পাতা:বাল্মীকি রামায়ণ - উপেন্দ্রনাথ মুখোপাধ্যায়.pdf/৪৩৩

এই পাতাটির মুদ্রণ সংশোধন করা প্রয়োজন।

আরণ্যকাণ্ড প্রতি লোভ হওয়াতে তুমি তাহার অনুগমন করিতেছ না ; সেই জন্য রামের এই বিপদ তোমার প্রিয় জ্ঞান হইতেছে এবং তাহার প্রতি তোমার মেহ নাই। সেই জন্য তুমি মহাদু্যতি রামকে না দেখিয়াও নিশ্চিন্ত বসিয়া আছ। কিন্তু তুমি যে রামের অধীন হইয়া বনে আসিয়াছ, তিনি তথায় সংশয়াপন্ন হইলে, এ স্থানে থাকিয়া মৎকর্তৃক কি কাৰ্য্য অনুষ্ঠিত হইবে ? বৈদেহী বাষ্পশোক-সমন্বিত হইয়া বধূর ন্যায় ত্ৰাসযুক্ত হইয়া এই প্রকার বলিতে লাগিলে, লক্ষণ র্তাহাকে কহিলেন,—১-৯ জানকি ! দেব, দানব, গন্ধৰ্ব্ব, রাক্ষস, অসুর ও পন্নগ কেহই আপনার ভৰ্ত্তাকে জয় করিতে সক্ষম নহে ; এ বিষয়ে কোন সন্দেহ নাই । অয়ি শোভনে । দেব, দানব, গন্ধৰ্ব্ব, রাক্ষস, পিশাচ, মনুষ্য, কিন্নর, মৃগ ও বিহঙ্গম ইহাদের মধ্যে এমন কেহই নাই যে, যুদ্ধে ইন্দ্র তুল্য রামের প্রতিদ্বন্দ্বি তা করিতে সমর্থ হয়। ফলতঃ, রামকে যুদ্ধে বধ করা কাহারও সাধ্যায়ত্ত নহে; অতএব আপনার এ প্রকার বলা উচিত হয় না। আর আপনাকে রাম বিনা একাকিনী এই অরণ্যমধ্যে ত্যাগ করিতেও কোনক্রমেই আমার সাহস হইতেছে না । ইন্দ্রাদি বলবানগণও স্বকীয় বলে রামের বল নিবারণ করিতে সক্ষম হয়েন না। অথবা স্বয়ং ঈশ্বর ও দেবগণের সহিত ত্রিলোক একত্র মিলিত হইলেও, রামকে পরাজয় করিতে পারে না ; অতএব আপনি শোক ত্যাগ করিয়া সুস্থচিত্ত হউন। আপনার ভর্তা রাম মৃগেত্তিম হনন করিয়া শীঘ্রই প্রত্যাগমন করিবেন। আর এই স্বর নিশ্চয়ই র্তাহার নহে এবং কোন দৈবপ্রেরিতও নহে। নিশাচর মারীচই গন্ধৰ্ব্বনগরসদৃশী মিথ্যা মায়া বিস্তার করিয়া, এই প্রকার চীৎকার ১। আকাশে প্রাসাদ, ৰন-শোভিত অপূৰ্ব্ব নগর ক্ষণকালের জষ্ঠ দৃষ্ট হইয়া পুনরায় অন্তর্ষিত হয়, উহার নাম গন্ধৰ্ব্ব নগর। এই মায়ামৃগ গন্ধৰ্ব্বনগর সদৃশ ব্যামোহজনক মারীচের অপূৰ্ব্ব মোহজনিক শক্তি অgই—বtহার প্রভাবে আপনি মুগ্ধ হইয়াছেন, কেহ কেই গন্ধৰ্ব্বনগর এ পদে ইন্দ্ৰজাল কহে । ©öጫ করিতেছে। লয়ি জানকি ! মহাত্মা রাম-কর্তৃক আপনি আমার নিকট ন্যস্ত আছেন ; এই জন্য আপনাকে ত্যাগ করিতে আমার উৎসাহ হইতেছে না। অয়ি কল্যাণি । অয়ি বরারোহে ! এই সকল রাক্ষসের সহিত আমাদের শত্রুত হইয়াছে। দেবি ! থরকে নিধন করিয়া জনস্থান ধবংস করাতে তদুপলক্ষে রাক্ষসেরা এই মহাবনমধ্যে আমাদিগকে নানfপ্রকার বাক্যপ্রয়োগ করিয়া থাকে। জানকি ! সাধুগণের হিংসা করাই রাক্ষসদিগের একমাত্র আমোদ-প্রমোদ ; অতএব এ বিষয়ে চিন্তিত হওয়া কোন অংশেই তাপনার উচিত নহে। ১০-২০ লক্ষণ এই প্রকার কহিলে, ক্রোধবশতঃ জানকীর লোচনদ্বয় রক্তবর্ণ হইয়া উঠিল। তিনি পরুষবাক্যে সত্যবাদী লক্ষণকে কহিতে লাগিলেন, রে নৃশংস ! কুলনাশক ! তুমি রামকে মারিয়া, দয়া করিয়া আমায় রক্ষা করিতে উদ্ভত হইয়াছ ; অতএব এই দয়া অাৰ্য্যজনোচিত নহে। বুঝিলাম, রামের এই মহৎ ব্যসন তোমার পরম প্রীতিকর হইয়াছে ; সেই জন্য তুমি র্তাহাকে বিপদগ্ৰস্ত দেখিয়া এই প্রকার কথা বলিতেছ। লক্ষণ ! তোমার স্যায় নিয়ত প্রচ্ছন্নচারী নৃশংসস্বভাব শক্রর মনে যে কদর্ঘ্য অভিপ্রায় থাকিবে, ইহা বিচিত্র নহে। তুমি নিতান্ত দৃষ্টপ্রকৃতি, সেই জন্য রাম একাকী বনে আসিলে, আমার প্রতি লোভ বশতঃ তুমিও একাকী তাহার অনুগামী হইয়াছ ; অথবা ভরত কর্তৃক প্রযুক্ত হইয়াই এরূপ করিয়াছ। কিন্তু লক্ষণ ! তুমি বা ভরত যাহা মনে করিয়াছ, তাহা সিদ্ধ হইবে না। আমি পদ্মপলাশলোচন নীলোৎপলশ্যাম রামের আশ্রিত গৃহিণী হইয়া কিরূপে ইতর জনে অভিলাষিণী হইব ? অতএব লক্ষণ ! আমি তোমার সমক্ষে নিশ্চয়ই প্রাণত্যাগ করিব ; রাম বিনা ক্ষণকাল আমি ইহলোকে প্রাণ ধারণ করিব না। সীতার এইরূপ রোমহর্ষণ পরুষবাক্য শ্রবণ করিয়া জিতেন্দ্রিয় লক্ষণ কৃতাঞ্জলি হইয়া তাহাকে কহিলেন। ২১-২৮