পাতা:বাল্মীকি রামায়ণ - উপেন্দ্রনাথ মুখোপাধ্যায়.pdf/৫৮৫

এই পাতাটির মুদ্রণ সংশোধন করা প্রয়োজন।

○ >Wう বানরগণ আকাশের স্যায় দুষ্পার সাগর দর্শন করিয়া, কিরূপে কাৰ্য্য-সিদ্ধি হইবে, এই বলিয়া অবসন্নচিত্তে উপবিষ্ট হইল। বানরবৃন্দকে সাগর দর্শনে ভীত দেখিয়া হরিসত্তম অঙ্গদ আশ্বাস প্রদান-পূর্বক বলিতে লাগিল, তোমরা বিষাদ করি ও না, বিষাদে মগ্ন হওয়া অত্যন্ত দোষের বিষয় ; ক্রুদ্ধ বিষধর যেমন বালকদিগকে বিনাশ করে, বিষাদও সেইরূপ পুরুষদিগকে নিহত করিয়া থাকে । বিক্রম প্রকাশের কাল উপস্থিত হইলে যে ব্যক্তি বিষাদগ্ৰস্ত হয়, সেই ব্যক্তি তেজোহীন হয় এবং তাহার কার্য্যসিদ্ধি হয় না । সেই রাত্রি বিগত হইলে যুবরাজ অঙ্গদ বানরবৃদ্ধগণের সহিত মিলিত হইয়া মন্ত্রণা করিতে লাগিল । দেবগণের বাহিনী যেমন বাসবকে, সেইরূপ বানরসেনাগণ অঙ্গদকে বেষ্টন করিয়া রহিল। বালীতনয় ও হনুমান ব্যতিরেকে অন্য কোন ব্যক্তি সেই বানরী সেনা স্থির করিতে সমর্থ হয় না । অনন্তর বানরবুদ্ধগণ ও সেনাসমূহকে সন্মান প্রদর্শন-পূর্বক শ্ৰীমান অরিন্দম অঙ্গদ সারবৎ বাক্যে বলিতে লাগিল, কোন “ ব্যক্তি এক্ষণে সাগর লঙ্ঘন করিবে ? কোন ব্যক্তি এখন অরিন্দম সুগ্ৰীবকে সত্যপ্রতিজ্ঞ করিতে সমর্থ হইবে ? কোন বীর শত যোজন পথ উল্লঙ্ঘন করিতে সমর্থ ? কোন ব্যক্তি এই সমস্ত যুথপতিদিগকে মহাভয় হইতে পরিত্রাণ করিবে ? কাহার প্রসাদে আমরা কৃতকাৰ্য্য হইয়া, এখান হইতে ফিরিয়া গিয়া, পুত্র-কলত্র ও গৃহ দৰ্শন করিয়া সুখী হইব ? কাহার প্রসাদে এই সমস্ত বনবাসী বানরবৃন্দ হৃষ্ট হইয়া, রাম-লক্ষণ ও সুগ্ৰীবের নিকট গমন করিবে ? যদি কোনও বানরবর এই সাগর লঙ্ঘনে সমর্থ হয়, সে এক্ষণে সত্বর পুণ্যকরী অভয়-দক্ষিণা প্রদান করুক । অঙ্গদের বাক্য শুনিয়া কোন কপিই কিছুমাত্র উত্তর করিল না, সমস্ত বানর-সৈন্যই স্তিমিত ভাব অবলম্বন-পূর্বক নিঃশব্দ হইয়া রহিল। হরিসত্তম অঙ্গদ পুনর্বার বাল্মীকি-রামায়ণ সেই বানরদিগকে বলিল, তোমরা সকলেই দৃঢ়বিক্রম ও বলবানগণের মধ্যে শ্রেষ্ঠ এবং নিষ্কলঙ্ক কুলে জন্মগ্রহণ করিয়া সর্বদাই লোকমধ্যে পূজিত হইয় থাক । যদি তোমাদের মধ্যে কদাচিৎ কাহারও শত যোজন সাগর লঙ্ঘনে প্রতিবন্ধ হয়, তবে যে যতদুর লঙ্ঘনে সমর্থ, তাহ আমার নিকট বল । ১-২২ পঞ্চষষ্টিতম সর্গ অনন্তর প্রধান প্রধান বানরগণ অঙ্গদের সেই বাক্য শ্রবণ করিয়া উৎসাহের সহিত গতি বিষয়ে আপন আপন সামর্থ কীৰ্ত্তন করিতে লাগিল। গজ, গবাক্ষ, গবয়, শরভ, গন্ধমাদন, মৈন্দ, দ্বিবিদ, অঙ্গদ ও জাম্ববান ইহারা প্রথমে বলিতে আরম্ভ করিল । গজ বলিল, আমি দশযোজন লঙ্ঘন করিতে সমর্থ ; গবাক্ষ বলিল, আমি বিংশতি যোজন ; শরভ বলিল, আমি ত্রিংশং যোজন ; শরভ কহিল, আমি চল্লিশ যোজন অতিক্রম করিতে পারি। তখন মহাতেজা গন্ধমাদন বলিল, আমি পঞ্চাশ যোজন অতিক্রমে সমর্থ, তাহতে সন্দেহ নাই। মৈন্দ সমস্ত বানরগণের নিকট বলিল, আমি যাটি যোজন লঙ্ঘন করিতে পারি। তখন মহাতেজা দ্বিবিদ বলিল, আমি সপ্ততি যোজন অতিক্রমণে সমর্থ, তাহাতে আর সন্দেহ নাই। ধৈর্য্যবীৰ্য্যশালী কপিবর সুষেণ কহিল, প্রতিজ্ঞা করিয়া বলিতে পারি যে, আমি অশীতি যোজন অতিক্রম করিতে সমর্থ। তাহারা এইরূপ বলিলে, সম্মানপ্রদর্শন পূর্বক বৃদ্ধতম জাম্ববান তাহাদিগকে বলিতে লাগিল। পূর্বে আমরা গতি বিষয়ে বিশেষ পরাক্রমশালী ছিলাম, কিন্তু এক্ষণে আমাদিগের বয়স অত্যন্ত অধিক হইয়াছে। কিন্তু যখন এরূপ কাৰ্য্য ঘটিয়াছে, তখন তাহ উপেক্ষা করিত্বে পারিতেছি না ; যে কাৰ্য্যের নিমিত্ত রাম, কপিরাজ সুগ্ৰীব কৃতনিশ্চয় হইয়াছেন, তাহ অবশ্যই সাধন করিতে হইবে ।