পাতা:বাল্মীকি রামায়ণ - উপেন্দ্রনাথ মুখোপাধ্যায়.pdf/৫৩৫

এই পাতাটির মুদ্রণ সংশোধন করা প্রয়োজন।

কিষ্কিন্ধ্যাকাণ্ড মুগগণের ধ্বনি-বিশিষ্ট এবং ভীষণ-রবকারী সিংহসমূহ দ্বারা পরিব্যাপ্ত, নানাবিধ গুল্মলতা ও পাদপগণ দ্বারা পরিপূর্ণ ভল্লুক বানর গো-পুচ্ছ মার্জারগণকর্তৃক নিষেবিত, মেঘরাশি-তুল্য শুচিকর, সুশোভিত ও মঙ্গলপ্রদ। রাম লক্ষণের সহিত সেই শৈলশিখরে বিস্তৃত মহতী গুহা বাসের নিমিত্ত গ্রহণ করিলেন । বিমলাত্মা রঘুনন্দন রাম স্বগ্রাবের সহিত পূর্বোক্ত নিয়ম করিয়া, বিনীত লক্ষীবৰ্দ্ধন ভ্রাতা লক্ষণকে কালোচিত মহাবাক্যে বলিলেন,— হে পরস্তপ লক্ষণ ! এই গিরিগুহা বায়ু-বিশিষ্ট, বিশাল ও মনোহর, আমরা ইহাতে বাস করিব। তুমি দেখ, এই গিরিশিখর রম্য ও উত্তম । ইহা শ্বেত, কৃষ্ণ ও তাম্রবর্ণ শিলাসমূহে পরিশোভিত, নানাবিধ ধাতুদ্রব্য দ্বারা আকীর্ণ, নদীজ ভেকগণে পরিবৃত, বিবিধ বৃক্ষসমূহ দ্বারা মনোহর, বিচিত্র লতাযুক্ত, নানাবিধ বিহঙ্গম ও উত্তমোত্তম ময়ূরগণ-কর্তৃক নিনাদিত এবং পুষ্পিত মালতী, কুন্দগুল্ম, সিন্ধুবার, শিরীষ, কদম্ব, অর্জন ও সর্জবৃক্ষগণ দ্বারা সুশোভিত । প্রফুল্ল পঙ্কজগণে মণ্ডিত এই জলাশয় বর্না-বারি-বৃদ্ধি দ্বারা আমাদিগের গুহার নিকটেই অবস্থিত হইবে। যাহার পূর্বদিক নিম্ন থাকায় সেই দিক দিয়া জল নিগত হয় এবং যে স্থানেল পশ্চিমদিক উন্নত ও নির্ববাত, তাহ বাসের নিমিত্ত উত্তম স্থান ; আমাদের গুহাও সেইরূপ হইবে । লক্ষণ ! গুহার দ্বারদেশে নিম্নতল সুশোভন আয়ত অঞ্জনের স্যায় কৃষ্ণশিলা অবস্থিত আছে । বৎস লক্ষণ । ঐ দেখ, উত্তরদিকে বিদলিত অঞ্জন তুল্য, উদিত মেঘের ন্যায় স্থশোভন গিরিশৃঙ্গ বিরাজিত রহিয়াছে। দক্ষিণদিকেও কৈলাস পৰ্ব্বতের শিখরের স্যায় শ্বেত অম্বর তুল্য নানাবিধ ধাতু দ্বারা রঞ্জিত গিরিশৃঙ্গ শোভা পাইতেছে। ঐ দেখ, গুহার অগ্রভাগে ত্রিকূট পৰ্ব্বতে জাহ্নবীর স্থায় কর্দমশূন্ত পূর্ববাহিনী মন্দাকিনী নাম্বী নদী প্রবাহিত হইতেছে। এই তটিনী চন্দন, তিলক, 《S 8V6: শাল, তমাল, অতিমুক্তক,পদ্মক সরল, অশোক, বানীর, তিমিদ, বকুল, কেতক, হিন্তাল, তিনিশ, নীপ, বেতস, কৃতমালক প্রভৃতি তীরজাত তরুসমূহ দ্বারা বসন ও আভরণবিশিষ্টা রমণীর স্যায় শোভা পাইতেছে । নানা রত্নসমন্বিত এই নদী শত শত পক্ষিসমূহ দ্বারা নিনাদিত, পরস্পর অনুরাগযুক্ত চক্রবাক দ্বারা সুশোভিত হইতেছে ; হংস ও সারসগণ-কর্তৃক সেবিতা নানাবিধ রত্ন দ্বারা বিভূষিত হইয়া,পুলিন দ্বারা যেন হাস্ত করিতেছে । ইহার কোন স্থলে নীলোৎপল, কোথাও রক্তোৎপল, কোথাও বা দিব্য শুক্লবৰ্ণ কুমুদকোরক শোভা পাইতেছে । এই রমণীয়া সৌম্যদর্শন নদী শত শত জলপক্ষী, ময়ূর ও ক্রৌঞ্চগণের কলরবে নিনাদিত হইয়া মুনিগণ-কর্তৃক নিষেবিত হইতেছে। দেখ, এই স্থলে চন্দন-তরুশ্রেণী এবং দিক সকল মানস-চিত্রের স্যায় শোভা পাইতেছে । অহো লক্ষণ ! এই স্থান কি পরম রমণীয় ! হে পরন্তপ ! আইস, আমরা এই স্থানে পরম সুখে বাস করি। হে নৃপতিপুত্ৰ ! সুগ্ৰীবের মনোরম পুরী চিত্রকানন কিষ্কিন্ধ্যা এই স্থানের অনতিদূরে অবস্থিত। বিজয়িপ্রবর ! ঐ শুন, শব্দকারী বানরগণের মৃদঙ্গধবনির সহিত গীত ও বাদিত্রশব্দ শ্রত হইতেছে । কপিবর সুগ্ৰীব রাজ্য, ভাৰ্য্যা ও মহতী রাজলক্ষী লাভ করিয়া, মুঙ্গদগণের সহিত প্রীতি ও আনন্দ লাভ করিবে । ১-২৮ এই বলিয়া রাম বহুতর গুহা ও কুঞ্জবিশিষ্ট সেই প্রস্রবণ-গিরিতে লক্ষণের সহিত বাস করিতে লাগিলেন । বহু দ্ৰব্য-সম্পন্ন স্বখাকর সেই পৰ্ব্বতে বাস করিয়া তাহার অল্পমাত্রও রতি-সঞ্চার হইল না। প্রাণ অপেক্ষণও গরীয়সী সেই হৃতা ভাৰ্য্য৷ সীতাকে স্মরণ করিয়া এবং বিশেষতঃ উদয়াচলে উদিত নিশানাথকে অবলোকন করিয়া, সীতা হইতে উদ্ভূত শোক-বাম্পে হতবুদ্ধি রাম সুখ-শয্যায় শয়ন করিয়াও রজনীতে নিজালাভ করিতে পারিতেন না।