পাতা:বাল্মীকি রামায়ণ - উপেন্দ্রনাথ মুখোপাধ্যায়.pdf/৪৬১

এই পাতাটির মুদ্রণ সংশোধন করা প্রয়োজন।

আরণ্যকাও কখন উল্লম্ফন, কখন বা দিগ বিদিগ, ভ্রমণ করিতে আরম্ভ করিলেন ; কখন উন্মত্তের ন্যায় দৃষ্ট হইতে লাগিলেন ; কখন প্রিয়ার অন্বেষণ-তৎপর হইয়া, বেগভরে নদী, পৰ্ব্বত, প্রস্রবণ ও কাননসকল ভ্রমণ করিতে প্রবৃত্ত হইলেন ; কোথাও স্থির হইয়া থাকিতে পারিলেন না । তৎকালে তিনি এক অতি বৃহৎ মহারণ্যে প্রবিষ্ট হইয়া, তাহার চতুদিকে জানবীর তন্ন তন্ন অনুসন্ধান করিয়াও র্তাহার অভিলাষ পুর্ণ হইল না ; পুনরায় তিনি প্রেয়সীর অন্বেষণে পরম পরিশ্রম করিতে লাগিলেন। ২১-৩৮ க একষষ্টিতম সর্গ তা শ্রমপদ ও পণশাল শূন্য এবং আসন সকল ইতস্ততঃ পতিত রহিয়াছে অবলোকন করিয়া, চতুদিক সবিশেষ নিরীক্ষণ-পূর্বক শ্রীরাম উচ্চৈঃস্বরে কহিতে লাগিলেন, লক্ষণ | সীতা কোথায় ? এখান হইতেই বা তিনি কোন স্থানে গমন করিয়াছেন ? হে সৌমিত্রে ! কোন ব্যক্তি প্রিয়াকে হরণ অথবা ভক্ষণ করিয়াছে ? অয়ি জানকি! যদি বৃক্ষের অন্তরালে লুক্কায়িত থাকিয় আমাকে উপহাস করিতে ইচ্ছা হইয়া থাকে, তাহ হইলে যথেষ্ট হইয়াছে । দেখ, আমি যার-পর-নাই দুঃখে অভিভূত হইয়াছি। এ সময় আসিয়া শীঘ্র আমাকে সান্তন কর। সৌম্যে ! তুমি যে ঐ সকল সুবিশ্বস্ত মৃগ-শিশুদিগের সহিত ক্রীড়া করিতে, ইহারা তোমা-বিহনে অশ্রব্যাপ্তনয়নে চিন্তায় মগ্ন হইয়াছে। লক্ষণ ! আমি সীতবিরহে কখনই জীবন ধারণ করিতে পারিব না । কারণ, সীতাহরণ জন্য ঘোরতর শোক আমায় আচ্ছন্ন করিয়াছে । পিতৃদেব মহারাজ দশরথ নিশ্চয়ই পরলোকে দেখিতে পাইবেন এবং নিশ্চয়ই আমায় এই কথা বলিবেন, রাম ! মৎকর্তৃক নির্বাসিত তুমি আমার নিকট যে প্রতিজ্ঞা করিয়াছিলে, তুমি সেই প্রতিজ্ঞ পূর্ণ না করিয়া কিরূপে (t ә এসাক্ষণং পাইলেন না। రిస్సిలి এখানে আমার নিকটে আসিলে ? স্বেচ্ছাচারী অনার্য্য মিথ্যাবাদী তোমাকে ধিক্ । পরলোকগত আমার পিতা বিশিষ্টভাবে নিশ্চয়ই এইরূপ বাক্য প্রয়োগ করিবেন। অয়ি বরারোহে জানকি! অধুনা আমি শোক-সন্তপ্ত ও বিবশ এবং দীনভাবাপন্ন ও ভগ্নমনোরথ হইয়াছি। অয়ি সুমধ্যমে । কীৰ্ত্তি যেমন কুটিলচরিত্র ব্যক্তিকে পরিত্যাগ করে, তুমিও সেইরূপ আমাকে পরিত্যাগ করিয়া কোথায় যাইতেছ ? আমি তোমার বিরহে স্বায় জীবন পরিত্যাগ করিব । রাম সাতার দর্শনাভিলাষা ও ভাতি দুঃখীৰ্ত্ত হইয়া, এই প্রকার বিলাপ করিতে লাগিলেন ; কিন্তু তাহার তাহাতে তিনি সীতাশোকে নিমগ্ন হষ্টয়া, সুবিপুলপঙ্কপতিত মহাগজের ন্যায় একান্ত অবসন্ন হইয়া উঠিলেন । তদর্শনে লক্ষণ তদীয় হিতাভিলাষে তাহাকে বলিতে লাগিলেন । ১-১৩ হে মহাবুদ্ধে ! আপনি বিষাদ করিবেন না। আমার সহিত চেস্টা করুন, অবশ্য সাঁতার দর্শন পাইবেন । হে বার ; এই বহুকনদর-শোভিত গিরি-কানন ; জানকা এই কাননে ভ্রমণ করিতে অত্যন্ত ভালবাসেন এবং তজ্জন্য নিরতিশয় অহলাদে মত্ত হইয়া থাকেন ; সুতরাং তিনি ঐ বনমধ্যে প্রবেশ কিম্বা কোন পুষ্পশোভিত পদ্মাকর সরোবরে গমন করিয়াছেন ; অথবা মৎস্য ও বঞ্ছল নামক বিহগ-সেবিত বনে গমন করিয়া থাকিবেন ; কিম্বা অামাদিগকে ত্ৰাসিত করিবার মানসে অরণ্যের কোন স্থানে লুকাইয়া আছেন। হে পুরুষসিংহ! আমি বা আপনি কেমন করিয়া তাহীকে অনুসন্ধান করিয়া বাহির করিতে পারি, ইহাই জানিবার নিমিত্ত তিনি ঐরপে লুক্কায়িত হইয়াছেন। হে শ্ৰমন । শীঘ্রই তাহার অন্বেষণে যত্ন করি চলুন । হে কাকুৎস্থ ! আপনার যদি বোধ হয়, তিনি এই অরণ্যে আছেন, তাহা হইলে আমরা ইহার সকল অংশই অন্বেষণ করিব । শোকে আর আচ্ছন্ন হইবেন না। লক্ষণ