পাতা:বাল্মীকি রামায়ণ - উপেন্দ্রনাথ মুখোপাধ্যায়.pdf/৪৯৮

এই পাতাটির মুদ্রণ সংশোধন করা প্রয়োজন।

8S) e নিমিত্ত আস্তৃত করিয়া তাহার সহিত উপবিষ্ট হইল । সুগ্ৰীব ও রামকে উপবিষ্ট দেখিয়া, হনুমানও লক্ষণের নিমিত্ত শালশাখা দ্বারা বসিবার আসন প্রস্তুত করিয়া দিল। সুপ্রসন্ন সাগরের স্থায় রামচন্দ্র শালপুপপরিপূর্ণ সেই গিরিবরে সুখে উপবিষ্ট হইলে, সুগ্ৰীব হৃষ্ট হইয়া সুমধুর হিতকর বাক্য দ্বারা প্রণয়ে ও হর্ষভরে ব্যাকুলিত হইয়া বলিতে লাগিল,—আমি ভ্রাতা দ্বারা অপকারপ্রাপ্ত, হতভাৰ্য্য ও ভয়ে কাতর হইয়া এই ঋষ্যমূক পৰ্ব্বতে বিচরণ করিতেছি । বালী আমার সহিত বৈরতা করিয়াছে, আমি ভয়ে ত্রস্ত ও হতচেতন হইয়াছি । হে সর্ববলোকভয়প্রদ ! আমি বালার ভয়ে একান্ত কাতর ও অনাথ, অামার প্রতি আপনি প্রসাদ বিতরণ করুন। এইরূপে উক্ত হইয়া ধৰ্ম্মজ্ঞ, ধৰ্ম্মবৎসল, তেজস্বী রাম হাস্য করিয়াই যেন সুগ্ৰীবকে বলিতে লাগিলেন । ১১-২০ উপকার করিলেই মিত্র এবং অপকার করিলেই শক্ৰ হয় । তোমাকে বলিতেছি যে, অদ্যই তোমার ভাৰ্য্যাপহারী সেই বালীকে বিনাশ করিব । মহাভাগ ! এই দেখ, আমার শর সকল কাৰ্ত্তিকেয়বন হইতে উদ্ভূত, হেম-বিভূষিত, সুতীক্ষ, কঙ্কপত্রাচ্ছন্ন, মহেন্দ্রের বজ্ৰতুল্য, সুপৰ্ব্বা, তীক্ষাগ্র এবং সরোষ সপের স্যায়। তোমার ভার্ষ্যাপহারী, পাপিষ্ঠ, শত্ৰু, ভ্ৰাত বালীকে আমি এই শর দ্বারা পৰ্ব্বতের দ্যয় পাতিত করিয়ী নিধন করিব অবলোকন কর। বাহিনীপতি সুগ্ৰীব শ্রীরামচন্দ্রের বাক্য শুনিয়া, নতুল হর্ষ লাভ করিয়া সাধু সাধু বলিয়া রামের প্রশংসা করিল। রাম । আমি শোকে অভিভূত, আপনি শোক-পীড়িত ব্যক্তিগণের গতি ; আপনি বয়স্য বলিয়া আপনার নিকট আমি দুঃখ প্রকাশ করিতেছি। আপনি পাণি প্রদান-পূর্বক অগ্নি সাক্ষী করিয়া আমাকে মিত্র করিয়াছেন, আমি সত্য করিয়া কহিতেছি, আপনি আমার প্রাণতুল্য প্রিয় সম্মত । বিশ্বস্ত বয়স্ত বলিয়া আমি আপনাকে সমস্তই বাল্মীকি-রামায়ণ কহিতেছি,তদার আমার মনোদুঃখ অনেক লঘু হইয় আসিতেছে। এইরূপ বলিতে বলিতে স্বগ্রীবের নেত্র অশ্রুজলে পরিপূর্ণ হইয়া উঠিল, তাহার বাক্য বাষ্প দ্বারা দূষিত হওয়াতে আর উচ্চৈঃস্বরে কহিতে পারিল না। বানররাজ সুগ্ৰীব রামের নিকট নদীবেগের ন্যায় আগত বাষ্পবেগ সহসা ধৈর্য্য দ্বারা ধারণ করিল। তেজস্ব বানর বাষ্পবেগ নিগৃহীত করিয়া, নয়নদ্বয় মার্জনা-পূর্বক নিশ্বাস পরিত্যাগ করিয়া রামচন্দ্রকে বহিল । ২১-৩১ রাম ! পূর্বে বলবান বালী আমাকে স্বকীয় রাজ্যচ্যুত করিয়া, পরুষ বচন শুনাইয়। দূরীভূত করিয়াছে ! আমার প্রাণ হইতেও প্রিয়তমা ভার্গ্য হরণ করিয়া আমার সমস্ত সুহৃদৃবর্গকে বন্ধন করিয়া রাখিয়াছে । হে রাঘব ! সেই দুষ্টাত্মা আমার বিনাশের নিমিত্ত যত্নবান হইয়াছে, তৎপ্রেরিত সমস্ত বানরকেই আমি নিহত করিয়াছি । আমি সেই হেতু আপনাকে দেখিয়া, শঙ্কপ্রযুক্ত আপনার নিকট গমনে ভীত হইয়াছিলাম ; যে হেতু সকল ব্যক্তিই ভয়স্থানে ভীত হইয়া থাকে। কেবল হনুমান প্রভৃতি বানরবর্গ আমার সহায় আছে, তাহতেই আমি অতিশয় কষ্টে পড়িয়াও প্রাণ ধারণ করিয়া রহিয়াছি। এই স্নেহন্বিত কপিগণ আমাকে চারিদিকেই রক্ষণ করে, আমি থাকিলে উহারাও অবস্থিতি করে এবং গন্তব্য স্থানে গেলে উহারাও গমন করিয়া থাকে। রামচন্দ্র । বিস্তর বাক্যে প্রয়োজন নাই, সমস্তই সংক্ষেপে কহিলাম। আমার শত্রু জ্যেষ্ঠ ভ্রাতা বালীর পৌরুষ অত্যন্ত বিখ্যাত ; তাহার বিনাশে আমার দুঃখ বিনষ্ট হইবে, তাহার বিনাশ হইলেই আমার সুখ এবং জীবনের আশা সঞ্চারিত হইতে পারে। এই আমি শোকাদিত হইয়া আমার শোকের বিনাশ-কথা নিবেদন করিলাম । দুঃখিত বা স্নখিতই হউক, সখাই সখীর গতি হইয়া থাকে। স্বগ্রীবের সেই বাক্য শুনিয়া রাম কছিলেন, বালীর সহিত তোমার বৈরভাব কি নিমিত্ত সংঘটিত