পাতা:বাল্মীকি রামায়ণ - উপেন্দ্রনাথ মুখোপাধ্যায়.pdf/৮

এই পাতাটির মুদ্রণ সংশোধন করা প্রয়োজন।

[ ইহার বর্ণনা ও শ্লোকরচনা বেদবৎ সম্মাননার সমযোগ্য নহে, যদিও পুরাণমধ্যে রামায়ণের নামোল্লেখ দেখিতে পাওয়া যায় না, যদিও সংহিতাকারদিগের প্রণীত গ্রন্থমধ্যে রামায়ণের নামযোজনা নাই, যদিও রামায়ণ হিন্দুর কাম্যকৰ্ম্মের ব্যবস্থামুযায়ী নহে, তথাপি ইহাকে অমুচ্চ, অপ্রামাণিক ও অলীক মনে করিতে নাই । তবে ইহা স্বীকাৰ্য্য, স্বাধীন লেখক ও সহজ কবির পক্ষে যে স্বাধীনতা উন্মুক্ত ও প্রসারিত থাকা কৰ্ত্তব্য, বাল্মীকি তাহার অন্যথাচরণ করেন নাই । তিনি কবি হইয়া কাব্য লিখিয়াছেন বটে, কিন্তু লোকরঞ্জনানুরোধে লক্ষ্যভ্রষ্ট হইয়া, তোষামোদে ব্রতী হন নাই । অনেকের বিশ্বাস, রামায়ণ একখানি উচ্চ তাঙ্গের মহাকাব্য, আলঙ্কারিকদিগের অভিপ্রায়ও তাহাই । তাহারা বলেন, যে কাব্য অষ্টাধিক সর্গে লিখিত, তাহা মহাকাব্য নামে গণ্য। আমরা কিন্তু আলঙ্কারিকদিগের এ কথায় সম্মত হইতে পারি না, র্তাহারা অন্তকৃত কাব্যসম্বন্ধে যাহা বলুন না, তাহাতে ইষ্টাপত্তি নাই ; রামায়ণ সম্বন্ধে তাহাদের উক্তির পোষকতা করিতে পারি না ; কারণ, তাদের লক্ষণে প্রকাশ– “কাব্যং—যশসেহর্থকৃতে ব্যবহারবিদে শিবেতরক্ষভয়ে । সম্ভ: পরনির্বত্তয়ে কান্তাসম্মিততয়োপদেশযুজে ।” তাৎপৰ্য্য,—কাব্যানুশীলনে যশঃ প্রাপ্তি, অর্থলাভ, অমঙ্গল বিনাশ, আবৃত্তিমাত্র পরমসুখানুভব, এমন কি, মোক্ষ প্রাপ্তি ; ইহা রসে সুরসিক স্ত্রীতুল্য এবং ' উপদেশবিধায়ী।. সহৃদয় ভাবুক পাঠকগণ । স্থিরমনে নিরপেক্ষভাবে বলুন দেখি, এই লক্ষণেই কি বাল্মীকির উক্তি পর্যাবসান হওয়া সম্ভব ? উপলখণ্ড ও শৈলকে যদি একই বস্তু মনে করেন, তাহা হইলে, গুরু-লঘুর তারতম্য কি রছিল, বলুন ? পক্ষ থাকিলে তাঁহাকে পক্ষী বলা যায়, এই লক্ষণানুসারে কি চটক ও রাজহংসের বিভিন্নভ রছিল না বুঝিতে হুইবে ? ૭ ] শাস্ত্রে প্রকাশ, “বেদে রামায়ণে পুণ্যে পুরাণে ভারতে তথা ।” এই শ্লোকাৰ্দ্ধে কি সপ্রমাণ হইতেছে না যে, রামায়ণ বেদের সমকক্ষ না হইলেও ইহা অতিশয় পবিত্র ? যদি কেবল এই কথাই বিশ্বাস করিতে না চান, তবে বাল্মীকির উক্তির প্রতি দৃষ্টিপাত করুন। মূলে প্রকাশ — “শৃশ্বন রামায়ণং ভক্ত্য যঃ পদং পদমেব বা । স যাতি ব্রহ্মণ: স্থানং ব্রহ্মণ পূজ্যতে সদা।” তাৎপৰ্য্য,—“যিনি ভক্তিভাবে সমগ্র রামায়ণ, বা পাদমাত্র, বা তাহারও মূনাংশ শ্রবণ করেন, তিনি সতত ব্ৰহ্মার নিকটে পূজিত হইয়া ব্ৰহ্মলোকে বাস করিয়া থাকেন।” এই গ্রস্থের অন্যত্র বণিত হইয়াছে যে,— “প্রয়াগাছানি তীর্থনি গঙ্গাদ্যাঃ সরিতস্তথা । নৈমিষাদীস্তরণ্যানি কুরুক্ষেত্রাদিকাস্যপি । কৃতানি তেন লোকেইম্মিন যেন রামায়ণং শ্রতম।” তাৎপর্ষ্য,—“যিনি রামায়ণ শ্রবণ করিয়াছেন, র্তাহার প্রয়াগাদি তীর্থ, গঙ্গাদি পবিত্র নদী, নৈমিষারণ্য ও কুরুক্ষেত্রাদি পবিত্র অরণ্য দর্শন ও তত্ৰত ক্রিয়াদি সমস্ত সিদ্ধ হইয়াছে।” যাহা হউক, রামায়ণ যে পবিত্র পুণ্যজনক গ্রন্থ, যেন তাহ স্বীকার করা গেল ; কিন্তু কি জন্য ইহার এতদূর পবিত্রতা ও এতদূর মাহাত্ম্য, সে সম্বন্ধে কিছু না বলিলে, এ কালে—উনবিংশ শতাব্দীর সভ্যতার অধিকার-সময়ে, লোকের মনে নানা সন্দেহ, নানা কুতর্ক ও নানা জল্পনার স্বষ্টি হওয়া অসম্ভব নছে ; সে জন্য তৎসম্বন্ধে কিছু বলিবার প্রয়োজন। বাল্মীকির বর্ণনীয় গ্রন্থের প্রতিপাদ্য বিষয় রামোপাখ্যান । এই রামকে বৰ্ত্তমানে কেহ মনুষ্য, কেহ লোকাতীত শক্তিসম্পন্ন, কেহ বা একজন নৃপতি বলিয়া মনে করিতে পারেন, কিন্তু শাস্ত্রসমুদ্র মন্থন করিলে জানা যায় যে, রামচন্দ্র ব্ৰহ্ম পদার্থ, তিনিই