পাতা:বাল্মীকি রামায়ণ - উপেন্দ্রনাথ মুখোপাধ্যায়.pdf/৪৭৭

এই পাতাটির মুদ্রণ সংশোধন করা প্রয়োজন।

আরণ্যকাণ্ড দ্বিসপ্ততিতম সর্গ কবন্ধ এইপ্রকার কহিলে, নরশ্রেষ্ঠ রাম-লক্ষণ পৰ্ব্বতের একটি গৰ্ত্ত লাভ করিয়া উহার মধ্যে কবন্ধকে রাখিয়া অগ্নি প্রদান করিলেন । লক্ষণ মহোল্কাসমূহ প্রজ্বালিত করিয়া চতুদিকে অগ্নি সংযোগ করিলে চিত। সর্ববতোভাবে জ্বলিয়া উঠিল। তখন কবন্ধের ঘৃতপিগুসদৃশ মেদ-পরিপূর্ণ বৃহৎ শরীর মন্দ মন্দ দগ্ধ হইতে লাগিল । অনন্তর মহাবল কবন্ধ তৎক্ষণাৎ চিত। কম্পিত করিয়া, নিৰ্ম্মল বস্ত্র ও দিব্য-মাল্য ধারণপূর্বক ধূমবিহীন পাবকের স্যায় উত্থিত হইল এবং দিব্যকান্তি-বিশিষ্ট শরীরে বেগভরে সানন্দে তৎক্ষণাৎ বিমানে আরোহণ করিল। তাহার সমুদায় অঙ্গপ্রত্যঙ্গ অলঙ্কারে ভূষিত। অনন্তর সে অতিশয় উজ্জ্বল হংসযুক্ত যশস্কর বিমানে অবস্থিত হইয়া স্বীয় শরীরপ্রভায় দশদিক আলোকময় করিয়া অন্তরীক্ষে অবস্থিতিপূর্বক রামের প্রতি দৃষ্ট্রিনিক্ষেপ করিয়া বলিতে লাগিল,—হে রঘুনন্দন ! যেরূপ উপায়ে সীতাকে লাভ করিবেন, তাহার যথাযথ তত্ত্ব শ্রবণ করুন । সন্ধি, বিগ্রহ, যান, আসন, দ্বৈধাভাব ও সমাশ্রয় এই যে ছয়টি যুক্তি বা উপায় আছে, রাজারা ইহাদের সহায়ে সমুদায় বিষয় বিচার করিয়া থাকেন। তন্মধ্যে তুর্দশা-সময়ে সমাশ্রয়নামক যে উপায় অবলম্বন করা কৰ্ত্তব্য, তুর্দশার শেষদশা উপস্থিত হইলে লোকে তাহা আশ্রয় করিয়া থাকে ; আপনার এখন তাহাই কৰ্ত্তব্য হইয়াছে ; কেন না, আপনি লক্ষণের সহিত তাদৃশ দুর্দশাক্রান্ত ও রাজ্যাদি-ভ্ৰষ্ট হইয়াছেন। এইজথ্য আপনার ভাৰ্য্যা-হরণরূপ নিরতিশয় দুঃখও উপস্থিত হইয়াছে ; অতএব হে রাজবর । আপনাকে সপরিবারে অন্যের সহিত অবশ্যই সখ্যস্থাপন করিতে হইবে। আমি চিন্তা. করিয়া দেখিয়াছি, ঐরূপ উপায় অবলম্বন না করিলে আপনার ইষ্টলাভ সপ্তব নহে। রাম । আমি তাহার বৃত্তান্ত বলিতেছি, ৫২ 8 os শ্রবণ করুন। স্বগ্রীব নামে বানর স্বীয় ভ্রাতা ইন্দ্রনন্দন বালী-কর্তৃক দূরীকৃত হইয়া, বানরচতুষ্টয় সহিত পৰ্ব্বতশ্রেষ্ঠ ঋষ্যমুকে বাস করিতেছেন। ঐ ঋষ্যমুক প্রদেশ পম্পীপ্রদেশ দ্বারা অলঙ্কত হইয়াছে। মহাত্মা বালী রাজ্যের নিমিত্ত সুগ্ৰীবকে বিবাসিত করিয়াছেন । সুগ্ৰীব অতিশয় জিতেন্দ্রিয়, বীর, বানরগণের প্রধান, মহাবীৰ্য্যশালী ও তেজস্বী এবং সত্যপ্রতিজ্ঞ, অনন্যসাধারণ কান্তি, বিনয়, ধৈর্য্য, প্রজ্ঞা, মহত্ত্ব, কাৰ্য্যনৈপুণ্য, প্ৰগলভতা, দু্যতি, মহাবল ও পরাক্রম ইত্যাদি ভূষিত। তিনি নিশ্চয়ই সাঁতার অনুসন্ধানে আপনার সহায় ও মিত্র হইবেন, তাপনি তার শোকে চিত্ত সন্নিবেশ করিবেন না । কোন ব্যক্তিই ভবিতব্যের অন্যথা করিতে পারে না । হে ইক্ষাকুপ্রবর! কালেরও অতিক্রম কর। অনায়াসসাধ্য নহে । অতএব বীর । শীঘ্রই এ স্থান হইতে মহাপরাক্রমশালী সুগ্ৰীবের নিকট গমন করিয়া, র্তাহার সহিত মিত্রত করুন। হে রঘুনন্দন ! অদ্যই আপনি গমন করুন । ‘পরম্পর দ্রোহ করিব না’ এই প্রতিজ্ঞা প্রজ্বলিত বহি:সমীপে করিয়া সখ্য-বন্ধনে অবিদ্ধ হউন । কখনও সেই সুগ্ৰীবকে অবজ্ঞা করিবেন না । কেন না, তিনি কৃতজ্ঞ, কামরূপী ও বীর্য্যসম্পন্ন, বিশেষতঃ নিজেও সহায়ার্থী হইয়াছেন। আপনারাও র্তাহার অভিপ্রেত কাৰ্য্য সমাধা করিতে পরিবেন । ফলতঃ কাৰ্য্যাৰ্থ সুগ্ৰীব সফলমনোরথ বা বিফলমনোরথ হইলেও আপনাদের কাৰ্য্য-সাধন করিবেন । তিনি ঋক্ষরজার পুত্র, ভাস্করের ঔরসে জন্মগ্রহণ করিয়াছেন । বালীর সহিত শক্ৰতা করিয়া সৰ্ব্বদা শঙ্কিতভাবে পম্পতীিরে ভ্রমণ করিতেছেন। আপনি শীঘ্র অগ্নিসান্নিধ্যে আয়ুধস্থাপনপূর্বক সেই ঋষ্যমুকবাসী বনচার বানরের সহিত শপথ করিয়া সখ্য স্থাপন করুন। বানরশ্রেষ্ঠ সুগ্ৰীব অতিশয় কাৰ্য্যদক্ষ। তিনি পৃথিবীতে মনুষ্যমাংসভোজী রাক্ষসগণের সমুদায় স্থাম সর্ববতোভাবে অবগত