পাতা:বাল্মীকি রামায়ণ - উপেন্দ্রনাথ মুখোপাধ্যায়.pdf/৪৭৫

এই পাতাটির মুদ্রণ সংশোধন করা প্রয়োজন।

আরণ্যকাণ্ড নিহত হওয়া ক্ষত্রিয়ের পক্ষে নিতান্ত নিন্দার বিষয় । র্তাহীদের এই প্রকার জল্পনা শ্রবণ করিয়া, নিশাচর কবন্ধ ক্রুদ্ধ হইয়া, বদন বিস্তার পূর্বক তাহাদিগকে ভক্ষণ করিতে উপক্রম করিল। তখন দেশকালজ্ঞ রাম ও লক্ষণ উভয়েই ঈষ্ট হইয়া খড়গ গ্রহণ-পূর্বক তদীয় বাহুদ্বয়ের মূলদেশ ছেদন করিলেন । সুদক্ষ রাম তাহার দক্ষিণ বান্ত এবং বীর্ম্যশালী লক্ষণ তাহার বাম হস্ত ছেদন করিলেন। বান্ত ছিন্ন হইলে ভয়ঙ্করস্বরসম্পন্ন মহাবান্ত কবন্ধ মেঘের দ্যায় ঘোরতর শব্দ করিয়া, গগনমণ্ডল ও দিষ্মণ্ডল নিনাদিত করত পতিত হইল । অনন্তর বাহুদ্বয় ছিন্ন হইল দেখিয়া, দানব কবন্ধ শোণিতসিক্তদেহে দীনভাবে তাহাদিগকে জিজ্ঞাসা করিল, তোমরা কে ? কবন্ধ এই প্রকার জিজ্ঞাসা করিলে মহাবল শুভলক্ষণ কাকুৎস্থ লক্ষণ তাহাকে কহিলেন,—ইনি ইয়াকুবংশীয় রাম নামে লোকমধ্যে বিখ্যাত ; আর আমি ইহার অনুজ, আমার নাম লক্ষণ । জননী কৈকেয়ী কর্তৃক রাজ্যপ্রাপ্তি নিবারিত হইলে, সৰ্পর্বত্যাগী হইয়া রাম বনে প্রত্ৰাজিত হইয়াছেন, এবং তামার ও ভাৰ্যার সহিত মহাবনে বিচরণ করিতেছেন । বনবাসকালে এই দেবতুল্য প্রভাবশালী রামেয় ভাৰ্য্যা রাক্ষস-কর্তৃক অপহৃত হইয়াছেন । আমরা তাহারই অন্বেষণে এখানে আসিয়াছি। তুমিই বা কে কবন্ধের ন্যায় অরণ্যপ্রান্তরে বিচরণ করিতেছ ? তোমার জঙ্ঘা ভগ্ন এবং বদনমণ্ডল অতিশয় দীপ্তিবিশিষ্ট ও বক্ষঃস্থলে নিবিষ্ট। লক্ষণ এই প্রকার উত্তর করিলে, ইন্দ্রের সেই বাক্য স্মরণ করিয়া কবন্ধ প্রতবাক্যে বলিল,— আপনারা উভয়েই পুরুষমধ্যে অগ্রগণ্য । আপনাদের আগমন ত শুভ ? অদ্য ভাগ্যানুসারে আপনাদিগকে অবলোকন করিলাম। আর আপনারা যে আমার বাহুবন্ধন ছেদন করিলেন, ইহাও আমার অতিশয় সৌভাগ্যের বিষয় সন্দেহ নাই। এক্ষণে আমি ঔদ্ধত্যপ্রযুক্ত যেরূপে এইরূপ বিরূপ রূপ প্রাপ্ত 8 o a হইয়াছি, যথাযথ কীৰ্ত্তন করিতেছি, শ্রবণ করুন । ১-১৯ একসপ্ততিতম সর্গ হে মহাবাহু রাম ! পূর্বে আমার রূপ সুৰ্য্য, চন্দ্র ও ইন্দ্রের শরীর-সদৃশ, মহাবলপরাক্রান্ত, ত্রিলোকবিখ্যাত এবং সকলেরই ছবিবভাব্য ছিল । পরে আমি এইরূপ লোক-ভয়ঙ্কর বিকট রূপ ধারণ করিয়া বনবাসী ঋষিদিগকে যখন তখন বিত্ৰাসিত করিতাম । একদা আমি এই রূপ ধারণ করিয়া, অরণ্যজাত বিবিধ ব্য দব্য-সঞ্চয়কারা মহৰ্ষি স্থূলশিরাকে ধৰ্ষিত ও কোপিত করিয়াছিলাম। পরে তিনি আমার প্রতি দৃষ্টিপাত করিয়া ভয়ঙ্কর অভিশাপ-বাক্য বলিলেন । ‘ঙ্গের এই লোক-নিন্দিত নৃশংস রূপই থাকুক। অনন্তর আমি ক্রুদ্ধ ঋষির নিকটে এই শাপমুক্তি প্রার্থনা করিলে তিনি কহিলেন,—রাম যে সময়ে তোমার হস্ত ছেদন করিয়া বিজন অরণ্যে তোমায় দগ্ধ করিবেন, সেই সময়েই তুমি আপনার সুবিপুল মনোহর আকার লাভ করিবে । লক্ষণ ! আমি দনুর শ্ৰীমান পুত্র । যুদ্ধস্থলে ইন্দ্রের শাপ-প্রযুক্ত ঈদৃশ কবন্ধরূপ প্রাপ্ত হইয়াছি। আমি কঠোর তপস্যা দ্বারা পিতামহকে তুষ্ট করিলে তিনি আমাকে দীর্ঘায়ু প্রদান করেন ; তৎপরে আমার চিত্তবিভ্রম ঘটিলে তাহাতে আমি গৰ্ব্বিত হইয়া বিবেচনা করিলাম, ইন্দ্র আমার কি করিবেন, আমি দীর্ঘ আয়ু প্রাপ্ত হইয়াছি, ইহা মনে করিয়া যুদ্ধে ইন্দ্রকে ধৰ্ষিত করিল:ন । অনন্তর তদীয় বাহুপ্রমুক্ত শতপৰ্ব্ব বজ দ্বারা আমার জঙ্ঘাদ্ধয় ভগ্ন ও মস্তক শরীরমধ্যে প্রবেশিত হইল । অনস্তর আমি মৃত্যু প্রার্থনা করিলেও তিনি আমাকে যমালয়ে প্রেরণ করিলেন না । এইমাত্র বলিলেন, পিতামহ ব্ৰহ্মার সেই বাক্য সত্য হউক । আমি কছিলাম, আপনার বজপ্রহারে