পাতা:বাল্মীকি রামায়ণ - উপেন্দ্রনাথ মুখোপাধ্যায়.pdf/৪৫২

এই পাতাটির মুদ্রণ সংশোধন করা প্রয়োজন।

8 سوانS. পঞ্চপঞ্চাশৎ সর্গ রাবণের মতিভ্ৰম জন্মিয়াছিল ; সেই জন্য সে ভীষণপ্রকৃতি মহাবল আট জন রাক্ষসকে জনস্থানে নিয়োগ করিয়া, আপনাকে কৃতকৃত্য মনে করিল। অনন্তর সে জানকীকে চিন্তা করিতে করিতে কামবাণে প্রপীড়িত হইয়া তাহাকে দেখিবার জন্য অতিশীঘ্র রমণীয় গৃহে প্রবিষ্ট হইল। রাক্ষসপতি রাবণ সেই গৃহে প্রবেশ করিয়া, দুঃখপরায়ণ সীতাকে রাক্ষসীমধ্যে দেখিতে পাইল । সীতা শোকভারে নিরতিশয় নিপীড়িত, সাতিশয় দীনভাবাপন্ন ও অশ্রপূর্ণমুখ হইয়া অবস্থান করিতেছিলেন, দেখিলে বোধ হয়, নৌকা বায়ুবেগে আক্রান্ত হইয়া সাগরমধ্যে মগ্ন হইতেছে, অথবা মৃগী যেন যুথভ্রষ্ট হইয়া, কুকুরগণপরিবেষ্ঠিত হইয়াছে । তিনি শোকবশে বিবশ ও ব্যাকুল হইয়া অধোমুখে উপবিষ্ট ছিলেন। রাক্ষসপতি রাবণ সন্মুখীন হইয়া, সীতার ইচ্ছা না থাকিলেও, বলপূর্বক তাহাকে সেই দেবগৃহসদৃশ দিব্য গৃহ দেখাইতে লাগিল। ঐ গৃহ হৰ্ম্ম্য ও প্রাসাদপরম্পরা-পরিপূর্ণ, সহস্ৰ সহস্ৰ স্ত্রীগণে সমাকীর্ণ এবং নানা পক্ষী ও নানারভু-সমন্বিত । উহার স্তন্তু সকল হস্তিদন্ত, স্বর্ণ, স্ফটিক, জত ও বৈদূৰ্য্য-নিৰ্ম্মিত, পরম চিত্রিত এবং অতিশয় দৃষ্টি-মনোহর । তত্ৰত ভূষণ সমস্ত তপ্তকাঞ্চনময় এবং তথায় দিব্য দুন্দুভি সকল নিরন্তর বাদিত হইতেছে। রাবণ সীতার সহিত ঐ গৃহের কাঞ্চনময় বিচিত্ৰসোপান-সমূহে আরোহণ করিল। উহা হস্তিদন্ত ও রৌপ্যনিৰ্ম্মিত, দেখিতে অতি সুন্দর এবং স্বর্ণময় জালসমূহে আবৃত। তথায় স্বধাধবলিত ও মণিসমূহে বিচিত্রিত ভূমিভাগ এবং প্রাসাদশ্রেণী চতুর্দিকে প্রতিষ্ঠিত রহিয়াছে। দশগ্ৰীব শোকসমন্বিতা সীতাকে ঐ সকল এবং নানাজাতীয় পুষ্পসংকীর্ণ পুষ্করিণী ও দীর্বিক সমস্ত দর্শন করাইতে লাগিল। এইরূপে পাপাত্ম রাবণ জানকীকে প্রবুদ্ধ বাল্মীকি-রামায়ণ করিবার অভিপ্রায়ে আপনার সেই সমস্ত দিব্য গৃহ প্রদর্শন করাইয়া কহিতে লাগিল । ১-১৩ জানকি ! বালক ও বৃদ্ধ ব্যতীত যে উগ্ৰকৰ্ম্ম দ্বাত্রিংশৎ কোটি রাক্ষস আছে, আমি তাহদের সকলেরই প্রভু। আমার একেরই এক সহস্র ভূত্য আছে। অধুনা আমার এই সমুদয় রাজ্যতন্ত্র তোমারই অধীন । অয়ি বিশালাক্ষি ! আমার জীবন পৰ্য্যন্তও তোমার অধীন। অধিক কি, তুমি আমার প্রাণ হইতেও প্রিয়তম । মৈথিলি ! আমার অন্তঃপুরে যে সকল উত্তম স্ত্রী আছে, তুমি আমার ভাৰ্য্যা হইয়া, তাহদের সকলেরই প্রধান হও । আমি যাহা বলিলাম, তাহা তোমার পক্ষে বিশেষ হতজনক ; তুমি ইহাতে সম্মত হও । অন্য প্রকার অভিপ্রায় করিয়া কি করিবে ? তোমার জন্য নিতান্ত সন্তপ্ত হইয়াছি। প্রসন্ন হইয়। আমাকে ভজনা কর । চতুর্দিকে সাগরবেষ্টিত শতযোজনবিস্তৃত এই লঙ্কাপুরী, ইন্দ্রের সহিত দেব ও দানব সকলও ইহাকে কোনরূপে পরাভূত করিতে পারে না। কি দেব, কি গন্ধৰ্ব, কি যক্ষ, কি ঋষি, ইহাদের মধ্যে কাহাকেও এমন দেখি না, যে ব্যক্তি বীরত্বে আমার সমকক্ষ হইতে পারে। দীন, তপস্বী, রাজ্যভ্রষ্ট, পাদচারী, ক্ষুদ্রপ্রাণ মানুষ রামকে লইয়া কি করিবে ? অতএব সীতে ! আমিই তোমার উপযুক্ত স্বামী ; আমায় ভজনা কর । হে ভীরু ! যৌবনও চিরস্থায়ী নহে ; অতএব আমার সহিত এই লঙ্কানগরে বিহার কর । বরাননে । রামকে দেখিবার জন্য আর বাসনা করিও না। যেমন কেহ আকাশমগুলে বায়ুকে ধমুকের পাশ দ্বারা আবদ্ধ করিতে বা প্রদীপ্ত অগ্নির নিৰ্ম্মল শিখ হস্ত দ্বারা ধারণ করিতে পারে না, তদ্রুপ সে মনোরথ দ্বারাও এখানে আগমন করিতে পারিবে না। অয়ি শোভনে । সমুদায় ভুবনে এমন কাহাকেও দেখি না, যে ব্যক্তি বিক্রমপ্রকাশপূর্বক আমার বাহুরক্ষিত তোমাকে লইয়৷