পাতা:বাল্মীকি রামায়ণ - উপেন্দ্রনাথ মুখোপাধ্যায়.pdf/৪৭৩

এই পাতাটির মুদ্রণ সংশোধন করা প্রয়োজন।

আরণ্যকাও সমাকীর্ণ অনন্তর তাহারা সেই বনমধ্যে পাতালসম গভীর গিরি-গুহা অবলোকন করিলেন। ঐ গুহ নিত্য অন্ধকারে সমাবৃত। র্তাহারা তথায় উপনীত হইয়া তাহার নিকটে ভয়ঙ্করাকৃতি ও বিকৃতবদনা এক রীক্ষসীকে দেখিতে পাইলেণ। রাক্ষসী দেখিতে তাতি ভয়ঙ্করী। উহাকে দর্শন করিলে স্বল্পপ্রাণ ব্যক্তিগণের ভয় জন্মিয় থাকে এবং স্বভাবতঃই জুগুপলার উদয় হয়। উহার উদর লম্বিত, দংষ্ট্র তীক্ষ, চৰ্ম্ম অতি কঠিন, স্বভাব ভয়ঙ্কর ও প্রচণ্ড এবং কেশপাশ আলুলায়িত । র্তাহারা দেখিলেন, রাক্ষসী ভয়ঙ্কর মৃগসকল ভক্ষণ করিতেছে। অনন্তর নিশাচরী সেই বীরযুগলের নিকটবর্তিনী হইয়া, *আইস, আমরা বিহার করিব? এই প্রকার বাগবিন্যাস-পূর্বক লক্ষণকে গ্রহণ করিল। লক্ষণ রামের অগ্ৰে অগ্ৰে গমন করিতেছিলেন । রাক্ষসী তাহাকে আলিঙ্গন করিয়া কহিতে লাগিল,— হে নাথ ! আমার নাম অয়োমুখী । অদ্য তোমার পরম লাভ হইল এবং তুমিই আমার প্রিয় হইলে । হে বীর । তাইস, আমার সহিত চিরজীবন নদপুলিনমধ্যে ও পর্বতদুর্গ-সমুহে বিহার করিবে । শক্রসূদন লক্ষণ এই কথায় ক্রুদ্ধ হইয়া, খড়গ উত্তোলন-পূর্ববক রাক্ষসীর নাসা, কর্ণ ও স্তন ছেদন করিয়া দিলেন। কর্ণ ও নাসিক ছিন্ন হইলে, সেই ঘোরদর্শন রাক্ষসী বিকট স্বরে চীৎকার করিয়া, যথা হইতে আসিয়াছিল, সেই দিকে ধাবিত হইল । সে গমন করিলে মহীতেজা শত্রুমুদন রাম ও লক্ষণ উভয় ভ্রাতা বেগে গমন করত এক গহনবন প্রাপ্ত হইলেন। অনন্তর সত্যবিশিষ্ট, শীলবান পবিত্রস্বভাব ও পরমতেজস্বী লক্ষণ বদ্ধাঞ্জলি হইয়া, দীপ্ততেজা রামকে কহিলেন । ১-২০ ভ্ৰাতঃ ! আমার বামবাহু ঘন ঘন স্পন্দিত ও মন যেন উদ্বিগ্ন হইতেছে এবং প্রায়ই ভুলক্ষণ সকলও লক্ষিত হইতেছে । অতএব আৰ্য্য ! আপনি সজ্জীভূত হইয়া আমার বাক্য শ্রবণ করুন। এই মুহূৰ্ত্তেই যে 8 o (t ভয় উপস্থিত হইবে, নিমিত্ত সকল তাহা স্পষ্টই বলিয়া দিতেছে। ঐ অতি ভয়ানক বঞ্জলপক্ষী যেন আমাদের যুদ্ধবিজয় কীৰ্ত্তন করত শব্দ করিতেছে । অনন্তর মহাতেজ রাম ও লক্ষণ সেই সমগ্র বন অন্বেষণ করিতে থাকিলে, এক বিপুল শব্দ যেন ঐ বন ভগ্ন করত প্রান্তভূত হইল। সেই গহন-বন হঠাৎ প্রচণ্ড বায়ুতে বেষ্ঠিত হইয়া উঠিল এবং তন্মধ্যে এক শব্দ সমস্ত বন নিনাদিত করত উৎপন্ন হইল। রাম লক্ষণের সহিত অসিধারণ-পূর্বক সেই শব্দ কোথা হইতে উত্থিত হইল, জানিবার জন্য অভিলাষী হইয়া, এক অতি বিপুলবক্ষ বৃহৎকায় রাক্ষসকে সহসা দর্শন করিলেন । তাহার উরোদেশ সীতিশয় বিস্তৃত এবং তাহার নাম কবন্ধ। সে র্তাহীদের সম্মুখে আসিয়া উপনীত হইল। তাহার মস্তক ও গ্রীবা নাই, শরীর সাতিশয় বদ্ধিত, মুখ উদরমধ্যে সন্নিহিত, রোম সকল নিশিত ও তীক্ষু, আকার মহাগিরির ন্যায় উন্নত, স্বর মেঘ-গৰ্জ্জন-সদৃশ, রূপ নীল-মেঘ-সম, স্বভাব ও আকৃতি অতি ভয়ঙ্কর এবং তাহার একটি নেত্র ললাটে সন্নিবদ্ধ । ঐ নেত্র অনল-শিখার হ্যায় প্রদীপ্ত, অতি বৃহৎ-পক্ষ-সমন্বিত, পিঙ্গলবণ, বিপুল ও আয়ত এবং তাহার অন্য নেত্র উরস্থলে সন্নিহিত। ঐ নেত্র অতিশয় ভষঙ্কর ও তীক্ষ-দর্শনক্ষম । তাহার মুখও সাতিশয় প্রকাগু ও প্রকাগু-দশনপংক্তিতে পরিবৃত ৷ সে, সেই মুখ বারংবার লেহন করিতেছে । অপিচ, স্বীয় যোজনায়ত ভয়ঙ্কর উভয় হস্ত পরিচালন করত ভলুক, সিংহ ও মৃগদিগকে ভক্ষণ করিতেছিল এবং উভয় হস্ত দ্বারা বিবিধ মৃগ, বিহঙ্গম, ভলুক ও মৃগযুথদিগকে অক্রিমণ ও বিকমণ করিতেছিল। সে সমাগত রামলক্ষণের গমনপথ অবরোধ করিয়া অবস্থিত ছিল। অনন্তর তাহারা এক ক্রোশমাত্র পথ অতিক্রম করিয়া, সেই অতীব ঘোরদর্শন, দারুণ, ভয়ঙ্করাকার কবন্ধকে দেখিতে লাগিলেন। সে ভুজস্বয় দ্বারা জন্তুদিগকে সৰ্ব্বতোভাবে আকৰ্ষণ করিয়া থাকে এবং তাহার