পাতা:বাল্মীকি রামায়ণ - উপেন্দ্রনাথ মুখোপাধ্যায়.pdf/৫৮৪

এই পাতাটির মুদ্রণ সংশোধন করা প্রয়োজন।

কিষ্কিন্ধ্যাকাণ্ড ত্ৰিষষ্টিতম সর্গ বাক্যবিশারদ মুনিবর এইরূপ এবং অন্যান্য নানাবিধ বাক্য দ্বাবা আমাকে প্রশংসা ও অনুজ্ঞা করিয়া নিজালয়ে প্রবিষ্ট হইলেন । আমি সেই পৰ্ব্বতের কন্দর হইতে ক্রমে ক্রমে সরিয়া সরিয়া, বিন্ধাপর্বতে আরোহণ-পূর্বক তোমাদিগের প্রতীক্ষা করিতেছিলাম। আমার সেই মুনিবরের সাহত সাক্ষাৎকাল হইতে ধরিয়া, এক্ষণে অণ্ট সহস্ৰ বৎসবেরও কিঞ্চিৎ অধিক কাল গত হইয়াছে ; আমি সেই মুনিবাক্য হৃদয়ে ধারণ-পূর্বক দেশ ও কাল প্রতীক্ষা করিতেছি । মহাপ্রস্থান প্রাপ্ত হইয়া মহলি নিশাকর যখন স্বগে গমন করিলেন,তখন বহুবিধ বিতর্ক দ্বারা আমি অত্যন্ত সন্তাপিত হইলাম। আমার রক্ষার নিমিত্ত মুনিবর যে বুদ্ধি প্রদান করিয়াছিলেন, তদনুসারে আমি মরণ-বুদ্ধি পরিত্যাগ করিলাম। দীপ্ত অগ্নিশিখা যেমন অন্ধকার বিনাশ করে, সেইরূপ সেই বুদ্ধি আমার সন্তাপ বিনাশ করিল। যাহা হউক, দুরাত্মা রাবণের বীর্য্য আমার পুত্র অপেক্ষ অল্প জানিয়া আমার পুত্রকে তর্জন করিয়া বলিয়াছিলাম যে, তুমি সীতার বিলাপ-বাক্য শ্রবণে রামলক্ষণ সীতা-কর্তৃক বিয়োজিত জানিয়া কেন সীতাকে পরিত্রাণ কর নাই ? তাহাতে সে বলিল যে, “আমি তাহাকে প্রথমে জানকী বলিয়া জানিতে পারি নাই ; তাহারা চলিয়া গেলে সিদ্ধ পুরুষদিগের বচন শ্রবণে জানিতে পারিয়াছিলাম, আমার পুত্র এই কাৰ্য্য না করায় দশরথের প্রতি আমার স্নেহ প্রযুক্ত আমি প্রীত হইতে পারি নাই । সম্পাতি বানরগণের নিকট এইরূপ বলিতে বলিতে বানরগণের সমক্ষে তাহার পক্ষদ্বয়ের উদগম হইল। সে আপনার দেহে অরুণবর্ণ পক্ষ সকল উত্থিত হইল, দেখিয়া, অতুল হর্ষলাভানন্তর বানরদিগকে বলিল,—অমিতভেজ নিশাকর রাজর্ষির প্রসাদে আমার মুর্ঘ্যরশ্মি দ্বারা, দগ্ধপক্ষদ্বয় পুনৰ্ব্বার © > ☾ উত্থিত হইল। আমি যখন যৌবনে বর্তমান ছিলাম, তখন আমার যেরূপ পরাক্রম ছিল, এক্ষণেও সেইরূপ বল ও পৌরুষ লাভ করিলাম। তোমরা সর্বতেভাবে যত্ন কর, অবশ্যই সীতা প্রাপ্ত হইবে। যখন আমার পক্ষোদগম হইল, তখন বিশ্বাস হইতেছে যে, অবশ্যই কাৰ্য্যসিদ্ধি হইবে । বিহগোত্তম সম্পাতি বানরদিগকে এইরূপ বলিয়া উখিতপক্ষ দ্বারা পূর্ববৎ আকাশগতি জানিবার নিমিত্ত গিরির শৃঙ্গ হইতে উডডীন হইল । তাহার সেই বাক্য শ্রবণে বানরশ্রেষ্ঠগণ অত্যন্ত হৃষ্টমনাঃ হষ্টয়া সীতার অন্বেষণার্থ বিক্রম-প্রকাশে উড়াক্ত হইতে লাগিল। অনস্তর পবনতুল্য বিক্রমশালী পেরুম-সমন্বিত বানরগণ জনকমুতার অন্বেষণে উন্মুখ হইয়া দক্ষিণদিকে গমন করিতে লাগিল । ১-১৫ চতুঃষষ্টিতম সর্গ গৃধরাজ-কর্তৃক এইরূপে" কথিত, সিংহতুল্য বিক্রমশালী বানরগণ প্রীতি-প্রফুল্লিতচিত্তে লম্ফ প্রদানপূর্বক পরম্পর মিলিত হইয়া হনধ্বনি করিতে লাগিল । সম্পাতির বাক্য শুনিয়া হৰ্ষবিশিষ্ট বানরগণ সীতার দর্শনের নিমিত্ত সাগর-তীরে আগমন করিল। ভাষণ-বিক্রম কপিগণ সেই স্থানে আসিয়া, মহৎ চন্দ্রসুৰ্য্য-সমন্বিত সমস্ত লোকের প্রতিবিম্বস্বরূপ সমুদ্রকে দর্শন করিয়াছিল। অনন্তর মহাবল কপিবীরগণ দক্ষিণ-সমুদ্রের উত্তরদিক প্রাপ্ত হইয়া, সেই স্থানে সেনা সন্নিবেশিত করিল। সমুদ্র কোন স্থানে প্রমুপ্তের স্যায় স্থির, কোন স্থানে বালকের ন্যায় ক্রীড়াশীল,কোন স্থানে পৰ্ব্বত-প্রমাণ বারি দ্বারা আবৃত হইয়া রহিয়াছে । পাতালবাসী দানবেন্দ্রগণ দ্বারা পরিব্যাপ্ত রোমহর্মকর সমুদ্র দর্শন করিয়া কপিবীরগণ সেই স্থানে অবস্থিতি করিতে লাগিল ।