পাতা:বাল্মীকি রামায়ণ - উপেন্দ্রনাথ মুখোপাধ্যায়.pdf/৫০৮

এই পাতাটির মুদ্রণ সংশোধন করা প্রয়োজন।

88 e পদ্ম, পদ্মকোষ ও কুটালে সুশোভিত এবং কারগুব, সারস, হংস, জলকুকুট, চক্রবাক ও অন্যান্য জলপক্ষিগণে নিনাদিত তড়াগ সকল এবং মৃদু শল্পআহারকারী নির্ভীক বনচারী হরিণ সকল চরিতেছিল, তাহাদিগকে দেখিতে দেখিতে এবং তড়াগ-বৈরী, কুলবিঘাতী, বস্তহস্তিগণকে এবং গিরিতটে মর্দনশীল সচলপৰ্ব্বতের ন্যায় পৃথিবীরেণু মুক্ষিত হস্তিতুল্য বানরগণকে এবং অন্যান্ত বনচারী জীবগণকে ও খেচর বিহঙ্গমদিগকে দর্শন করিতে করিতে সুগ্ৰীব-বশবৰ্ত্তী বানর সকল গমন করিতে লাগিল । তাহারা যখন সত্বর হইয়া গমন করিতেছিল, তখন রামচন্দ্র দ্রুমসমূহে পরিপূর্ণ বন দর্শন করিয়া সুগ্ৰীবকে কহিলেন,—প্রান্তসীমায় কদলীবৃক্ষসমূহে আবৃত, মিলিত মেঘসমুহ-তুল্য বৃক্ষ সমুদায় প্রকাশ পাইতেছে ; হে সখে । এই সকল কি, ইহা জানিবার নিমিত্ত - আমার কৌতুহল জন্মিতেছে ; তুমি আমার এই কৌতুহল অপনয়ন কর। ১-১৫ মহাত্মা রামের সেই বাক্য শুনিয়া সুগ্ৰীব সেই মহৎ বনের বিষয় বর্ণন করিতে আরম্ভ করিল । হে রাঘব ! এই যে শ্রমবিনাশন উদ্যান ও বনবিশিষ্ট, স্বাঢ় ফল ও জল-সমন্বিত, বিস্তীর্ণ আশ্রম দর্শন করিতেছেন, ইহাতে সপ্তজনা নামে প্রসিদ্ধ ধৃতত্ৰত মুনিগণ নিয়তই অধঃশিরা হইয়া অবস্থিতি করিতেন ; আর জলশায়ী হইয়া, সপ্তরাত্রি গত হইলে,বায়ুমাত্র আহার করিতেন। তাহারা সপ্তবর্ষকাল তপস্যা করিয়া, সশরীরে স্বর্গে গমন করিয়াছেন । র্তাহাদিগের প্রভাবে এই আশ্রম বৃক্ষপ্রাকার-সংবৃত। এই আশ্রম ইন্দ্রসহিত সুর ও অসুরগণের একান্ত দুৰ্দ্ধর্ষ। পক্ষিগণ ও অন্যান্য বনচারিগণ ইহাতে প্রবিষ্ট হয় না। যে ব্যক্তি মোহবশে তে প্রবেশ করে, সে আর প্রতিনিবৃত্ত হইতে পারে না। ইহাতে অপরাগণের মধুরাক্ষর বাক্য, ভূষণশব্দ ও তুর্য্যগীতম্বন শ্রত হয় এবং দিব্যগন্ধ প্রবাহিত হইয়া থাকে। ইহাতে ত্রেভাগ্নি সকল দীপ্যমান এবং বাল্মীকি-রামায়ণ ধূমসমূহ ও কপোতের অঙ্গের স্যায় ধূসরবর্ণ মেঘসমূহ বৃক্ষাগ্র বেষ্টন করিতেছে দৃষ্ট হইয়া থাকে। বৈদূৰ্য্য গিরির স্যায় মেঘজালে আচ্ছন্ন মস্তকে ধূমযুক্ত বৃক্ষ সকল দৃষ্ট হয়। হে ধৰ্ম্মাত্মন! আপনি লক্ষণ-সহিত সংযুক্তচিত্তে কৃতাঞ্জলি হইয়া সেই মুনিগণের উদ্দেশে প্রণাম করুন । রাম ! যে ব্যক্তি সেই কৃতাত্মা ঋষিগণকে প্রণাম করে, তাহার শরীরে কিছুমাত্র পাপ তিষ্ঠিতে পারে না। তদনন্তর রাম লক্ষণের সহিত কৃতাঞ্জলি হইয়া সেই মহাত্মা ঋষিগণকে প্রণাম করিলেন । র্তাহাদিগকে অভিবাদন করিয়া, ধৰ্ম্মাত্মা রাম, ভ্রাতা লক্ষণ, সুগ্ৰীব ও বানর—সকলে হৃষ্ট হইয়া গমন করিতে লাগিলেন। র্তাহারা সেই সপ্তজনাশ্রম হইতে দূরে গমন করিয়া বালীপালিত সেই দুৰ্দ্ধম কিষ্কিন্ধ্যানগর অবলোকন করিলেন । তদনন্তর রাম, লক্ষণ ও বানরগণ নিজ নিজ উগ্ৰতেজঃ-সম্পন্ন অস্ত্রশস্ত্র সকল ধারণ করিয়া, শক্রবধের নিমিত্ত ইন্দ্রপুত্রপ্রতিপালিত কিষ্কিন্ধ নগরীতে পুনর্নবার আগমন করিলেন। ১৬-৩০ চতুর্দশ সর্গ র্তাহারা সকলে বালীর পুরী কিষ্কিন্ধ্যাতে সত্ত্বর গমন করিয়া, বৃক্ষ দ্বারা আপন আপন দেহ আবৃত করিয়া, গহন বনে অবস্থিত হইয়া রহিলেন । বিপুলগ্রীব কাননপ্রিয় স্থগ্রীব চারিদিকে দৃষ্টি প্রসারিত করিয়া ক্রোধভরে অভ্যন্ত ঘোরতর শব্দ করিতে লাগিল। পরিবারবর্গে পরিবৃত হইয়া, নিনাদ দ্বারা আকাশস্থল ভেদ করিয়াই যেন ঘোরতর গর্জন করিয়া যুদ্ধের নিমিত্ত বালীকে আহবান করিতে লাগিল। বায়ু বেগে সঞ্চালিত মহামেঘের স্যায় গৰ্জ্জন করিয়া, বালস্বৰ্য্যসদৃশ সিংহের ষ্ঠায় গতিবিশিষ্ট স্বগ্রীব, কাৰ্য্যাক্ষ রামকে দেখিয়া বলিতে লাগিল—কাঞ্চন-ভূষণ, ধ্বজ ও যন্ত্রাদিবিশিষ্ট বালীর পুরী কিষ্কিন্ধ্যা বানরজালে