পাতা:বাল্মীকি রামায়ণ - উপেন্দ্রনাথ মুখোপাধ্যায়.pdf/৪৪৯

এই পাতাটির মুদ্রণ সংশোধন করা প্রয়োজন।

O আরণ্যকাণ্ড র্তাহাকে আকাশপথে হরণ করিয়া যাইতে লাগিল । তৎকালে সীতার অগ্নিবর্ণ, শব্দায়মান, তদীয় দেহভূষণ সমস্ত ভ্রন্ট হইয়া পরাতলে পতিত হইতে লাগিল। বোধ হইল, যেন তারকাস্তবক গগন হইতে বিচ্যুত হইতেছে। সীতার সদৃশ দীপ্তি বিশিষ্ট হারগুচ্ছ তদীয় স্তনদ্বয়ের মধ্য হইতে ভ্ৰষ্ট হইয়া গগনত্রটি গঙ্গার স্যায় শোভা বিস্তার করত পতিত হইতে লাগিল । উৰ্দ্ধগত বায়ুর সঞ্চার বশতঃ শিরঃসমূহ কম্পিত হওয়াতে, বিবিধ বিহঙ্গমযুক্ত বৃক্ষ সকল যেন জানকীকে "ভয় নাই !” এই কথা বলিতে লাগিল। পদ্ম সকল বিধবস্ত এবং মৎস্য প্রভৃতি জলচর সমস্ত ত্রস্ত হওয়াতে বোধ হইল, যেন সরোবর সকল সখীর ন্যায় উৎসাহহীনা জানকীর শোকে বিহবল হইয়াছে । সিংহ, ব্যায়, মৃগ ও বিহঙ্গমসমূহ রোষভরে সীতার ছায়ামুসরণে চতুর্দিক হইতে আসিয়া পশ্চাৎ পশ্চাৎ ধাবমান হইল। সাতা হ্ৰিয়মাণা হইলে পর্বত সকল শৃঙ্গরূপ বহুপরম্পর উত্তোলন করিয়া, প্রস্রবণরূপ অশ্রদ্ধারাকুল-বদনে যেন ক্ৰন্দন করিতে লাগিল। শ্রীমান দিবাকর ও তদবস্থাপন্না জানকীকে দর্শন করিয়া, দান ও প্রভাবিহীন হইলেন এবং তদীয় মণ্ডলপ্রদেশ পাণ্ডুরবর্ণ হইয়া উঠিল। প্রাণী মাত্রেই দলে দলে মিলিত হইয়া, এই বলিয়া বিলাপ করিতে লাগিল, “রাবণ যখন রাম-ভাৰ্য্যা সীতাকে হরণ করিতেছে, তখন সত্য, দয়া, ঋজুতা ও ধৰ্ম্ম সমুদায়ই অন্তৰ্হিত হইয়াছে।” মৃগশাবকগণ ত্রাসান্বিত হইয় বারংবার শোভাণুগু-নয়নে উদ্বীক্ষণ-পূর্বক দীনমুখে রোদন করিতে লাগিল। এই সকল দর্শন করিয়া, বনদেবতাদের শরীর নিরতিশয় কম্পিত হইয়া উঠিল। সীতা তাদৃশ দুর্দশাগ্রস্ত হইয়া, রাম ও লক্ষণের উদ্দেশে মধুর স্বরে ক্ৰন্দন ও উচ্চৈঃস্বরে বিলাপ এবং বারংবার ধরাতল নিরীক্ষণ করিতেছেন ; র্তাহার কেশপাশ ইতস্ততঃ বিস্রস্ত ও তিলক লুপ্তপ্রায় হইয়াছে। দশানন আত্মবিনাশার্থ সেই মনস্বিনীকে دو سو (لي ঐ অবস্থায় হরণ করিল। অনন্তর মধুরহাস্যাননা সুন্দরদশনা জানকী রাম ও লক্ষণ উভয়কেই দেখিতে না পাইয়া, বন্ধুজন বিরহে মলিনমুখী ও অতিশয় ভয়পীড়িত হইরেন । ৩১-৪৪

  • = Pomo- - -

ত্ৰিপঞ্চাশং সৰ্গ রাবণ তাকাশে উৎপতিত হইল দর্শন করিয়া, জনক-ভূহিতা সীতা নিরতিশয় ভীত, উদ্বিগ্না ও দুঃখিত হইলেন। রোধ ও রোদন বশতঃ র্তাহার নয়নদ্বয় রক্তবর্ণ হইয়া উঠিল । তিনি করণস্বরে রোদন করিয়া, তৎকালে ভয়ঙ্কর-নয়ন রাক্ষসপতিকে কহিতে লাগিলেন,--রে রক্ষসধম রাবণ ! তামাকে একাকিনী জানিয়া, চুরি করিয়া পলায়ন করিতেড় । ইহাতে কি তোমার লজ্জা হইতেছে না ? রে দ্ভরাত্মন! বুঝিলাম, তুমি ভীরুস্বভাব, সেই জন্য আমাকে হরণ করিতে অভিলাষী হইয়া, মায়াময় মৃগরূপ ধারণ করিয়া, মদীয় ভর্তা রামকে অন্যত্র লইয়া গিয়াছ। সম্প্রতি যিনি তামার রক্ষা করিতে উদ্যত হইয়াছিলেন, আমার শ্বশুরের সখা সেই এক বৃদ্ধ ধরাজকেও নিপাতিত করিয়াছ। রে রাক্ষসাধম! তোমার যে বীরত্ব নাই, তাহা ইহাতেই জানা যাইতেছে ; তুমি আমায় স্বীয় নাম শ্রবণ করাইয়াই হরণ করিলে ; আমি তোমা-কর্তৃক যুদ্ধে জিতা হই নাই। রে নীচ ! নিজস্কনে পরস্ত্রী-হরণ রূপ ঈদৃশ গর্হিত কৰ্ম্ম করিয়া তোমার লজ্জা হইতেছে না ? রে শূরমানি! তুমি যে এই অতি নৃশংস ও জঘন্য কাৰ্য্য করিলে, ব্যক্তিমাত্রেই ইহার ঘোষণা করিবে । তুমি আপনার যে শৌর্য ও দৈহিক বলের কথা বলিয়াছিলে, তোমার সেই শৌৰ্য্য ও বলে ধিক ! তোমার কুলের কলঙ্কজনক ঈদৃশ চরিত্রেও ধিক্ । তুমি এইরূপে হরণ করিয়া দ্রুতবেগে ধাবিত হইতেই ; মৃতরাং আমি কি করিতে পারি। কিন্তু