পাতা:বাল্মীকি রামায়ণ - উপেন্দ্রনাথ মুখোপাধ্যায়.pdf/৪২৬

এই পাতাটির মুদ্রণ সংশোধন করা প্রয়োজন।

৩৬২ হইল। অনন্তর রাবণ ও মারচ উভয়ে বিমান-সদৃশ রথে আরোহণ করিয়৷ সত্বর সেই আশ্রম হইতে প্রস্থান করিল এবং বিবিধ পত্তন, বন, পৰ্ব্বত, নদী, রাষ্ট্র ও নগর সকল দেখিতে দেখিতে দণ্ডকারণ্যে সমাগত হইল।” অনন্তর রাক্ষসরাজ রাবণ মারীচের সহিত তথায় রামের আশ্রমপদ দর্শন করিয়া সেই স্বর্ণভূষিত রথ হইতে অবতীর্ণ হইল এবং মারীচের হস্ত ধারণ করিয়া কহিতে লাগিল, সথে ! কদলীবৃক্ষ-পরিবৃত রামের ঐ আশ্রমপদ দেখা যাইতেছে । যে জন্য আমরা এখানে আসিয়াছি, এক্ষণে সত্বর তাহা বিধান কর। নিশাচর মারচ রাবণের কথা শুনিয়া, নিতান্ত অদ্ভুত মৃগরূপ ধারণ-পূর্বক রামের আশ্রম-দ্বারে বিচরণ করিতে লাগিল । ১-১৫ ঐ যুগের শৃঙ্গাগ্র ইন্দ্ৰনীলমণিপ্রবর-সদৃশ, মুখাকৃতি শ্বেত কৃষ্ণ বিবিধ বর্ণে বিচিত্রিত, বদনমণ্ডল রক্তোৎপলসন্নিভ, শ্রবণযুগল ইন্দ্রনীল পদ্মের স্যায়, গ্রীবাদেশ কিঞ্চিৎ অত্যুন্নত, উদর ইন্দ্ৰনীলমণিসন্নিভ, প্যশ্বদেশ মধুকপুষ্পসদৃশ, বর্ণ পদ্ম-পরাগ-প্রতিম, খুর বৈদূৰ্য্যসদৃশ, জংঘাযুগল ক্ষীণ, সন্ধি সকল উত্তমরূপে বদ্ধ এবং পুচ্ছদেশ ইন্দ্ৰধনুর ন্যায় ও উন্নমিত হইয়া বিরাজ করিতেছে । তাহার বর্ণ স্নিগ্ধ ও মনোহর এবং শরীর নানাবিধ রত্বে পরিবৃত। ক্ষণমাত্রেই রাক্ষস এইরূপ পরমশোভন মৃগমূৰ্ত্তি ধারণ করিল। নিশাচর মারীচ বৈদেহীর প্রলোভনাৰ্থ এবংবিধ ধাতুবিচিত্রিত মনোহর দর্শনীয় রূপ ধারণ-পূর্বক রমণীয় রামাশ্রম ও বনভূমি আলোকময় করিয়া ইতস্ততঃ শাদ্বলে বিচরণ ও তৃণসকল ভক্ষণ করিতে করিতে গমন করিতে লাগিল । তাহার কলেবর শত শত রৌপ্যবিন্দুতে চিত্রিত। ১। বান্তশায়ে নগরপত্তনাদির লক্ষণ উক্ত হইয়াছে। গ্রাম, নগর, পত্তন, খৰ্ব্বট, পুর, খেটক, কুমম, শিবির, রাজবাসিক, সেনামুণ, নামভেদে দশপ্রকার— “দ্বীপান্তুরাগতত্রবাঙ্কয়বিক্রকৈবুতম্। পত্তনং জ্বৰতীরে তাৎ ” সমুদ্রতীরবর্তী বন্দরকে পত্তন কহে। বাল্মীকি-রামায়ণ তাহাকে দেখিলে নিরতিশয় প্রীতি উপস্থিত হয়। সে কখন বিটপী সকলের কোমল নবপত্র সকল ভক্ষণ করত বিচরণ করিতে লাগিল, কখন কদলীবাটিকায় ও কণিকার-কাননে প্রবেশ করিয়া এবং কখন বা সীতার দর্শনপথে উপনীত হইয়া, মন্দ গতিতে আশ্রমের ইতস্তত: সঞ্চরণ আরম্ভ করিল। পৃষ্ঠদেশ সুবর্ণে চিত্রিত হওয়াতে তৎকালে ঐ মহামৃগের সাতিশয় শোভা হইয়াছিল। সে যথাসুখে রামের সমীপে বিচরণ করিতে লাগিল। বিচরণ-সময়ে কখন ধাবন, কখন তাবস্থান, কখন বা মুহূৰ্ত্তমাত্র গমন করিয়া পুনরায় সত্বর প্রতিনিবৃত্ত হইতে লাগিল। কখন ইতস্ততঃ ক্রীড়ন, কখন ভূমিতে শয়ন, কখন তাশ্রমদ্বারে আগমন-পূর্বক মৃগযুথের অনুসরণ করিতে লাগিল এবং মৃগগণে অনুগত হইয়া পুনরায় সীতার দর্শন আকাঙক্ষায় প্রতিনিবৃত্ত হইতে লাগিল। এইরূপে সে মৃগতাপ্রাপ্ত হইয়া, বিচিত্রমণ্ডল প্রদর্শন-পূর্বক পরিভ্রমণ করিতে লাগিল । তাহাকে দর্শন করিয়া অন্যান্য বনচর মৃগগণ তাহার নিকট আগমন-পূর্বক তাহাকে আঘ্ৰাণ করিয়াই দশদিকে পলায়ন করিতে লাগিল। মারীচ যদিও মুগবধে রত ছিল, তথাপি ভাবগোপন-জন্তু তাহাদিগকে ভক্ষণ করিল না, কেবল স্পর্শ করিতে লাগিল। ঐ সময়ে শুভলোচনা মদিরেক্ষণ বৈদেহী কুসুমচয়নে ব্যগ্র হইয়া, কখন অশোক, কখন কণিকার ও কখন বা চুতবৃক্ষের নিকটে গমন করিতেছিলেন। ২ বনবাসের অনুচিত সেই রুচিরবদনা বরাঙ্গনা সীতা কুম্মচয়ন করত அ_ _ _ ২। অশোক ও জাম্র-পুষ্প চয়নের কথা উক্ত হওয়ায় শীত ঋতুর অবসান ও বসন্তের প্রাদুর্ভাব বুঝা যায়। ইহার পরেই স্বরভি মাস, চৈত্রবনানিল প্রভৃতি বর্ণনাও রহিয়াছে। ইহা পম্পাতীরে রাসের উক্তি । রারণের প্রতিজ্ঞা ছিল, ১২শ মাসমধ্যে সীতা তাহার বশবৰ্ত্তিনী না হইলে সীতাকে বধ করিবে, হনুমান যখন সীতার সহিত সাক্ষৎ করে, তখন মাত্র দুই মাস অবশিষ্ট ছিল। মাঘশুক্লাষ্টমীতে সীতাহরণ মালিলে অগ্রহায়ণ শুক্লাষ্টমীতে কিম্ব তাহার আগেই দশম মাস সমাপ্ত হয়। সেই মাসকে “বৰ্ত্ততে দশমে মাসঃ” বলিয়া নির্দেশ করা চলে না। সেই শুক্লপক্ষাস্তে হনুমানের সহিত সীতার দর্শন হইয়াছিল।