণে সংযোজিত রত্ব বিভূষিত অন্তরীক্ষচারী রথে আরোহণ কর। পরে তথায় গমন করিয়া, বিদেহরাজতনয়া সীতাকে প্রলোভিত করিয়া ইচ্ছামত প্রদেশে প্রস্থান করিও । রাম-লক্ষণ-রহিত শূন্ত আশ্রমে প্রবেশ করিয়া আমি বলপূর্বক তাহাকে হরণ করিব । তাড়কাতনয় মারীচ এই কথায় সম্মত