পাতা:বাল্মীকি রামায়ণ - উপেন্দ্রনাথ মুখোপাধ্যায়.pdf/৪৫১

এই পাতাটির মুদ্রণ সংশোধন করা প্রয়োজন।

O আরণ্যকাণ্ড ধনুৰ্ম্মত্ত বাণের ন্যায় দেখিতে দেখিতেই আকাশপথে সরিৎ, সরোবর, ৰন ও পৰ্ব্বত সকল অতিক্রম করিল এবং অবিলম্বেই নদী সকলের তাশ্রয়, তিমি ও নক্রসমূহের আবাসভূত, বরুণালয়, অক্ষয় সাগর অতিক্রম করিয়া গেল। রাবণ জানকীকে হরণ করিলে, জগন্মাতার অপহরণ জন্য ক্ষোভবশতঃ বরুণালয় সমুদ্র তরঙ্গবিহীন এবং তত্ৰত্য মীন ও বৃহৎ বৃহৎ সৰ্প সকল স্তব্ধ হইয়া রহিল । অন্তরীক্ষচারী চারণগণ কহিতে লাগিল,—রাবণকে আর বঁাচিতে হইবে না, এই পৰ্য্যন্তই তাহার শেষ হইল। সিদ্ধগণও এইরূপ বলিতে লাগিলেন । এ দিকে রাবণ আত্মপরিত্রাণের নিমিত্ত বিচেষ্টমান সীতাকে আপনার সাক্ষাৎ মৃত্যুরূপে ক্রোড়ে ধারণপূর্বক লঙ্কাপুরীতে প্রবিস্ট হইল। সে সম্যক বিভক্ত, মহাপথ-সমুহে বিরাজিত, সুবিস্তৃত, বক্তজনাকীর্ণ কক্ষণসমুহে বিভূষিতা লঙ্কা নগরীতে প্রবেশ-পূর্বক আপনার অন্তঃপুরে গমন করিয়া, শোকমোহ-সমন্বিত কুটিলাপাঙ্গী সীতাকে তথায় স্থাপন করিল । ১-১৩ বোধ হইল, যেন ময়দানব স্বীয় পুরে আস্থরী মায়া সন্নিবিষ্ট করিল। ই দশানন সীতাকে অন্তঃপুরে স্থাপন করিয়া ঘোরদর্শন পিশাচাদিগকে আদেশ করিল,—কোন স্ত্রী বা পুরুষ আমার বিনানুমতিতে সীতাকে যেন দেখিতে না পায়। মুক্তা, মণি, সুবর্ণ, বস্ত্র ও অলঙ্কার ইত্যাদি যে যে বস্তু সীতা ইচ্ছা করিবে, আমি আজ্ঞা করিতেছি, তৎসমস্তই ইহাকে প্রদান করিবে। জ্ঞানবশতঃ অথবা অজ্ঞানবশতঃ হউক, সীতাকে কোনরূপ অপ্রিয় কথা বলিলে তাহার জীবন আমার প্রিয় নহে । ব্রহ্মার বরে মোহিত প্রতাপশালী দশানন রাক্ষসীদিগকে এইপ্রকার আদেশ করিয়া, কিংকৰ্ত্তব্য চিন্ত করিতে করিতে অন্তঃপুর ২ । ময় দানব জাম্বরী মায়—আশ্চৰ্য্যশক্তিযুক্তমায়া স্বয়ংপ্রভা রাষ্ট্ৰী স্ত্রীকে গৰ্ত্তমধ্যে স্থাপন করিয়াছিল, ইহা অঙ্গদাদির সীতাম্বেষণ কালে বিবৃত হইবে। Woly S} হইতে বহির্গত হইয়া, আট জন মহাবীর মাংসভোজী রাক্ষসকে দর্শন করিল। সে সেই রাক্ষসদিগকে দর্শন করিয়া, তাহদের বলবীৰ্য্যের প্রশংসা করত কহিতে লাগিল—তোমরা বিবিধ শস্ত্র ধারণ করিয়া, শত্র এ স্থান হইতে খরের আলয়ভুমি জনশূন্ত জনস্থানে গমন কর এবং তোমরা বল ও পৌরুষ অবলম্বন করিয়া ও ভয় দূরে নিক্ষেপ করিয়া, জনশূন্য জনস্থানে অবস্থিতি কর । তথায় খর ও দূষণের সহিত আমার যে মহাবার বন্ত সৈন্য সন্নিবেশিত ছিল, রামের বাণে সকলেই নিহত হইয়াছে ; তজ্জন্য অভূতপূর্ব ক্রোধে আমার ধৈর্য্যলোপ হইয়াছে এবং রামের প্রতি মহান বৈরভাব সমুপস্থিত হইয়াছে। এক্ষণে পরম শক্ৰ রামের প্রতি সেই বৈরনিৰ্য্যাতনের বাসনা করি। যুদ্ধে সেই মহাশক্রকে বধ না করিলে আমার নিদ্রা হইবে না। যেমন নিধন পুরুষ ধনলাভে সুখী হয়, তক্রপ অধুনা আমি খর-দূষণ-বিনাশী রামকে বিনাশ করিয়া সুখলাভ করিব। তোমরা জনস্থানে বাস করিয়া, রাম কখন কি করিবে, সৰ্ব্বদা এ বিষয়ের যথাযথ সংবাদ সংগ্ৰহ করিবে। সকলেই অপ্ৰমত্তভাবে তথায় গমন কর, এবং সর্বদা রামের বধার্থ যত্ন করিবে। আমি পূর্বে অনেকবার যুদ্ধস্থলে তোমাদের বলের পরিচয় পাইয়াছি । এই জন্যই তোমাদিগকে সেই জনস্থানে সন্নিবেশিত করিলাম । আট জন রাক্ষস এই মহাৰ্থ মিষ্ট বাক্য অবধারণ করিয়া ও রাবণকে অভিবাদন করিয়া, লঙ্কা ত্যাগ করত জনস্থানের অভিমুখে অন্যের অদৃশুভাবে একত্র প্রস্থান করিল। এইরূপে রাবণ সীতাকে পরম প্রহৃস্টচিত্তে গ্রহণ ও স্বগৃহে স্থাপন করিয়া, রামের সহিত নিরতিশয় শক্রতাসাধন-পূর্বক মোহ প্রযুক্ত আহলাদিত হইল।” ১৪-৩০ ৩ । আনন্দের কারণ—গরনিহন্তা রাম এইবার ভার্ষ্যা-বিরহে অতিশয় থিয় হইবে, সুতরাং তাহাকে বধ করা আমার পক্ষে স্নকর হইবে।