পাতা:বাল্মীকি রামায়ণ - উপেন্দ্রনাথ মুখোপাধ্যায়.pdf/৪৮২

এই পাতাটির মুদ্রণ সংশোধন করা প্রয়োজন।

8S 8 স্থাপিত এই সপ্তসাগর তীর্থেও আমরা যথাবিধানে স্নান ও পিতৃলোকের তর্পণ করিলাম। ইহাতে আমাদের যে অশুভ নষ্ট ও কল্যাণ উপস্থিত হইয়াছে, তদ্বারা আমার মন সম্প্রতি সাতিশয় উল্লসিত হইয় উঠিয়াছে। হে নরশ্রেষ্ঠ ! অচিরকালমধ্যেই আমার হৃদয়ে পরমমঙ্গল (মিত্ৰলাভাদি ) আবিভূতি হইবে, সুতরাং আইস, সেই প্রিয়দর্শনা পম্পায় গমন করি,—যে পম্পীর অনতিদূরে ঋষ্যমূক পৰ্ব্বত বিরাজিত । এক্ষণে সুৰ্য্যতনয় ধৰ্ম্মাত্মা সুগ্ৰীব বালীর ভয়ে ভীত হইয়া, বানরচতুষ্টয় সমভিব্যাহারে যে স্থানে বাস করিতেছেন, সেই ঋষ্যমূক পৰ্ব্বত নাতিদূরে দীপ্তি পাইতেছে। বানরশ্রেষ্ঠ স্থগ্রীবকে দেখিবার জন্য সেই স্থানে যাইবার জন্য অমি ত্বরাপরায়ণ হইয়াছি ; কেন না, সীতার অন্বেষণব্যাপার একমাত্র সুগ্ৰীবেরই আয়ত্ত । রাম এই প্রকার বাগবিন্যাসে প্রবৃত্ত হইলে, সেমিত্রি তাহাকে কহিলেন,—আমারও মন ত্বরাপর হইয়াছে ; অতএব আমরা শীঘ্রই তথায় গমন করিব । অনন্তর পরমপ্রভাব নরপতি রাম মতঙ্গাশ্রম হইতে বিনিঃস্থত হইয়া, লক্ষণের সহিত পম্পায় গমন করিলেন । গমনসময়ে কোযষ্টি, অৰ্জ্জুন, শতপত্র, কীচক ও অন্যান্য বিহঙ্গমগণের শব্দে নিনাদিত এবং সর্বত্র বিপুল দ্রম ও পুষ্পে আবৃত সেই মহাবণ এবং বিবিধ পাদপ ও সরোবর সকল দেখিতে দেখিতে কামসন্তপ্ত হইয়া উৎকৃষ্ট-হ্রদের সমীপে উপস্থিত হইলেন। ঐ হ্রদের জল অতি মধুর, শীতল ও নিৰ্ম্মল এবং উহা মতঙ্গ-সর নামে খ্যাত। তখন সেই দুই রঘুনন্দন সমাহিতচিত্তে অব্যগ্রভাবে তথায় গমন করিলেন । অনন্তর দশরথতনয় রাম শোকাবিষ্ট হইয়া পদ্মাবৃত রমণীয়া পম্প সরোবরে প্রবিষ্ট হুইলেন। ঐ সরোবর তিলক, অশোক, পুল্লাগ, উদাল ও বকুল প্রভৃতি বিবিধ বৃক্ষসমূহে বিভূষিত । মনোহর উপবন-সমূহে বাল্মীকি-রামায়ণ পরিবৃত, পদ্মসমূহে সমাচ্ছন্ন ও স্ফটিকসদৃশ স্বচ্ছ এবং মৃদুস্পর্শ বালুকাস্তুপে আচ্ছাদিত। উহা মৎস্তকচ্ছপ-সমূহে শোভিত, কুসুমিতা লতা-সমুহে বেষ্টিত ও আলিঙ্গিত। গন্ধৰ্ব্ব, কিন্নর, সপ, যক্ষ ও রাক্ষসগণ উহাতে বিচরণ করিয়া থাকে । উহ নানাজাতীয় বৃক্ষলতায় আকীর্ণ, সুশীতল জলসম্পন্ন এবং নিরতিশয় শোভাসমন্বিত । উহা কোথাও রক্তপদ্ম ও কহলারসমূহে সমাকুল হইয়া তাম্রবণ, কোথাও নীলপদ্মে সমাকুল হইয়া নীলবর্ণ, কোথাও বা কুমুদসমূহে সমাকুল হইয়া শুক্লবৰ্ণ হইয়াছে এবং নানাবর্ণ-সমন্বিত চিত্রকম্বলের সাদৃশ্ব ধারণ করিয়াছে। উহা অরবিন্দ, উৎপল এবং পুম্পিত আমবনসমূহে পরিবৃত এবং ময়ুরশব্দে নিনাদিত | জেস্বী দশরথ-তনয় রাম লক্ষমণের সহিত ঐ পম্পী সরোবর দর্শন করিয়া বিলাপ করিতে লাগিলেন। তিনি পুনরায় অবলোকন করিলেন, তিলক, বীজপূরক, বট, শুরুদ্রম, পুপিত করবার, পুপযুক্ত পুন্নাগ, মালভী, কুন্দ, গুল্ম, ভাণ্ডার, নিচুল, অশোক,সপ্তপর্ণ,কেতক, অতিমুক্তক ও অন্যান্য বিবিধ বৃক্ষসমূহে ঐ স্থান বিভূষিত ; ইহারই তীরে সেই পূর্বকথিত ধাতুসমূহে অলঙ্কত এবং পুষ্পিত বিচিত্র পাদপযুক্ত ঋষ্যমুক-নামে বিখ্যাত পৰ্ব্বত রহিয়াছে। মহাত্মা ঋক্ষরজার পুত্ৰ সুগ্ৰীব নামে বিখ্যাত সেই মহাবীর বানরশ্রেষ্ঠ তথায় বাস করেন ; তুমি তাহার নিকট গমন কর। সত্যবিক্রম রাম পুনরায় লক্ষণকে কহিলেন, হে লক্ষণ ! আমি রাজ্যভ্রষ্ট, দীন ও সীতাগতপ্রাণ হইয়া, কি প্রকারে সীতা-বিরহে জীবন ধারণ করিব ? রাম সীতাগতচিত্ত ও মদনপীড়িত হইয়া লক্ষণকে ঐরাপ বলিয়া অতীব শোক প্রকাশ করত, সেই পদ্মসমাকীর্ণ মনোরমা পম্প-গর্ভে প্রবেশ করিলেন এবং চতুৰ্দ্দিকবৰ্ত্তী বিবিধ বনদর্শন-পূর্বক গমন করত ক্রমে নানাবিধ পক্ষিসমূহে সমাকুলা, স্বৰ্দশ কানন-শোভিত পম্পায় প্রবিষ্ট হইলেন। আরণ্যকাও সমাপ্ত